1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বদলে গেল বিহারের রাজনীতি!

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৭ জুলাই ২০১৭

ক্ষমতায় তিনিই৷ শুধু বদলালো সঙ্গী৷ সন্ধ্যায় ইস্তফা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার৷ দশ মিনিটের মধ্যেই মোদীর অভিনন্দন, ‘‌‌‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনাকে স্বাগত৷'' রাতেই নীতীশ-‌বিজেপি বৈঠক এবং এনডিএ-‌তে প্রত্যাবর্তন৷

https://p.dw.com/p/2hDME
Indien Nitish Kumar Chief Minister von Bihar
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saurabh Das

সকালে নিজের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে লালুপ্রসাদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বুধবারই হয়ত তাঁর ছেলে তেজস্বী যাদবকে পদত্যাগ করতে বলবেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার৷ কিন্তু সে পথে গেলেনই না নীতীশ৷ কংগ্রেস সহ-‌সভাপতি রাহুল গান্ধীকে তিনি যে কথা বলে এসেছিলেন, সেই অনুযায়ী নিজেই রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে গেলেন৷ এবং জোটধর্ম মেনে রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার আগে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন লালুপ্রসাদ ও কংগ্রেস নেতা সি পি ‌যোশিকে৷ তবে প্রশ্ন উঠেছে, শেষ পর্যন্ত জোটধর্ম পালন করলেন কি?‌ পদত্যাগ এবং নতুন সঙ্গীর হাত ধরার মধ্যে বড়জোর মেরেকেটে তিন ঘণ্টার ব্যবধান৷ আবার বিজেপিতে ফিরলেন নীতীশ৷ বছর চারেক আগে যাঁদের হাত ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, আবার তাঁদের হাত ধরলেন জনতা দল ইউনাইটেড প্রধান৷ বুধবার রাতেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুশীল কুমার মোদী নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, ‘‌‘‌বিজেপি নীতীশ কুমারকে সরকার গড়তে সমর্থন দেবে৷ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকেও এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷'‌'

এবার উপ-মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বিজেপি নেতা সুশীল মোদী৷ তাদের ১৩ জন বিধায়ক মন্ত্রী হবেন৷ নতুন সমীকরণের ফলে নীতীশের দল, জেডি (‌ইউ)‌ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও ঠাঁই পেতে পারে৷ নীতীশ তাঁর পদত্যাগের কথা সাংবাদিকদের জানানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বললেন, ‘‌‘‌দেশ এবং বিহারের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দুর্নীতির প্রশ্নে পদত্যাগ করায় নীতীশ কুমারকে অনেক, অনেক অভিনন্দন৷'‌'‌ এরপর দ্বিতীয় টুইটে তিনি জানালেন, ‘‌‘‌দেশ, বিশেষ করে বিহারের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক মতভেদের ঊর্ধ্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করতে হবে৷ দেশ এবং সময়ের এটাই দাবি৷''

‘যে ইস্যুতে উনি মোদীর হাত ধরলেন তা নেহাৎই ঠুনকো’

এদিকে টুইট করার দশ মিনিটের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ডাকেন দলের সভাপতি অমিত শাহ ও অন্য নেতাদের৷ বসে বিজেপি বিধায়ক দলের বৈঠক৷ টুইট করে তাঁকে অভিনন্দন জানানোয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি নীতীশ কুমারও৷

‌পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ‌অধীররঞ্জন চৌধুরির মতে, ‘‌‘‌নীতীশের জার্সি বদলের পটভূমি অনেক আগে থেকেই তৈরি হচ্ছিল৷ লালুপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির ইস্যুকে সামনে রেখে নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখার একটা প্রয়াস উনি চালাচ্ছিলেন৷ কিন্তু এবার যে ইস্যুতে উনি মোদীর হাত ধরলেন সেটা নেহাৎই ঠুনকো৷ ধোপে টেকে না৷''

তাহলে বিহারে মহাজোট কি ভেঙেই গেল?‌ হ্যাঁ৷ আপাতত এনডিএ-‌র ঘরে নীতীশের প্রত্যাবর্তন হলো৷ বিহারের দ্বিতীয় বড় দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব বলেছেন, ‘‌‘‌নীতীশের বিরুদ্ধে অতীতে খুনের অভিযোগ ছিল৷ তাই গ্রেপ্তারি এড়াতেই বিজেপিতে যেতে হলো নীতীশকে৷''

‘নীতীশ নিজের মতো করে সরকার চালাতে পারছিলেন না’

‘‌‘‌বিষয়টা একদিনে হয়নি৷ বিজেপি-‌নীতীশের সখ্যতার একটা জমি তৈরি হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই৷ লালুপ্রসাদ ও তাঁর ছেলের কারণে নীতীশ নিজের মতো করে সরকার চালাতে পারছিলেন না৷ বলা যেতে পারে, প্রথম ইনিংসের তুলনায় ওঁর দ্বিতীয় অধ্যায় সাধারণ মানুষের কাছে ততটা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি৷ অন্যদিকে বিজেপি চাইছিল নীতীশকে যে কোনোভাবে যদি পাওয়া যায় তবে, বিহারে তাদের ক্ষমতায় ফেরার পাশাপাশি দেশজুড়ে দলের জয়ধ্বজাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে৷'' এ কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.‌ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী৷

ওদিকে রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নীতীশ বলেন, ‘‌‘‌টানা ২০ মাস ধরে আমি মহাজোটের সরকার চালিয়েছি৷ যতটা সম্ভব জোটধর্ম পালন করেছি৷ বিহারের মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি৷ বিহারে সামাজিক পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি৷ আমি কারও ইস্তফা চাইনি, শুধু দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলাম৷ লালুজির সঙ্গে কথা হয়েছে৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''‌

বিহার বিধানসভায় মোট আসন ২৪৩টি৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে থাকতে হবে ১২২টি আসন৷ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, বর্তমানে জেডিইউ-‌র হাতে ৭১, এনডিএ ৫৮, আরজেডি ৮০, বিজেপি‌ ৫৩, এলজেপি ২, আরএসএসপি ২, এইচএএম ১, কংগ্রেস ২৭ এবং অন্যান্যদের হাতে সাতটি আসন আছে৷

আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল কিছুদিন ধরেই৷ লালুপ্রসাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি কারও অজানা ছিল না৷ তবে মুখে বিজেপি-‌বিরোধিতা করে বিরোধী সিবিরকে ধোঁয়াশায় রেখেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী৷ এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন থেকে বিহারের আরজেডি-‌জেডিইউ-‌কংগ্রেস জোটের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়৷ তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই আরজেডি-র সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন নীতীশ৷ নিজে মুখে না বললেও তেজস্বীর ইস্তফা চেয়ে দলীয় নেতাদের মাধ্যমে বার্তা দিতেন তিনি৷ অনড় আরজেডি কিছুতেই তেজস্বীর ইস্তফা মেনে নিতে পারেনি৷ উলটে নীতিশকে খোঁচা দিয়ে লালু বলে বসেন, ‘‘‌‌ওঁকে আমিই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য