যেখানকার মানুষ সবচেয়ে বেশি চা খান
জার্মানির নিম্ন স্যাক্সনি রাজ্যের উপকূল এলাকায় পড়ে ফ্রিজিয়া অঞ্চল৷ চা খাওয়ায় এখানকার মানুষ শুধু জার্মানিতেই নন, সারা বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন৷ সামগ্রিকভাবেই জার্মানদের চা খাওয়ার ধরণ ব্রিটিশদের থেকে আলাদা৷
চা খাওয়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
যে সব দেশে চা খাওয়া হয়, তাদের তালিকায় জার্মানির স্থান ৮৪৷ জার্মানরা গড়ে বছরে ৩০ লিটার চা পান করে থাকেন৷ পূর্ব ফ্রিজিয়ার মানুষেরা কিন্তু গড়ে বছরে ৩০০ লিটার চা খান – যা কিনা একটা বিশ্বরেকর্ড৷ সে তুলনায় ব্রিটেনের বাসিন্দারা বছরে গড়ে ২০০ লিটার চা খেয়ে থাকেন৷
পূর্ব ফ্রিজিয়ার চা
উত্তর সাগরের তীরে অবস্থিত ফ্রিজিয়া অঞ্চলে যেমন শীত, তেমনই বৃষ্টিবাদল৷ কাজেই এ অঞ্চলের মানুষ বোধহয় ঠান্ডা লাগার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যই তাদের নিজস্ব চা তৈরির পদ্ধতি সৃষ্টি করেন৷ প্রধানত আসাম চায়ের পাতা কেতলির গরম জলে ভিজিয়ে, পরে চীনেমাটির কাপে সাদা কিংবা বাদামি মিছরির টুকরো দিয়ে তা পরিবেশন করা হয়৷ পরে একটু ক্রিমও দেওয়া যেতে পারে, তবে চামচ দিয়ে মেশালে চলবে না!
চায়ের সঙ্গে ওয়াফেল কেক
রবিবার বিকেলে কফির সঙ্গে কেক নিয়ে বসে গল্পগুজবের প্রথা জার্মানিতে অনেকদিনের৷ তবে সেখানে এক পট গরম চা আর ওয়াফেল কেক থাকলেও আশ্চর্য হবেন না৷ প্রথমত, বিশ্বে চা হল নাম্বার ওয়ান পানীয়৷ দ্বিতীয়ত, পূর্ব ফ্রিজিয়ায় অন্তত তিন কাপের কম চা খেয়ে উঠলে গৃহস্বামী গোঁসা করতে পারেন৷
টি-টেস্টিং ছাড়া চায়ের কোম্পানি চলে না
জার্মান চা সমিতির মূল অফিস হামবুর্গে৷ সমিতি প্রতিবছর একটি টি টেস্টার্স প্যানেলের আয়োজন করে৷ চা চাখার বিশেষজ্ঞদের সামনে নানা কোম্পানির নানা ধরণের চা রাখা হয় – তবে লেবেল ছাড়াই৷ সেই সব চা খেয়ে বিশেষজ্ঞরা বলবেন, চায়ের লেবেলে ঐ চায়ের উৎপত্তি বা মান সম্পর্কে যে খোঁজখবর দেওয়া হয়েছে, তা কতোটা বিশ্বাসযোগ্য৷ ব্যুনটিং কোম্পানির চা মিউজিয়ামে আনাড়িরাও চা পরখ করতে পারেন৷
খোলা চা, নাকি টি ব্যাগ?
চা এমনিতেই বিশ্বর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়; ২০১৬ সালে তা চরমেপৌঁছয়: একা জার্মানিতেই ১৯,২২০ মেট্রিক টন চা বিক্রি হয়৷ জার্মান চা সমিতির খবর অনুযায়ী জার্মানরা ক্রমেই আরো বেশি করে সবুজ চায়ের দিকে ঝুঁকছেন – প্রতি তিন কাপ ব্ল্যাক টি-র জন্য জার্মানরা চার কাপ গ্রিন টি পান করছেন৷ ওদিকে জার্মানদের ৬০ ভাগ এখনও টি ব্যাগের চেয়ে খোলা পাতার চা-ই বেশি পছন্দ করেন৷
চায়ে ক্রিম? তওবা, তওবা!
ব্রিটেনের মানুষজন তাদের চা আর স্কোন্স নিয়ে যতই আহ্লাদ করুন না কেন, জার্মানিতে চায়ে ক্রিম দেওয়ার কথা অধিকাংশ জার্মান ভাবতেই পারেন না৷ তার চেয়ে বরং কাপের তলায় এক টুকরো মিছরি...৷
চা, নাকি ইনফিউজান?
এ কনফিউজান ঘোচবার নয়৷ ইনফিউজ করার অর্থ আসিক্ত করা, মানে ভেজানো৷ কাজেই পেপারমিন্টের পাতা কিংবা আদার টুকরো গরম জলে ভেজালে কি তাকে ‘টি’, মানে চা বলা চলবে – নাকি ইনফিউজান বলা উচিত? ফ্রুট টি বা ফলের চা, হার্বাল টি বা জড়িবুটির চা – এ সবের কোনোটাই চা নয় বলে রায় দিয়েছে জার্মান চা সমিতি, কেননা কালো বা সবুজ চায়ের পাতা ছাড়া চা হয় না৷ তবে সাধারণ মানুষ অত বাছবিচার করে না৷
হার্বাল টি-র বাজার রমরমা
যান্ত্রিক সভ্যতা আর ডিজিটাল সংস্কৃতির ধাক্কায় জার্মানরা যতই প্রকৃতি ও পরিবেশপ্রেমী হচ্ছেন, ততই হার্বাল টি বাজার মাত করছে৷ জড়িবুটি ভিজিয়ে তৈরি এই সব ‘চা’ আগে তাদের মূল উপাদানের নামেই চলত – যেমন দারুচিনি চা৷ হালে কিন্তু প্যাকেটের ওপর লেখা থাকছে হজমের চা, লিভার থেকে বিষ তাড়ানোর চা, প্রসবের পর চা, এমনকি ঘুমনোর চা৷ গুড নাইট৷