‘সাংবাদিক হত্যার দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে’
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭গত ২ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহের সময় পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে দৈনিক সমকালের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি শিমুল আহত হন৷ আহত অবস্থায় তাকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে শুক্রবার ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান৷
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সকে জানান, ‘‘আমি বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মেয়র গুলি চালান৷ গুলি কেবল মেয়রই চালিয়েছেন, আর কেউ নন৷ তিনি বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন৷’’
শিমুলের স্ত্রী বাদী হয়ে মেয়র, তার ভাই, আওয়ামী লীগের ১৫ জন স্থানীয় সদস্য এবং অজ্ঞাত ২০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন৷
এদিকে ৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানী ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে মেয়র মিরুকে প্রেপ্তার করা হয়৷ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরুকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিও উঠেছে৷
শিমুলের স্ত্রী নুরুন নাহারকে বগুড়ায় এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম৷
বিবৃতিতে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের এশিয়া প্যাসিফিক ডেস্কের প্রধান বেঞ্জামিন ইসমাইল বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ শাহজাদপুরের মেয়রকে গ্রেপ্তার করেছে৷ আমরা ওই দোষী ব্যক্তিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানাই৷ এই সহিংসতার দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কাম্য নয়৷ জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের সমর্থকদের সহিংসতার নিন্দা জানাতেই কেবল ব্যর্থ হননি, বরং তারা এখন মামলার বাদী নিহতের স্ত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে মামলাটি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন৷’’
আওয়ামী লীগকে দলগতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘শিমুলের স্ত্রীকে আমরা এসব প্রলোভন গ্রহণ না করার অনুরোধ করছি, যা কেনা হচ্ছে তার নীরবতার দামে৷ আমরা তাকে পরামর্শ দিচ্ছি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন৷’’
এই বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাদের বক্তব্য কান্ডজ্ঞানহীন৷ তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে৷ এই ঘটনার পর মামলা হয়েছে, মেয়রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাকে দল থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে৷ তারপরও তারা (আরএসএফ) এ ধরণের কথা কিভাবে বলে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘তাদের উদ্দেশ্য সরকারকে বিব্রত করা৷ তারা কোনোভাবেই এরকম ঢালাও মন্তব্য করতে পারেনা৷ সরকার এব্যাপারে কোনো নমনীয়তা দেখায়নি, আর দেখাবেও না৷’’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আরো বলেন, ‘‘অ্যামেরিকা, ফ্রান্স বা জার্মানিতে মানুষ মারা যায় না? স্কুল ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয় না? মারা যেতেই পারে৷ বিষয়টি হলো, সরকার কিভাবে ব্যবস্থা নেয়৷ আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বক্তব্যের সঙ্গে একমত? জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...