1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের শিবির - ধূসর এক জীবন

৯ মার্চ ২০১১

উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেকে ভাগ্যান্বেষণে পাড়ি দেন জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে৷ কেউ অর্থের টানে কেউ বা নিজ দেশে রাজনৈতিক হয়রানি এড়াতে চান নিরাপদ আশ্রয়৷ তবে সে জীবনও যে খুব সুখের তা বলা যায়না৷

https://p.dw.com/p/10Ve4
এভাবে আর কতদিন?

নিজ দেশে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যারা নির্যাতিত, কিংবা জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার যে সব মানুষ, তাঁরাই রাজনৈতিক আশ্রয় খোঁজেন জার্মানিতে৷ অনেক সময় গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতেও দলে দলে শরণার্থী ইউরোপের দিকে যাত্রা করেন৷ অনেকে দালালের মাধ্যমে শেষ সম্বলটুকু ব্যয় করে বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে এসে পৌঁছান৷ কেউ কেউ প্রাণ হারান পথিমধ্যেই৷ পানিতে ডুবে, অনাহারে, অর্ধাহারে৷ এখন জার্মানিতে বেশির ভাগ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আসছেন ইরাক, তুরস্ক, সার্বিয়া ও কসোভো থেকে৷ সব মিলিয়ে ৩০ হাজারের মত হবে সংখ্যাটা৷ তবে শরণার্থীদের জন্য ইউরোপের দরোজা এখন শক্ত করা হয়েছে৷ আরব বিশ্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে ঝড় উঠেছে, তার হাওয়া এসে পড়ছে এখন ইউরোপেও৷ স্বৈরশাহীর রোষানল এড়াতে দলে দলে শরণার্থী পাশের দেশগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ কেউ কেউ ইউরোপেও পাড়ি দিতে চান৷ কিন্তু জার্মানি সহ ইউরোপের দেশগুলি তাদের দ্বার খুলতে নারাজ৷ জার্মানিতে এলেই যে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য স্বর্গসুখ অপেক্ষা করে তা নয়৷ বরং বেশ কষ্টে সৃষ্টেই জীবন কাটাতে হয় তাদের৷ চলাফেরায় কোনো স্বাধীনতা থাকে না৷ নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যাওয়া নিষেধ৷ আশ্রয় শিবিরের ছোট ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হয় নানা দেশ থেকে আসা মানুষজনদের৷ প্রথম বছর কাজের অনুমতিও দেওয়া হয়না৷ হাত খরচের জন্য সামান্য অর্থ পান তাঁরা৷ এই ধরনের হতাশাগ্রস্ত জীবনে স্বাভাবিকভাবেই সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতা দেখা দেয়৷

Österreich Kosovo Asyl Familie Arigona Zogaj soll ausgewiesen werden
কসোভো থেকে আসা পরিবারগুলো সব দেশেই আশ্রয় চাচ্ছেছবি: picture alliance/dpa

কসোভোর শরণার্থী এনিস – স্বপ্ন ভঙ্গ

হামবুর্গ শহরে শরণার্থীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করে কসোভো থেকে আসা ১৩ বছরের এনিস৷ চার বছর ধরে আছে সে হামবুর্গের শিল্পাঞ্চল বিলস্টিগে৷ ৪৫০ জন শরণার্থী বাস করছেন সেখানে৷ অর্ধেকই অল্পবয়সি৷ বেশির ভাগই এসেছে সাবেক ইউগোস্লাভিয়া ও আফগানিস্তান থেকে৷ এনিস জানায়, ‘‘বাড়িগুলি এখানে ভাল নয়৷ গ্রাফিটি এঁকে নোংরা করে রাখা হয়েছে৷''

নিজস্ব একটি বাড়ির স্বপ্ন দেখে এনিস, যেখানে কোনো গোলমাল থাকবেনা৷৷ শুক্রবারের বিকেলটা অবশ্য কিছুটা শান্ত৷ বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে৷ একঘেয়ে জীবনে মোবাইলটা সবসময় তার কানে৷ বাস আসে ঘন্টায় একবার৷ কাছের শপিং মলের দিকে রওনা হয় সে৷ প্রায় প্রতিদিনই সেখানে যায় এনিস৷ শরণার্থী শিবিরের অন্যান্য ছেলেমেয়েরাও ঘোরাফেরা করে সেখানে৷ এনিস জানায়, ‘‘আগে আমি তাদের সঙ্গে প্রায়ই ঘোরাঘুরি করতাম৷ অনেক অপকর্মও করেছি৷ গত দু এক বছর ধরে ওদের সঙ্গে আর ঘোরাঘুরি করছিনা৷''

Christen Asyl Deutschland Nassem Sohn einer ermordeten irakischen Christi
ইরাক থেকে এসেছে অনেক পরিবার– এরা কতদিন থাকতে পারবে জার্মানিতে?ছবি: DW-TV

মাদক আর নেশার কবলে শরণার্থী

চাইনিজ ফাস্ট ফুড রেস্তোঁরায় বিরাট এক প্লেট নুডলস খেয়ে এক পোশাকের দোকানের সিঁড়িতে বসে বোনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে এনিস৷ পরিবারের মধ্যে ১৭ বছরের বোন ভায়োলেটাই শুধু কাজ করার অনুমতি পেয়েছে৷ এনিস তাকে নিতে আসে৷ সে বলে, ‘‘আমাদের এলাকায় বা বাস স্টপে কেউ যদি তাকে অপমান করে৷ আমি থাকলে সেটা হয় না৷'' বাসটিতে অভিবাসী যাত্রীদেরই দেখা যাচ্ছে বেশি৷ সবাই যাচ্ছেন শরণার্থী আশ্রয় শিবিরের দিকে৷ অন্ধকার হয়ে আসছে, ভায়োলেটার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ৷ বাড়ির দরজায় মাদকের গন্ধ৷ অল্পবয়সিরাও মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ আগুন লাগিয়ে এটা সেটা পুড়িয়ে মজাও পায় তারা৷ তাই পুলিশের আনাগোনা লেগেই থাকে সেখানে৷ এনিস তার নিজের ঘরটা দেখায়, যেখানে সে বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকে৷ সে মনের কথা জানায়, ‘‘আমার নিজস্ব একটা টেবিল পেতে খুব ইচ্ছে হয়৷''

বাসায় কোনো চেয়ার নেই৷ এনিস স্কুলের হোমটাস্ক করে বিছানায় বা সোফায় বসে৷ অবশ্য পড়াশোনায় খুব একটা মনোযোগ নেই তার৷ বাবা প্রায়ই থাকেন না৷ থাকলেও নিজের ঘরে বসে সিগারেট টানেন৷ মা হতাশাগ্রস্ত ভেঙে পড়া এক নারী৷ ১৬ বছর জার্মানিতে থাকার পরও কাজের অনুমতি পাননি৷ এই ভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়ায়৷ তবে বোনের সঙ্গে মাঝে মাঝে গান ধরে এনিস, যা গভীর আঁধারে একটুখানি আলোর ঝলক৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক