সংসদ থেকে মুবারকের তৈলচিত্র সরে গেল ধীরে ধীরে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১রাতারাতি পরিবর্তন, সরে গেল মুবারকের তৈলচিত্র
নির্বাচন হবে ঘোষণামতই আগামী সেপ্টেম্বরে৷ কিন্তু তার আগেই মিশরের ছবিতে এটা স্পষ্ট যে শাসনক্ষমতার দখল নিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী৷ সংসদ ভেঙে দিয়ে তারা একটা আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে রাতারাতি!
প্রত্যাশা যা ছিল, তাই ঘটেছে
বস্তুত এই পরিবর্তন প্রত্যাশিতই ছিল৷ দু'দিন আগে আর দু'দিন পরে৷ পদত্যাগ করার সময় সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে যে চাল চেলেছিলেন, ত্রিশ বছরের একনায়ক, ঘাগু রাজনীতিবিদ মুবারক, প্রেসিডেন্টের সেই চাল থেকেই শিক্ষা নিল সেনাবাহিনী৷ মুবারকের দলবল বলে যারা পরিচিত, এতদিনের সেইসব ক্ষমতা দখলকারী মৌচাকও সেই সঙ্গে ভেঙে চুরমার৷ টিভির পর্দায় সবচেয়ে উপভোগ্য দৃশ্য ছিল, সংসদের প্রধান কক্ষ থেকে কেমন ধীরে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে হোসনি মুবারকের বিশাল তৈলচিত্র৷ তার সামনে নির্বিকার ভঙ্গিতে মোবাইলে কথা বলে চলেছেন এক বিশাল চেহারার নিরাপত্তারক্ষী৷ কোথাও কোনরকম আপত্তি বা ক্ষোভের চিহ্ন নেই৷ এই প্রতীকী দৃশ্যই চমৎকার করে বুঝিয়ে দিচ্ছে মিশরের ভবিষ্যৎ৷ সেইসঙ্গে বদলাতে চলেছে দেশের সংবিধান৷
আসল দায়িত্ব কিন্তু সেই তরুণদের কাঁধেই
সংবিধান বদলালে তো পুরো রাজনৈতিক ছবিটাই বদলে যাবে৷ কারণটাও স্পষ্ট৷ যে সংবিধানের বলে বলীয়ান হয়ে এত বছর একনায়কতন্ত্র চালিয়ে গেছেন মুবারক, একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে কায়েম করে রেখে দিয়ে, সেটার প্রভাব ঘুচলেই বহুদল আসবে মিশরে৷ সঠিক গণতন্ত্র যা চায়, সেটাই৷ সেটাই চায় তরুণ মিশর৷ তারা গণভোটের দাবি তুলেছে৷ যা হবে খসড়া সংবিধানকে ঘিরে৷ তারপরেই বহুদলের নির্বাচনের মাধ্যমে বহুমতের সরকার৷ যাতে কোন একনায়কতন্ত্র আর কোনদিন পুষ্টি পাবে না৷ তবে তার জন্য এখনও বহু পথ চলা বাকি৷ সবচেয়ে বড় কথা, একটা সামগ্রিক বোঝাপড়ায় তাদের আসতে হবে৷ বিক্ষোভকারীদের একাংশের সঙ্গে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর যে খণ্ডযুদ্ধের ছবি রবিবার সারাদিন টিভির পর্দায় দুনিয়াজুড়ে ভেসে বেড়িয়েছে, সেটা তেমন সম্মানজনক নয়৷ নিজের দায়িত্ব একা নিজের কাঁধে নিতে গেলে কাঁধটাকে আগে শক্ত করতে হয়৷ তারপরে লাগে মনোবল৷ এই দুটো বিষয়কে বুঝতে হবে তরুণ মিশরের রূপকারদের৷ তা নাহলে সমূহ ক্ষতি৷ কারণ, রক্তপাতহীন বিপ্লবের মাধ্যমে যে দেশকে তারা আজ হাতে পেয়েছে, সে দেশটি কিন্তু সবেমাত্র জন্ম নিল৷ তার রক্ষণাবেক্ষণে যত্নের অভাব হলে ভবিষ্যতে ক্ষতির মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যাবে৷
প্রতিবেদন : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা : হোসাইন আব্দুল হাই