সমুদ্রসীমার রায় নিয়ে বিতর্ক
১২ জুলাই ২০১৪বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটারের বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিসী আদালত রায় দেয় গত মঙ্গলবার৷ আদালতের রায়ে ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশ পেয়েছে৷ আর ভারত পেয়েছে ৬,১৩৫ বর্গ কিলোমিটারের অধিকার৷ রায় প্রকাশের দিনই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘রায় পর্যালোচনায় উভয়ের জন্য বিজয় নিশ্চিত হয়েছে৷ এ বিজয় বন্ধুত্বের বিজয়, বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ মানুষের বিজয়৷''
কিন্তু বিএনপি একে মানতে পারছেনা৷ বিএনপি-র ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি-র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার পুরোটাই বাংলাদেশের ছিল৷ রায়ের মাধ্যমে এখান থেকে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার ভারতকে দিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে মামলা করা সময়োপযোগী হয়নি৷ এটি আরও পরে করার দরকার ছিল৷
তাঁর কথা, দক্ষিণ তালপট্টি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ এটি হাতছাড়া হতে দেওয়া উচিত হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি এবং বাংলাদেশের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব রয়ে গেছে৷ এ জন্য এ ধরনের একটি রায় পেয়েছে বাংলাদেশ৷'' বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মামলাটি ভালোভাবে পরিচালনা করা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর৷
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে কখনো উভয় পক্ষের বিজয় হয় না৷ অথচ সরকার প্রথমে বলেছে বাংলাদেশের বিজয় হয়েছে আর এখন শুনতে পাচ্ছি ভারতেরও বিজয় হয়েছে৷ তাই তিনি সরকারের কাছে রায়ের ব্যাখ্যা প্রকাশের দাবি করেছেন৷
আর বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘‘যে দলটি গত ২৫ বছর কখন বলেনি যে তালপট্টি দ্বীপ ছিল না, এখন কেন বলছে তালপট্টি দ্বীপ নেই৷ আসলে শেখ হাসিনাকে দিয়ে সব কিছু সম্ভব, কিছু দিন পর হয়ত তিনি বলবেন বাংলাদেশ নামে কোনো রাষ্ট্রই ছিল না৷''
আর এর জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘‘সমুদ্র জয়ের পর তারা তালপট্টি নিয়ে তাল-বেতাল হয়ে গেছেন৷ তালপট্টির তাল যদি বেতাল হয়ে যায় তবে পট্টি আর কতটুকু ভালো থাকবে৷ সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি হওয়ায় এখন তালও নেই বেতালও নেই৷ ফলে তাদের ভারত বিদ্বেষী রাজনীতিতেও একটি উইকেট পড়ে গেছে৷''
সুরঞ্জিত বলেন, ‘‘এখন বিশ্বায়নের যুগ৷ সবাই সব জানে ও দেখে৷ এখন অন্ধকার ও মিথ্যাচারের রাজনীতির কোনো স্থান নেই৷ এই মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিচার হোক৷ আমাদের দাবি যদি ন্যায্য হয় তবে পাবো, না হলে পাবো না৷ এখানে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷''
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে এখন আর তালপট্টি দ্বীপের অবস্থান নেই৷ যদিও ঐ এলাকাটি ভারত পেয়েছে৷