1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশু জিহাদ উদ্ধারে ব্যর্থতা: নড়েচড়ে বসছে ফায়ার সার্ভিস

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

শিশু জিহাদকে উদ্ধারে ব্যর্থতার পর বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকীকরণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ প্রায় দুশ' কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের আগামী বৈঠকে পাশ হতে পারে বলে খবর৷

https://p.dw.com/p/1EBtN
Bangladesch Tote bei Einsturz von Textilfabrik 24.04.2013
প্রতীকী ছবিছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণে গত এপ্রিলে প্রায় একশ' ৯৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়৷ ঢাকার শাহজানপুরে ওয়াসার গভীর পানির পাইপে পড়ে শিশু জিহাদ (৪) নিহত হওয়ার পর, এই প্রকল্প নিয়ে সক্রিয় হয়েছে সরকার৷ কারণ ২৩ ঘণ্টার চেষ্টাতেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জিহাদকে উদ্ধার করতে পারেনি৷ শনিবার দুপুরের পর উদ্ধার অভিযান স্থগিত করার পরপরই পাইপের প্রায় ৩০০ ফুট গভীর থেকে স্থানীয়রা নিজস্ব পদ্ধতিতে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে৷ অথচ ফায়ার সার্ভিস বলেছিল যে, তারা অনুসন্ধান চালিয়ে কোনো শিশু বা মানবদহের অস্তিত্ব পায়নি৷ তারা পাইপে শিশু পড়ে যাওয়ার ঘটনাকে ‘গুজব' বলে উড়িয়ে দিয়েছিল, যা ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে৷

জানা গেছে, নতুন এই প্রকল্পের আওয়তায় ফায়ার সার্ভিসে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরিকল্পনা আছে৷ এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ৬০ টন ক্ষমতার তিনটি এক্সক্যাভেটর্স, ১১০০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার চারটি ওয়াটার কন্টেইনার, উদ্ধার যন্ত্রপাতি সজ্জিত জরুরি গাড়ি, ১২টি টোইং গাড়ি প্রভৃতি৷ জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের বা একনেক-এর মঙ্গলবারের বৈঠকে এই প্রকল্প পাশ হলে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে৷

Großbrand in Bangladesch
দুর্ঘটনার পর পড়ে থাকে শুধু শোকছবি: Reuters

তবে ফায়ার সার্ভিসের ১৬০ কোটি টাকায় ৩০০টি প্রকল্পের কাজ এখন চলছে৷ ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্যোগ উদ্ধার তত্‍পরতার জন্য দেশে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ এরই মধ্যে ‘পাইলট প্রকল্প' হিসেবে ঢাকায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷ প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ছাত্র, মুদি দোকানি থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ আছেন৷

এর বাইরে আরা দু'টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে৷ একটি হলো: ‘হাইওয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন' শীর্ষক প্রকল্প ৷এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের আঞ্চলিক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে তাত্‍ক্ষণিক সেবা দেওয়া সম্ভব হবে৷ এছাড়া ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্ধার সরঞ্জাম কেনার কাজও চলছে৷ এই প্রকল্পের আওতায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এয়ার ব্রিদিং ও গ্যাস ফায়ার ফাইটিং, ট্রেনিং গ্যালারি এবং ফায়ার ফাইটিং রেসকিউ সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ ৫৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রকল্পটি একনেক-এ অনুমোদিত হয় গত আগস্টে মাসে৷

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমাদের সীমিত যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷ আমরা কী কাজ করি দেশের মানুষ সবাই জানে৷ এর মধ্যেই আমরা আরো কিভাবে ভালো সেবা দেয়া যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ আমাদের ব্যর্থতা যেমন আছে, আছে সাফল্যও৷''

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা এবং আধুনিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই৷একটা ঘটনা ঘটার পর কিছুদিন আলোচনা হয়, তারপর সব কিছু থেমে যায়৷ শিশু জিহাদের ঘটনা থেকেও যদি আমরা শিক্ষা না নেই তাহলে আর কিছু বলার থাকবে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে একটি বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা উচিত৷''

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ২৭২টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে৷ এর মধ্যে রাজধানীতে ১৫টি৷ সবগুলো মিলিয়ে এর জনবল সাত হাজারের কিছু বেশি৷ রাজধানীতে জনবল পাঁচশ'র মতো৷ ফায়ার স্টেশনগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ‘এ' ক্যাটাগরিতে আছে রাজধানীর ফায়ার স্টেশনগুলো৷ ‘বি' ক্যাটাগরিতে আছে রাজধানীর উপকণ্ঠে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের স্টেশনগুলো৷ বাকি সবগুলো স্টেশন ‘সি' ক্যাটাগরিতে৷ ‘এ' ক্যাটাগরির স্টেশনগুলোতে ৩৫ জন করে, ‘বি' ক্যাটাগরির স্টেশনগুলোতে ২৭ জন এবং ‘সি' ক্যাটাগরিতে ১৬ জন জনবল কাজ করে৷ রাজধানীর স্টেশনগুলোতে তিনটি বড় পানির গাড়িসহ বড় ধরনের হাইড্রোলিক ল্যাডারসহ (মই) ভারি কিছু যন্ত্রপাতি আছে৷ কিন্তু দেশের অন্য ফায়ার স্টেশনগুলোতে একটি করে পানির গাড়ি ছাড়া তেমন আর কোনো যন্ত্রপাতি নেই৷

Symbolbild Brand Moskau 26.04.2013
সরঞ্জাম ছাড়া আগুনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সম্ভব নয়ছবি: picture-alliance/dpa
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য