লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিক্ষোভকারীদের দখলে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১১সর্বশেষ পরিস্থিতি:
ত্রিপোলির রাস্তায় রাস্তায় খণ্ড যুদ্ধ চলছে৷ থেকে থেকেই শোনা যাচ্ছে গুলিবর্ষণের শব্দ৷ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, লিবিয়ায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এই পর্যন্ত সেখানে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৩৩ জন৷ ৪১ বছর ধরে লিবিয়া শাসন করে চলেছেন ৬৮ বছর বয়স্ক নেতা কর্ণেল মোয়াম্মের গদ্দাফি৷ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তাঁকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি৷
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে গদ্দাফির ভাষণ :
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ভাষণে, গদ্দাফি বলেন, ‘‘আমরা হাতে অস্ত্র তুলে নেবো, শেষ বুলেট থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো৷ আমরা বৈরী সবকিছু ধ্বংস করে দেবো৷ সবার হাতে যদি অস্ত্র থাকে, তাহলে এটা একটা গৃহযুদ্ধ বৈকি৷ আমরা একজন আরেকজনকে খুন করবো৷ লিবিয়া মিশর নয়, টিউনিশিয়াও নয়৷’’ আর গদ্দাফির এই ভাষণ প্রচারিত হবার কয়েক ঘন্টা পরেই বিক্ষুব্ধ জনতা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো দখল করে নেয়৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আল-জামাহিরিয়া টু টেলিভিশন এবং আল-শাবাবিয়া রেডিওর সদর দপ্তর দখল করে নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা৷
লিবিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীর হাতে শতাধিক বাংলাদেশি জিম্মি
লিবিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ৩শ'র বেশি বিদেশিকে জিম্মি করেছে, জানা গেছে তার মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন৷ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজি থেকে প্রায় ৩৫০ কিলো মিটার পূর্বে দারনা সিটিতে কয়েকদিন ধরে এঁরা আটক রয়েছেন বলে জিম্মি থাকা এক বাংলাদেশি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান৷ জিম্মিদের ধারণা, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেই বিদেশিদের আটক করা হয়েছে৷
দারনা সিটিতে জিম্মিদের একজন মানিকগঞ্জ জেলার শফিউদ্দিন সোমবার দুপুরে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘গত শুক্রবার বিকালে ৩০/৪০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি আমাদের ক্যাম্প অফিস থেকে জিম্মি করে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদে নিয়ে যায়৷ পরের দিন স্থান পরিবর্তন করে পাশের দু'টি কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের আনা হয়েছে৷''
যাঁদের জিম্মি করা হয়েছে, তাঁরা দক্ষিণ কোরিয়ার একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন৷ জিম্মিদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও কোরিয়া, নেপাল এবং শ্রীলংকার নাগরিক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শফিউদ্দিন৷
এ বিষয়ে ত্রিপোলির বাংলাদেশ মিশনে যোগাযোগ করা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয় যে, তারা ঘটনাটি রবিবার জেনেছেন৷ বিষয়টি সেদেশর পুলিশকে জানানো হলেও এলাকাটি সরকারবিরোধীদের ঘাঁটি হওয়ায়, পুলিশ এখনও সেখানে অভিযান চালাতে পারেনি৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘সম্ভবত লুটপাট করা জন্যই এটা করা হয়েছে৷ যারা জিম্মি করেছে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি৷ কিন্তু সেটা এখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি৷ তবে বাংলাদেশি কোনো নাগরিক নিহত বা আহত হয়নি৷''
অস্ত্রাগার দখল:
এদিকে, ইসলামপন্থী বন্দুকধারীরা লিবিয়ার একটি সেনা অস্ত্রাগার এবং কাছাকাছি একটি বন্দর দখল করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা৷ বন্দুকধারীরা কয়েকজন সৈন্য এবং বেসামরিক ব্যক্তিকে জিম্মি করেছে বলেও ঐ কর্মকর্তা জানান৷
ওদিকে, লিবিয়ার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সেখানে পরিচালিত একটি ফরাসি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ একই সঙ্গে লিবিয়ায় অবস্থানরত ফরাসি নাগরিকদের দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ ফ্রান্সের ইউরোপীয় সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রি লঁরো ভকিয়ে সোমবার এই আহ্বান জানিয়েছেন৷ অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য এবং লিবিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক হবার কথা রয়েছে আজ৷
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ