পোশাক শিল্প আশঙ্কায়
১৪ জুন ২০১৩এতে বাংলাদেশের তাত্ক্ষণিকভাবে যা ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ভাবমূর্তির৷ তাতে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশ প্রভাবিত হতে পারে৷মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের জিএসপি সুবিধা থাকবে কিনা তা নিয়ে চার দফা শুনানি হয়েছে৷ এই শুনানিতে প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ, শ্রমিক নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা৷
গত আট মাসে বাংলাদেশের পোশাক কারাখানায় নানা দুর্ঘটনায় ১,৩০০ জনেরও বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷ গত নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনে ১১২ জন নিহত হয়েছে৷ সম্প্রতি রানা প্লাজা ধসে ১,১২৯ জন নিহত হয়েছেন৷ ওবামা প্রশাসন এসব বিবেচনা করে সেদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাণিজ্যিক সুবিধা কমিয়ে দিতে পারে৷ জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টিটিভস অফিস সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের সুপারিশের প্রস্তুতি শেষ করেছে৷ এ বিষয়ে ৩০শে জুন হোয়াইট হাউজ তাদের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করতে পারে৷
বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাক এই সুবিধা পায়না৷ এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক হওয়ায় জিএসপির সুবিধা আর্থিক হিসেবে ১ শতাংশেরও কম৷
সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াযজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, যদি বাণিজ্যিক সুবিধা যুক্তরাষ্ট্র কাট ছাট করে তাহলে পরিমাণে কম হলেও বাংলাদেশ থেকে বহুধরণের ক্ষুদ্র শিল্প পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে যায়৷ যার পরিমাণ বছরে ২৬ মিলিয়ন ডলার৷ এই বহুমাত্রিক পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
তাঁর মতে, এই সুবিধা বাতিল যদি শাস্তিমূলক হয় তাহলে এর ক্ষতির দিক আছে৷ এই শস্তির কারণ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে অনিয়ম, শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব, কাজের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন৷ আর এর জন্য বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হবে৷ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি এই সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হয়, তাহলে তা হবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য মারাত্মক৷
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশকে শাস্তি দেয় তাহলে সহযোগিতার প্রশ্নটিও আসে৷ তাঁর মতে, এই শাস্তি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখবে কিনা – মার্কিন প্রশাসনের সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে৷
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ এর কারণ, এখানে শ্রমিকের মজুরি কম হওয়ায় পোশাকের উত্পাদন খরচও কম৷ তাই ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে এখান থেকে পোশাক কিনতে পারেন৷ এই সুবিধা যতদিন থাকবে ক্রেতারা ততদিন বাংলাদেশের পোশাক বর্জন করবে না৷ তবে তিনিও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খারাপ হবে৷
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
দেবারতি গুহ