রোমারা পারিতে আশানিরাশার দোলাচলে
২০ আগস্ট ২০১০সোনা বাঁধানো দাঁত, গলায় চারটে রূপো তামা কিংবা কড়ির হার, হাতে বালার সারি, বুকে উল্কি৷ এমন চেহারা তো কোন ফরাসির নয়৷ এমন যার চেহারা সে নির্ঘাত শহরের উত্তরের ঘিঞ্জি পল্লীতে বাস করে৷ জাতে রোমা৷ জিপসি বলে গালিটালি তো প্রায়ই জোটে৷
ফরাসি নাগরিক হতে চেয়ে রোমারা দলবলে মিলে ডেরা গেড়েছে প্যারিসে৷ ফ্রান্সেও৷ কিন্তু মন্দায় মার খাওয়া ফরাসি সরকারের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি সাফ বলে দিয়েছেন, সেসব দিন গেছে৷ এখন ফরাসি নাগরিকত্ব পাওয়াটা অত সোজা নয় আর৷ ছেলের হাতের মোয়া ভাবলে চলবে না৷ ফরাসি ভাষা বলতে হবে, নাগরিকত্ব অর্জনের যাবতীয় যোগ্যতা পূরণ করতে হবে৷ তা না হলে পত্রপাঠ দেশে ফেরত৷
তারপরেও রোমা কলোনিতে নেই আঁকড়া হয়ে বসে আছে কিছু কিছু পরিবার, আশা, যদি কোন মিরাকল ঘটে যায়৷ ‘যদিও তেমন কিছু ঘটবে না কিছুতেই৷' ২৮ বছরের লাঙ্কো পেট্রো হেঁকেই বললেন কথাটা৷ ২০০৫ সালে পেট্রো এই আওয়ারভিলি নামের জায়গাটায় দুই শিশু সন্তান আর স্ত্রীর হাত ধরে এসে হাজির হয়েছিল৷ তখন ফরাসি ভাষা বিন্দুবিসর্গ বলতে পারত না কেউ৷ আর এখন গড়গড়িয়ে ফরাসি বলে পেট্রো, তার দুই ছেলে যায় কাছের ইস্কুলে, পেট্রো নিজে জানলা মেরামত আর জানলা লাগানোর কাজে ওস্তাদ৷ ওরা তাকিয়ে আছে একটা অ্যাপার্টমেন্টের দিকে৷ যেটা ওরা ভাড়া নেবে৷ মিশে যাবে ফরাসিদের জনারণ্যে বুখারেস্ট থেকে আসা এই রোমা পরিবার৷
সকলের ভাগ্য কিন্তু এতটা ভালো নয়৷ বলছিল পেট্রো৷ ‘আমার নিজের বাবাকেই দেখুন না৷ এতদিন এখানে আছে৷ তাও ভাষা শেখে নি৷ ওদের ফিরে যেতেই হবে বুখারেস্টের অনিশ্চিত জীবনে৷ এই বৃদ্ধ বয়সে৷ ভাবলে খারাপ লাগে৷ ভাগ্যিস আমি আমার বাচ্চাদুটোকে ইস্কুলে পাঠিয়েছিলাম৷'
‘ইস্কুলটাই এই রোমাদের ফরাসি সমাজের মূলস্রোতে ঢোকার চাবিকাঠি৷' সোনা বাঁধানো দাঁতে হেসে বলছিলেন, রোমাকলোনির মুরুব্বি নাবিল বেন্ডামি৷ বেন্ডামির দাবি, ‘এখানে বাস করতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে ছেলেপুলেদের স্কুলে পাঠাতেই হবে৷ সবাই সেটা করতে বাধ্য৷ তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে৷ ফরাসি ভাষাটা শেখার এটাই একমাত্র পথ৷'
সে পথে চলে সুফল পেয়েছেন ফরাসি দেশের রোমারা৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা : দেবারতি গুহ