সিয়েরা লিওনে ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই
পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা বা এবোলার সংক্রমণ মহামারির রূপ নিয়েছে৷ সিয়েরা লিওনও আছে সেই তালিকায়৷ ছোট্ট দেশটিতে চলছে ইবোলার বিরুদ্ধে বড় এক লড়াই৷ দেখুন ছবিঘরে৷
জীবন তবু বহমান...
সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের সবজির বাজারে গোলমরিচ বিক্রি করেন সুয়ার্ড ডেম্বি (ডানে)৷ প্রতিদিন শত শত লোক এবোলায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ বাজারে এত ভিড়, কার কাছ থেকে যে এবোলা এসে তাঁর শরীরেও বাসা বাঁধবে, কে বলবে! ভয় আছে ঠিকই, তবুও ডেম্বিকে প্রতিদিন আসতে হয় বাজারে৷ তাঁর আয়েই সংসারটা চলে৷ ডেম্বি মরিচ বিক্রি না করলে সংসার চলবে কী করে!
স্থপতিও লড়াইয়ে
এবোলায় সংক্রমিতদের চিকিৎসা করতে হয় আলাদাভাবে৷ সে কারণে চাই বিশেষ ইউনিট৷ এখন অনেক জায়গাতেই এমন ইউনিট গড়ে তুলতে হচ্ছে৷ আছে উপযুক্ত স্থানের অভাব, প্রশিক্ষিত সেবাকর্মীর অভাব তো আরো বেশি৷ ছবির এই মানুষটির নাম কামারা৷ পেশায় স্থপতি৷ নানান প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন৷ সব ছেড়ে চলে এসেছেন ফ্রিটাউনে৷ নিজেকে সঁপে দিয়েছেন এবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ ইউনিট গড়ার কাজে৷
পুলিশই সবার ‘মা’
ইনি নিজের নাম কাউকে বলতে চান না৷ স্থানীয়রা তাঁর নাম দিয়েছেন ‘মামা জি’৷ সিয়েরা লিওনের সাধারণ এক মহিলা পুলিশ৷ স্বভাবে মায়ের মতো৷ সবার দুঃখ দুর্দশায় পাশে থাকেন৷ এখনো আছেন৷ এবোলার শিকার হয়ে কেউ মারা গেলে লাশ দাফন করতে আর কেউ না এলেও ‘মামা জি’ আসেন৷ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় আছে জেনেও লাশ হয়ে যাওয়া মানুষদের পরম মমতায় পৌঁছে দেন শেষ ঠিকানায়৷
এক জার্মান
ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক জার্মান নাগরিক৷ প্রায় এক বছর ধরে আছেন সিয়েরা লিওনে৷ ‘ক্যাপ আনামুর’ নামের এক বেসরকারি সংস্থার হয়ে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে৷ লিওন প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের হয়ে ফুটবলও খেলছেন চুটিয়ে৷ সে দেশে এখন এবোলা আতঙ্ক৷ ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ সিয়েরা লিওন তাঁর কাছে দ্বিতীয় জন্মভূমি৷ রোগের ভয়ে জন্মভূমি ছাড়বেন, তা হয় নাকি!
প্রথম অভিজ্ঞতা
সংক্রমণ নিরোধক এই পোশাক আগে কখনো পরেননি মোমেডো লাম্বো৷ এবোলা রোগীদের ওয়ার্ডে কাজ করতে চান বলে ফ্রিটাউনে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে৷ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনেই পরতে হলো এ পোশাক৷
সচেতনতা বাড়াতে...
এবোলার সংক্রমণ রুখতে হলে এ ভাইরাস সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷ পকেটের টাকা খরচ করে এ সম্পর্কে জেনেছেন উসমান রহিম বাহ৷ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে এবোলা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন সবাইকে৷
সদাব্যস্ত স্টেলা
৩০ বছর বয়সি স্টেলা এক হাসপাতালের সেবিকা৷ রোগযন্ত্রণা, মৃত্যু, কান্না, আহাজারি কম দেখেননি৷ কিন্তু এবোলা-আতঙ্ক তাঁর জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ এবোলায় সংক্রমিত প্রথম রোগীটি যখন এলো, বলতে গেলে সব সহকর্মীই হাসপাতাল ছাড়লেন৷ কিন্তু স্টেলা যাননি৷ তাঁর দেশ শিগগিরই এ বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসবে - এ আশায় দিন-রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছেন এখনো৷
পায়ে পায়ে বিপদ
ডেসমন্ড রিজ রেড ক্রসের টিম লিডার৷ দলনেতা হিসেবে তাঁর মূল দায়িত্ব, মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যস্ত সহকর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করা৷ বড় কঠিন দায়িত্ব৷ ডেসমন্ড রিজ বললেন, ‘‘আমরা যে ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি সেটা আমি জানি৷’’ তবু ভয় একটু থাকেই৷ রিজ প্রতিদিন ভাবেন, আজই হয়তো মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ হবে৷