1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শতবর্ষে স্যাম বাহাদুর

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা৩ এপ্রিল ২০১৪

৩রা এপ্রিল বৃহস্পতিবার ১০০ বছরে পা দিচ্ছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বনামধন্য ফিল্ড মার্শাল প্রয়াত স্যাম মানেকশ৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আন্তরিক সহযোগিতার কথা আজও ভোলার নয়৷

https://p.dw.com/p/1BaFB
Feldmarschall Sam Manekshaw mit Soldaten
ছবি: Ministry of Defence, India

পুরো নাম স্যাম হোরমুসজি ফ্রামজি জামশেদজি মানেকশ৷ সারা ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁকে ডাকত স্যাম বাহাদুর বলে৷ বাহাদুর তো তিনি ছিলেনই, যুদ্ধক্ষেত্রে বার বার সেই বাহাদুরির প্রমাণও মিলেছে৷ কিন্তু এই নামকরণের কারণটা একটু অন্য৷ ফিল্ড মার্শাল মানেকশ-র খটোমটো পার্শি নাম উচ্চারণ করতে পারছিলেন না এক গোর্খা সৈন্য৷ তাঁর মুখে যে শব্দটা সবথেকে সহজে, সবার আগে এসেছিল, সেই বাহাদুর জুড়ে দিয়েছিলেন প্রিয় ফিল্ড মার্শালের নামের পাশে৷ সেই থেকেই সহযোদ্ধাদের কাছে স্যাম বাহাদুর৷ আর সরকারি পরিচয় জ্ঞাপনে কিংবা সামরিক নথিতে ফিল্ড মার্শাল মানেকশ৷ তাঁর দুই নাতি অবশ্য আদর করে দাদুকে নাম ধরেই ডাকত!

এক অত্যন্ত অন্যরকম স্মৃতিচারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী নতুন করে গর্বিত হচ্ছে প্রয়াত স্যাম মানেকশ-র জন্য, যিনি এবছর শতবর্ষে পা দিচ্ছেন৷ তাঁর সামরিক সাফল্য নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিচারণে, শেষদিকে সেনাবাহিনীর যে চিকিৎসক তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁর অন্তরঙ্গ কথনে, দক্ষিণ ভারতের কুন্নুরে চিরবিশ্বস্ত যে গোর্খা সেবক পরিবার তাঁর যত্নআত্তি করত, তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আলোয় বুঝি আবিষ্কৃত হচ্ছেন এক অন্য ফিল্ড মার্শাল, ফৌজি উর্দির আড়ালের যে মানুষটার কথা এতদিন অনেকের অজানা ছিল৷ জীবনের শেষ দিনগুলোয়, যখন শারীরিক অসুস্থতা তাঁকে অনেকটাই কাবু করে দিয়েছে, তখনও বিনা হুইলচেয়ারে, নিজের পায়ে হেঁটে সেনা হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে গিয়েছেন৷ এমনই কর্তৃত্ব ছিল ওই ভগ্নস্বাস্থ্যেও৷

Feldmarschall Sam Manekshaw mit Offizieren
সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি ‘স্যাম বাহাদুর’ছবি: Ministry of Defence, India

মজা করতে, এমনকি নিজেকে নিয়ে রসিকতা করতেও কখনও ভোলেননি মানেকশ৷ শেষ দিকে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন৷ তার মধ্যেও চিকিৎসকের সঙ্গে মজা করেছেন৷ মানেকশ-র বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর ডাক্তার৷ তিনি ছেলেকে বলেছিলেন, যদি অনেক দিন বাঁচতে চাও, তা হলে মদ এবং সিগারেট থেকে দূরে থেকো৷ কথাটা ডাক্তারকে জানিয়ে মানেকশ হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘‘সেদিন যদি বাবার কথা শুনতাম, তা হলে আরও অনেক আগেই আমি মারা যেতাম!'' একেবারে শেষদিকে, যখন ৯৪ বছরের মানেকশ মৃত্যুশয্যায়, তখনও ডাক্তারকে বলেছেন, ‘‘এখন আমার তোমার সঙ্গে বসে এক পাত্তর পান করার কথা৷ কী আফশোস যে সেটা হচ্ছে না৷''

মজার ঘটনা হচ্ছে, মানেকশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর তাঁর এক নাতি এসেছিলেন ওই সেনা চিকিৎসক কর্নেল বি এন প্রসাদের বাড়িতে, একটি স্কচ হুইস্কির বোতল নিয়ে৷ বলেছিলেন, দাদু ওটা তাঁকে দিতে বলে গিয়েছেন৷ বোতলের সঙ্গে একটা ছোট্ট চিরকুটে লেখা, ফিল্ড মার্শাল দুঃখিত যে তিনি সঙ্গ দিতে পারছেন না!

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমস্ত সৈন্য ফিল্ড মার্শাল মানেকশ-কে ভীষণ ভালোবাসত, কারণ উনিও তাঁদের নিজের লোকের মতই ভালোবাসতেন৷ এই পারস্পরিক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সম্পর্কের শিকড় ছিল অনেক গভীরে৷ ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর তরুণ ক্যাপ্টেন স্যাম মানেকশ লড়ছিলেন বর্মার জঙ্গলে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ শত্রু এলাকার মধ্যে গুলি লেগে পড়ে যান তিনি৷ নয়টি গুলি বিঁধে ছিল তাঁর শরীরে৷ সেই সময় মানেকশ-র আর্দালি সিপাই শের সিং নিজের জীবন বিপন্ন করে তুলে আনেন মানেকশ-কে৷ অনেকটা রাস্তা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যায় সেনা হাসপাতালে৷ পরে সেই অকুতোভয় সিপাই বলেছিলেন, মানেকশ আমাদের মাথার তাজ৷ তাঁকে কখনও মাটিতে পড়ে থাকতে দেওয়া যায়!

ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ তাঁর নিজের বীরত্বের প্রথম স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ১৯৪২-এর যুদ্ধেই৷ তাঁকে ব্রিটিশ সামরিক সম্মান মিলিটারি ক্রস দেওয়া হয়েছিল৷ আর তিনি নিজে সাহসিকতা এবং বীরত্বের জন্য ভারতীয় বাহিনীর গোর্খা সৈন্যদের খুব পছন্দ করতেন৷ ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে গোর্খা সৈনিকদের অসাধারণ শৌর্য ইতিহাস হয়ে আছে৷ সেই যুদ্ধের পর ফিল্ড মার্শাল মানেকশ বাঙালির ঘরে ঘরেও পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন৷ বহু যুবক সেই সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন শুধুমাত্র মানেকশ-কে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে৷ এখনও তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর কাছে গর্বের এক সম্পদ৷ জীবিত থাকলে পা দিতেন ১০০ বছরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য