1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুদ্ধাপরাধী দুকের ৩৫ বছর সাজা

২৬ জুলাই ২০১০

খেমের রুজ নেতা দুককে ৩৫ বছর সাজা দিয়েছে কম্বোডিয়ার যুদ্ধাপরাধ আদালত৷ তবে আদালতের রায়ে সন্তষ্ট হতে পারেনি খেমের রুজ শাসনকালে নির্যাতিতরা৷ দুককে জেল খাটতে হবে ১৯ বছর৷ কারণ, ১৬ বছর ধরে তিনি কারাগারেই রয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/OUwk
খেমের রুজ নেতা দুকছবি: AP

নাম কাইং গুয়েক ইয়াভ হলেও তিনি দুক নামেই পরিচিত৷ আর ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক৷ দুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ বলে শেষ করার নয়৷ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ অনেকে অভিযোগ৷ খেমের রুজ বা খমের রুজ শাসনামলে তুওল স্লেং কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন দুক৷ আর শুধু সেখানেই হত্যা করা হয় ১৪ হাজার মানুষকে৷ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অবশ্য সব অপরাধ স্বীকার করেছেন দুক৷ তবে পুরোপুরি দায় নিতে চাননি৷ দাবি করেছেন, তিনি যা করেছেন, সব ওপরের নির্দেশেই৷ যদিও কম্বোডিয়ার জনগণ তা বিশ্বাস করেনি৷ আর জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত আদালতও তা পুরোপুরি আমলে নেয়নি৷ তাই সাজা হয়েছে৷ আজ রায়ের সময় অবশ্য নিস্পৃহ দেখাচ্ছিলো ৬৭ বছর বয়সি খেমের রুজ কারাপ্রধানকে৷ আর নির্যাতিত অনেকেরই স্বজন ভেঙে পড়ে কান্নায়৷

চরমপন্থি কমিউনিস্ট গোষ্ঠী খেমের রুজ শাসনামলে অন্তত ১৭ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়৷ তিন যুগ আগের সেই নির্যাতনের স্মৃতি এখনো তাড়া করে ফেরে অনেককে৷ তাই দুকের ৩৫ বছর কারাদণ্ডের আদেশে অনেকেরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো৷ তারা কমপক্ষে যাবজ্জীবন সাজা দাবি করে আসছিলো৷ থিয়েরি সেং নামে একজন বললেন, ‘‘১৪ হাজার লোককে হত্যার জন্য মাত্র ১৯ বছর সাজা খাটতে হবে৷ তার মানে হলো, প্রতিটি হত্যকাণ্ডের জন্য ১১ ঘণ্টা কারাবাস! ন্যায়বিচারের নামে এ এক নির্মম রসিকতা৷''

NO FLASH Duch Gericht
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দুকছবি: AP

আইনজীবী থিয়েরি সেংয়ের অনেক স্বজনকে কারাগারে নির্যাতন সইতে হয়েছিল৷ রায়ের পর তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিলো এমন, ‘‘এটা মেনে নেওয়া যায় না৷ তাকে এক মুহূর্তের জন্যও কারাগারের বাইরে থাকতে দেওয়া যায় না৷'' ভয়াল সেই কারাগারে থেকেও বেঁচে যাওয় চুম মে বললেন, ‘‘এই রায় আমাকে খুশি করতে পারেনি৷ আমাদের অশ্রু এখনো শুকায়নি৷ তিন যুগ আগে ঝরেছিল প্রবল ধারায়৷ এখন আবার সে রকম শুরু হলো৷'' রায়ে অবশ্য বলা হয়েছে, অনুতাপ আর আদালতের কার্যক্রমে সহযোগিতা করায় দুককে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়নি৷

ক্যাম্বোডিয়ার যুদ্ধাপরাধ আদালতে এটাই প্রথম রায়৷ এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পাঁচ বছর আগে৷ এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় আট কোটি ডলার৷ যা বিদেশি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে৷ প্রথম ধাপে দুকসহ পাঁচজনের বিচার হচ্ছে পাঁচ বিচারক নিয়ে গঠিত আদালতে৷

খেমের নেতা দুক শিক্ষক ছিলেন, স্কুলে গণিত পড়াতেন৷ শিক্ষক হিসেব তার সুনাম ছিল৷ বলা হয়, ধীরস্থির প্রকৃতির দুক পরে হত্যার নির্দেশও দিতেন ঠান্ডা মাথায়৷ খেমের রুজ শাসন বসানের পর দুক পালিয়ে যান৷ শোনা যায়, ৮০ এর দশকে রেডিও চায়নায় কাজ করছিলেন তিনি৷ কিছুদিন বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকতাও করেন৷ এরপর এক যুগ আগে নাম ভাঁড়িয়ে দেশে ঢোকেন তিনি৷ খ্রিষ্টান একটি দাতব্য সংস্থায় কাজ করছিলেন দুক, কম্বোডিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে৷ ১৯৯৯ সালে আইরিশ এক সাংবাদিক দুকের পরিচয় ফাঁস করেন৷ এরপরই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ এখন তাকে ১৯ বছর জেল খাটতে হবে৷ তবে থিয়েরি সেং বলেন, ‘‘তার যে অপরাধ, তাতে অনেকবার যাবজ্জীবন সাজা দিলেও সাজা সম্পূর্ণ হয় না৷''

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক