1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিউলি সাথীর অবস্থা

জাহিদুল হক৩০ জুলাই ২০১৩

টিভি খুললে আর রাস্তার পাশে থাকা বিলবোর্ডে চোখ রাখলেই শিউলি সাথী৷ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সাথী বিশেষ অলিম্পিকে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন৷ তাই সবার প্রেরণার উৎস তিনি৷ কিন্তু বাস্তবে ভালো নেই সাথী৷

https://p.dw.com/p/19Gyj
ছবি: Grameenphone Ltd.

জন্মের পর থেকে প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত নিজ পায়ে ভালভাবে দাঁড়াতেই পারতেন না৷ কোনো কিছু ধরে তাঁকে হাঁটতে হতো কারণ দুই পায়ে শক্তি ছিল না৷ কথা বললে কথা জড়িয়ে যেত৷ এজন্য অনেকের কাছে কটু কথাও শুনতে হয়েছে৷ কিন্তু সেসব বাধা পেরিয়ে সাথী বিশেষ অলিম্পিকে বচি আর ব্যাডমিন্টনে সোনা, রূপা আর ব্রোঞ্জ পদক জেতেন৷ উজ্জ্বল করেন বাংলাদেশের নাম৷

Shewli Sathi
বগুড়া বাস টার্মিনালের একটি বিলবোর্ডে সাথীছবি: Grameenphone Ltd.

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে যে সাথী বিশ্ব জয় করেছেন তিনিই এখন বাস্তবতার কাছে কেমন যেন অসহায়৷ যে মানুষটি অন্যের জন্য প্রেরণার উৎস হয়েছেন তিনিই এখন একটু ভাল থাকার জন্য অন্যের সহায়তা প্রার্থী৷

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এক শনিবার দুপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে৷ সেসময় তিনি বাসে করে বারডেমে যাচ্ছিলেন বাবার জন্য ওষুধ কিনতে৷ রিকশাচালক ও ডায়াবেটিসের রোগী সাথীর বাবা বাসার বাথরুমে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান৷ এরপর গত সাত-মাস ধরে তিনি ‘অচল' হয়ে আছেন বলে জানালেন সাথী৷ ‘‘পায়ে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ায় এখন অপারেশন লাগবে৷ এজন্য প্রায় ৩০ হাজার টাকার দরকার৷ আমি অনেককে সেটা বলেছি৷ কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করতে রাজি না,'' বলেন তিনি৷

Shewli Sathi Olympia Teilnehmerin Bangladesh
‘বাবা-মাকে নিয়ে আমি অনেক দুঃখে আছি’ছবি: Grameenphone

উল্লেখ্য, ঢাকার ধুপখোলার একটি বস্তিতে বাবা আর মাকে নিয়ে থাকেন সাথী৷ বাবা অসুস্থ হওয়ার পর এখন সাথীই সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি৷ মগবাজারে প্রতিবন্ধী স্কুল এসডাব্লিউআইডি বা ‘সুইড বাংলাদেশ'এ বাচ্চাদের নাচ, গান শেখান সাথী৷ ওটা সাথীরও সাবেক স্কুল, যেখানে ভর্তি হয়ে তাঁর জীবনে এসেছে অনেক পরিবর্তন৷ ঐ স্কুলে গিয়েই তিনি প্রথমে হাঁটতে শেখেন৷ এরপর খেলাধুলা শিখে দেশের জন্য বয়ে আনেন সম্মান৷

সাথী তাঁর কাজের বিনিময়ে মাস শেষে ১,৮০০ টাকা পান৷ যেটা এখন তাঁর তিন সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জন৷ তাই দুঃখ করে তিনি বললেন, ‘‘আঠারোশো টাকা দিয়ে আমি বাবা-মার ওষুধ কিনবো নাকি ঘর ভাড়া দিব সেটা বুঝতে পারছি না৷ তাই বাবা-মাকে নিয়ে আমি অনেক দুঃখে আছি৷ আমার ভিতরটা ফেটে যায় কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারিনা৷ আমার অনেক দুঃখ৷''

শিউলি সাথী সবার প্রেরণার উৎস

সাথীর সঙ্গে কথা বলার পর কথা হয় তাঁর প্রশিক্ষক কাজী বিলকিস বেগমের সঙ্গে৷ তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অলিম্পিক দলের একজন প্রশিক্ষক ও সুইড বাংলাদেশ স্কুলের শিক্ষক৷ বিলকিস জানালেন সাথী তাঁর হাতেই গড়ে ওঠা৷ সাথীর বাবা আগে রিকশা চালাতেন সেই কথা নিশ্চিত করে তিনি বললেন, ‘‘সাথীর দুরবস্থার কথা বিবেচনা করেই বিশেষ অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপন করার জন্য সাথীকে নির্বাচন করে৷ ঐ বিজ্ঞাপন থেকে সাথী দুই লক্ষ টাকা পেয়েছে৷'' এছাড়া তাঁকে সুইড বাংলাদেশ স্কুলের বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার একটা সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান বিলকিস বেগম৷

কাজী বিলকিস বেগম

তিনি বলেন, গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৩ সালের বিশেষ অলিম্পিকে ফ্লোর হকিতে অংশ নেয়া ১৪ জন অ্যাথলেট আর তিনজন কোচকে এক লক্ষ করে টাকা দিয়েছেন৷ ঐ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০০৭ ও ২০১১ সালের অলিম্পিকে যারা ভালো করেছে তাদের নাম চেয়েছেন বলে জানান বিলকিস বেগম৷ ‘‘আমি নিজে সেই তালিকায় সাথীর নাম পাঠিয়েছি৷ এখন দেখা যাক কিছু হয় কি না,'' বলেন তিনি৷

উল্লেখ্য, সাথী ঐ দুই অলিম্পিকেই বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন৷ বিলকিস বেগমের মতে, ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকার একটা সংবর্ধনার আয়োজন করে অ্যাথলেটদের কিছু টাকা দিয়েছিল৷ কিন্তু ২০১১ সালে শুধু একটা ট্র্যাকসুট আর খাবার দেয়া হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য