1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশে ভারতীয় শ্রমিক

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৩ আগস্ট ২০১৭

ভারতে বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস পারস্য উপসাগর, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত শ্রমিকদের উপার্জন৷ কিন্তু গত ক'বছরে তা তলানিতে ঠেকেছে৷ ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭,৭৭,৮৪৫, যা ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ৫,০৭,২৯৬-তে৷ কিন্তু কেন?

https://p.dw.com/p/2hceu
Saudi-Arabien Arbeiter auf Khurais Ölfeld
ছবি: Reuters/A. Jarekji

বাহরাইন, ইরাক, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং ইউএই-‌র মতো দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংকট ক্রমশই বাড়ছে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের মূল্য হ্রাস৷ এর ফলে এই দেশগুলোর সমূহ অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে৷ বন্ধ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে নির্মাণ শিল্প৷ ধাক্কা খেয়েছে পরিষেবা শিল্পও৷ এর ওপর গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে এই দেশগুলোর ওপরও৷ স্বভাবতই অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে৷ ২০১৪ সালে ভারতীয় শ্রমিকদের রোজগার ছিল ৬৯,৮১৯ মিলিয়ন ডলার৷ পরের বছরই সেই রোজগার নেমে আসে ৬৫,৫৯২ মিলিয়ন ডলারে৷ গত এক বছরে এই দেশগুলি থেকে ভারতে বিদেশি মূদ্রা উপার্জন ৯ শতাংশ কমেছে৷

ভারত সরকার অবশ্য এ সব দেশগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিছুক্ষেত্রে সফলতাও মিলেছে৷

ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম – বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ, রুজির টানে যাঁরা ঐ সব দেশে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন৷ কারণ কাজ নেই, রোজগার নেই৷ বহু মানুষ তো সর্বস্ব খুইয়ে দেশে ফিরছেন৷ অর্থাৎ পরিস্থিতিটা বেশ ভয়াবহ

প্রশ্ন হলো, দেশে ফিরে এঁরা কী করবেন?‌ ভারতের কাছে এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিষয়টি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ গত কয়েক বছরে ক্রমশই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে৷ সৌদি আরবে ভারতীয় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে৷ ২০১৪ সালে যা ৩,২৯,৮৮২ ছিল, ২০১৬ সালে তা কমে হয়েছে মাত্র ১,৬৫,৩৬৫জন৷

এক সমীক্ষায় জানা গেছে, এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ তেলের দাম কমে যাওয়া, যা সৌদির অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে৷ সৌদি আরব আবার সেদেশে বসবাসকারী বিদেশিদের জন্য ‘‌ডিপেন্ডেন্ট ফি’ নামে এক বিশেষ কর চাপিয়েছে৷ এটা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাবে৷ ২০১০ সালে মাথাপিছু করের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪০০ এসআর৷ এই করের চাপে দেশ ছেড়ে পালানো ছাড়া আর কোনো উপায় পাচ্ছেন না ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশগুলির শ্রমিকরা৷

সিপিএম সাংসদ তথা ভারতের বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বেশ চিন্তিত৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘বিগত কয়েক দশকে আমাদের দেশে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম একটা উপায় ছিল মানব সম্পদ৷ কিন্তু ‌কয়েক লক্ষ শ্রমিক পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে কাজের সুযোগ হারানোয় সেটা হু হু করে কমেছে৷ ফলে, ভারতের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে৷ বাজার অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে, আরও সংকট দেখা দিতে পারে৷ দেশের পাশাপাশি ঐ শ্রমিকরা যে রাজ্যের বাসিন্দা সেই রাজ্যের কাছেও বিষয়টি সংকট সৃষ্টি করেছে৷ এ সব মানুষদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করার দায় এসে পড়ছে রাজ্যগুলির ওপর৷’’

‘ভারতের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে’

তবে অন্য বেশ কিছু কারণও আছে বৈকি৷ আসলে এতদিন এ সব দেশ ভারতের বন্ধুভাবাপন্ন দেশ ছিল৷ সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষা ও ইতিহাসগত মিলন ছিল, ঐক্য ছিল৷ কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে ভারতের মার্কিন-‌ঘেঁষা বিদেশ নীতি দেশগুলি আর পছন্দ করছে না৷ এই দেশগুলোর মানুষরা মনে করেন, তাঁদের দুরবস্থার জন্য দায়ী মূলত মার্কিন মুলুক৷ মার্কিন অর্থনীতি ও বিদেশ নীতি তাঁদের মার্কিন-‌বিদ্বেষী করে তুলেছে৷ হিসেবটা সহজ – ‘অ্যামেরিকার বন্ধু, আমাদের শত্রু৷’

ইদানীং ভারত-‌মার্কিন-‌ইসরায়েলের মধ্যে যে অক্ষ তৈরি হয়েছে, ভারত তাতে ঢুকে পড়েছে৷ বলা যেতে পারে, ভারত তাতে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷ এর ফলে এতদিন পশ্চিম এশিয়ায় ভারত বন্ধুত্বের খাতিরে যে সুবিধাগুলি পেয়ে এসেছে, এখন তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ তা না হলে, ইরান ও তুরস্কের মতো দেশগুলো যারা এতদিন ভারতের পাশে ছিল, তারা এখন কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সমালোচনা করতে পিছপা হচ্ছে না৷

এছাড়াও এই দেশগুলিতে জঙ্গি-‌বিরোধী কার্যকলাপের নামে আসলে জঙ্গি কার্যকলাপ কয়েক গুণ বেড়েছে৷ এক্ষেত্রে ভারতের দক্ষিণে কেরল থেকে একটি সম্প্রদায়ের মানুষ আইএসআইএস-‌এর মতো উগ্র ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখানোর ঘটনাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না এতদিনের এই বন্ধু দেশগুলি৷

পশ্চিম এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যে মানব সম্পদ জোগান দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় কোনো অংশে কম যায় না বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশে রীতিমতো এই সংক্রান্ত একটি মন্ত্রক রয়েছে৷ কিন্তু টান পড়েছে সেখানেও৷ স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে চিন্তায় বাংলাদেশ সরকার৷ অল্পবিস্তর প্রভাব পড়েছে নেপালের মতো দেশেও৷

এর ওপর কয়েকটি দেশ আবার সেখানে বসবাসকারী প্রবাসীদের জন্য এক বিশেষ কর চালু করেছে৷ এতে করে কর্মহীন, অর্থহীন ভারতীয়রা চমর সমস্যায় পড়েছেন৷ ভারতীয়দের অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন নকল নিয়োগকারী এজেন্টের দ্বারা৷ চাকরি দেওয়ার নাম করে ভারতীয় শ্রমিকদের একবার নিয়ে যেতে পারলেই এই এজেন্টরা তাঁদের পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে৷ শুধুমাত্র দু-‌বেলা খাওয়ার বিনিময়ে তাঁদের দিয়ে করানো হয় অমানুষিক পরিশ্রম৷ এমন অভিযোগ ভুরি ভুরি৷

কিছুদিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ সব দেশগুলিতে গিয়ে যাঁরা বিপদে পড়েছেন তাঁদের বকেয়া বেতনের দাবি নথিভুক্ত করে দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দেন৷ বলেন, ‘‘‌সৌদি আরবে থাকা ভারতীয় কর্মীরা, দয়া করে নিজেদের পাওনা বেতনের দাবি নথিভুক্ত করে দেশে ফিরে আসুন৷ আমরা বিনা খরচে আপনাদের ফিরিয়ে আনব৷’’

ভারত সরকারের তরফ থেকেও স্বদেশীয় কর্মহীন শ্রমিকদের মালিক সংস্থার অনুমতি ছাড়া সৌদি আরব ছাড়ার ভিসা মঞ্জুরের আবেদন করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে শ্রমিকদের বকেয়া কয়েক মাসের বেতন মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েচে৷ সে দেশের আইন অনুযায়ী, বিদেশি শ্রমিকরা নিয়োগকারী সংস্থার অনুমতি ছাড়া অন্য সংস্থার চাকরিতে যোগ দিতে পারেন না৷

গত বছর মে মাসে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান নিয়ে করা ছবিঘরটি দেখুন...