সমকামী অধিকার কর্মী ডেভিড কাটোকে হত্যা করা হল উগান্ডায়
২৭ জানুয়ারি ২০১১কে এই ডেভিড কাটো
ডেভিড কাটো ছিলেন উগান্ডায় সমকামীদের অধিকার নিয়ে লড়াইয়ে সবচেয়ে তৎপর ব্যক্তিত্ব৷ গত বছর ‘রোলিং স্টোন' নামের স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে একাধিক সমকামীর ছবি ছাপা হচ্ছিল পরপর৷ সেইসব সমকামীরা যার ফলে উগান্ডার রক্ষণশীল সমাজে নানান হয়রানির শিকার হতে থাকেন৷ মানবাধিকার কর্মী ডেভিড কাটোরও ছবি ছাপে সেই সংবাদপত্রটি৷ তাঁকে চিহ্নিত করা হয় একজন সমকামী বলে৷ এরপরেই কাটো ওই সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ তারপর থেকেই খুনের হুমকি পেতে থাকেন কাটো৷ অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর বাড়িতে ঢুকে কাটোর মাথায় পরপর দুটি গুলি করে আততায়ী৷ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান এই তরুণ মানবাধিকার কর্মী৷
কাটো হত্যাকাণ্ড আর উগান্ডার রক্ষণশীল সমাজ
উগান্ডার সমাজে সমকামীতা এক শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ সাধারণ আইনেই ১৪ বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হয়ে থাকে সমকামীদের৷ সম্প্রতি এক সাংসদ সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সংসদে প্রস্তাব আনার চেষ্টা করেছিলেন৷ বোঝাই যাচ্ছে, সমাজের প্রভাবশালীদের সমর্থন রয়েছে সেদেশে সমকামী বিরোধীতায়৷ ডেভিড কাটো এই দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন আনতেই তাঁর লড়াই চালাচ্ছিলেন৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রাণ দিতে হল৷
কাটো হত্যার তদন্ত চায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কাটো হত্যাকাণ্ডের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছে৷ ওই সংগঠনের শীর্ষ নেত্রী মারিয়া ব্রুনেটের মতে, উগান্ডার পিছিয়ে থাকা সমাজব্যবস্থার উন্নয়নে কাটোর মত একজন মানবাধিকার কর্মীর অবদান বিশাল৷ তাঁকে হত্যা করে উগান্ডায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মস্ত ক্ষতি করে দিয়েছে রক্ষণশীল ও প্রভাবশালীরা৷ ‘সেক্সুয়াল মাইনরিটিজ উগান্ডা' বা সংক্ষেপে স্মাগ নামের যে সংগঠনের নেতৃত্ব দিতেন কাটো, তাদের উদ্যোগেই ২০০৯ সালে উগান্ডায় সরকারের আনা একটি সমকামীতা বিরোধী আইনকে কার্যত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল সরকার৷ সে সময় উগান্ডায় সমকামীদের ওপর চরম অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল স্মাগ৷ ফলে আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে আইনটিকে বাতিল করতে বাধ্য হয় সরকার৷ এইসব বিভিন্ন কারণেই তথাকথিত সমাজপতিদের চক্ষুশূল ছিলেন এই মানবাধিকার কর্মী ডেভিড কাটো৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ