যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
সারা বিশ্বেই আজ যোগাসনের কদর৷ পশ্চিমে দেহ-মন চর্চার এক পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে যোগব্যায়াম বা ‘ইয়োগা’৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী স্কুলগুলোয় যোগাভ্যাসকে বাধ্যতামূলক করতে চান৷ আর সেখানেই সমস্যা!
স্বাস্থ্য সুরক্ষার দারুণ উপায়
সুস্থ, সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়ামের তুলনা নেই৷ তাই শিশুদের নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে যোগচর্চা যে সাহায্য করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ তার ওপর মানসিক চাপ কমাতে যোগাসনের তুলনা হয় না৷ ‘ওয়েলনেস আর ফিটনেস’-এর জগতে ‘ইয়োগা’ আজ এক অপরিহার্য অঙ্গ৷ কিন্তু তাই বলে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক যোগশিক্ষা?
বাধ্যতামূলক যোগচর্চা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি চাইছে, যোগচর্চা বা ‘ইয়োগা’-কে ভারতের জাতীয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তুলে ধরার৷ তাই স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রমে যোগব্যায়ামকে বাধ্যতামূলক করতে লবি-ও করা হচ্ছে৷ কিন্তু ভারতের কট্টর মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই এই যোগচর্চার বিরোধী৷
সুপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদ?
যোগাভ্যাসের সময় সাধারণত বেশ কিছু সংস্কৃত শব্দ এবং শ্লোকের ব্যবহার করা হয়৷ সাধনার জন্য ‘ওম’ ধ্বনির প্রচলন সর্বজনসিদ্ধ৷ এছাড়া আসনগুলোর নামেও রয়েছে পৌরাণিক ছোঁয়া৷ তাই স্কুলগুলোয় যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধীদের বক্তব্য স্পষ্ট: এমন কিছু করলে তা ভারতের অ-হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করবে৷
‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’
ভারতের ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, স্কুলের শিশুদের যোগাসন ও সূর্যপ্রণাম করতে বাধ্য করা তাদের ধর্মবিশ্বাসের বিরোধী৷ তাই সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত তাঁরা৷ ওদিকে, যোগশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্য নিয়ে ২১শে জুনকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’ হিসেবে পালন করার পরিকল্পনা করছে সরকার৷
যোগ, তুমি কার?
যোগসাধনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা নয়, পাঠক্রমে ‘সূর্যপ্রণাম’ থাকবে কিনা – তা নিয়ে রাজনীতির ‘টাগ অফ ওয়ার’ চলছে এখন৷ অথচ যোগচর্চাকে কি আজ আদৌ ভারতীয় বলা যায়? বিশ্বজুড়ে এক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাভ্যাস৷ যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দু’কোটি মানুষ যোগব্যায়াম করেন – এর মধ্যে আছেন অগণিত খ্রিষ্টান, মুসলমান, ইহুদি এবং নাস্তিকও৷
সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান
জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. আক্সেল মিশায়েল যোগসাধনার নানা মার্গের সঙ্গে পরিচিত৷ তাঁর কথায়, ‘‘যোগচর্চা আজ যে রূপ নিয়েছে, তা ভারতীয়ও নয়, নয় পশ্চিমেরও৷ এ হলো বহুজাতিক, আন্তঃসাংস্কৃতিক৷ বিভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে এর অবস্থান৷ তাই হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য থেকে যোগসাধনাকে বের করে আনলে চলবে না৷’’
যোগসাধনা করতে হবে স্বেচ্ছায়
হলিউডের এর ‘ওয়েলনেস গুরু’ দীপক চোপরা মনে করেন, যোগ গোটা মানবজাতির উত্তরাধিকার৷ এছাড়া আধুনিক শরীরনির্ভর, পশ্চিমে জনপ্রিয় ‘হঠযোগ’ ১০০ বছরের বেশি প্রাচীন নয়৷ তাই যোগব্যায়াম নিয়ে রাজনীতি নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে এর গুণাগুণ তুলে ধরা প্রয়োজন৷ তবে সেটা গায়ের জোরে নয়, আর আইন করে তো নয়ই৷