রিভিউয়ের সুযোগ পাবেন সবাই
২৭ নভেম্বর ২০১৪
গত বছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷ তার প্রায় আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর ৫ই ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়৷ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ৮ই ডিসেম্বর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়৷ ট্রাইব্যুনাল ঐ দিনই কাদের মোল্লার মৃত্যু পরওয়ানা জারি করে আদেশটি ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়৷ রায়ের কপি হাতে পেয়েই তার ফাঁসি কার্যকর করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেন তাঁরা৷
কিন্তু রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ১০ই ডিসেম্বর রাতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বাসভবনে আবেদন নিয়ে গেলে ফাঁসি কার্যকর স্থগিত করা হয়৷ পরদিন কাদের মোল্লার পক্ষে রিভিউ সংক্রান্ত দুটি আবেদন আপিল বিভাগে দায়েরের পর একদিন শুনানি করে আবেদন নাকচ করে দেয় আদালত৷ রাতেই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়৷ কিন্তু রিভিউ আবেদন কী কারণে খারিজ হয়েছে – তা তখন স্পষ্ট করেননি আপিল বিভাগ৷ মঙ্গলবার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে হলে তা স্পষ্ট করা হয়৷
এছাড়া রায়ে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা আপিলের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন৷ এই সুযোগ প্রসিকিউশনও পাবে৷ এ জন্য তাঁরা সময় পাবেন ১৫ দিন৷
রায়ে বলা হয়, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রেও আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য (মেনটেইনেবল) হবে৷ তবে তা আপিলের সমকক্ষ হবে না৷ সাধারণ মামলার ক্ষেত্রে রিভিউয়ের জন্য ৩০ দিন সময় দেয়া হলেও এ আইনের মামলায় তা প্রযোজ্য হবে না৷ ১৯৭৩ সালের এই আইনের অধীনে আপিলের রিভিউয়ের সময় হবে ১৫ দিন৷ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিভিউয়ের আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে৷
এর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখলে এবং আসামিপক্ষ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না৷
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে দেশের নাগারিকদের রিভিউয়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ এটা সাংবিধানিক অধিকার৷ এটা কোনোভাবে বাতিল করা যায়না৷ বাতিল করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে৷ আমরা আগেও এটা বলেছি৷ আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁদের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হল আমরাই সঠিক৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিই এই সুযোগ পাবেন৷ বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো না করে সব ধাপ অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি৷''
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনার ফলে এখন জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে ১৫ দিনের মধ্যে তিনিও রিভিউ করতে পারবেন৷
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এ এম আমীর উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে অস্পষ্টতার অবসান ঘটল৷ একটি বিতর্ক গোড়া থেকেই ছিল যে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা রিভিউ করতে পারবেন কি না৷ সেই বিতর্ক আর থাকলো না৷'' তিনি জানান, এখন থেকে দুই পক্ষই রিভিউয়ের সুযোগ পাবেন৷
তিনি আরও মনে করেন, ‘‘কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় তার অধিকার খর্ব করা হয়নি৷ কারণ প্রসিকিউসন রিভিউয়ের বিরোধিতা করলেও তিনি রিভিউ আবেদন করেছেন এবং তা খারিজ হয়েছে৷'' তিনি জানান, ‘‘এখন রাষ্ট্রপক্ষও মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করতে পারবে৷''