যুদ্ধক্লান্ত ইরাকিরা এখন যুক্তরাষ্ট্র পানে
৬ আগস্ট ২০১০আহমেদ আর এক মুহূর্ত থাকতে চাইছেন না ইরাকে৷ পারলে এখনি বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে ফেলেন৷ মৃত্যুভয় তাড়া করে ফিরছে তাঁকে৷ আহমেদের মতো এখন অনেক ইরাকি দেশ ছেড়ে যেতে চাইছেন৷ একে পালানোও বলা যায়৷ কিন্তু কী করা! পশ্চিমা একটি সংবাদ মাধ্যমের হয়ে কাজ করেন আহমেদ৷ এই জন্য তাঁকে সন্তানসহ মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷ আর এই রকম আতঙ্ক আছেন অনেকে৷ মুক্তির উপায় হিসেবে শরণার্থী হয়ে অ্যামেরিকায় আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা৷
আহমেদ বলেন, ‘‘চরমপন্থীরা আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছে, যদি আমি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানের চাকরি না ছাড়ি, তাহলে আমার রেহাই নেই৷'' দুই মেয়ে আর একটি ছেলের জনক আহমেদ প্রচণ্ড ভয়ে আছেন এখন৷ তাঁদের দুর্ভোগের শুরুটা হয় ২০৩ সালে৷ সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে- এই কথা বলে সে বছরই শুরু হয় অভিযান৷ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এতে শামিল হয় পশ্চিমা বিশ্ব৷ সাদ্দামকে উৎখাত করা হয়েছে, তবে সঙ্কটের অবসান হয়নি৷ আর গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অস্তিত্ব ছিলো, এমন প্রমাণও হাজির করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র৷
২০০৩ সালে শুরুর পর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের অবসান হয়েছে ঠিক, তবে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর সহিংসতা কমেনি একটুও৷ এমন কোনো দিন যাচ্ছে না, যেদিন ইরাকে বোমার বিস্ফোরণে কিংবা বন্দুকধারীর গুলিতে কেউ মারা যায়নি৷ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ঘরছাড়া প্রায় পাঁচ লাখ ইরাকি৷ তাঁদের সবাই যে বিদেশে, তা নয়৷ অনেকে জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত শরণার্থী শিবিরেও আছেন অনেকে৷ একটা অংশ দেশেই নেই৷ পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের কোনো দেশে৷ আহমেদও ২০০৭ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে৷ এক বছর থেকে পুনরায় দেশে ফেরেন তিনি৷ মনে করেছিলেন, সব কিছু বুঝি ঠিক হয়ে গেছে৷ কিন্তু ফিরেই স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁর৷ এখন মনে হয়, ভুল করেছেন৷
প্রবাসে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ বেশিরভাগ ইরাকির৷ তবে সে প্রার্থী অনেক৷ তাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি পারলে কাছের সিরিয়া কিংবা লেবাননে যেতে পারলেও বর্তে যান৷ বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা মার্ক স্টোরেলা বলেন, ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ইরাকির সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার৷ পরের বছর এই সংখ্যা ৫ হাজার বেড়ে যায়৷ ভিসা চেয়ে বসে আছেন অনেকে৷ তাই যাওয়ার অনুমিত পেতে অনেক সময় লাগে৷ তবুও আশা ছাড়ছেন না অনেকে৷ যুক্তরাষ্ট্রে স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে না সত্য, তবে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আতঙ্ক তো কাটবে৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন