1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুক্তরাষ্ট্রে রোগীর চেয়ে অর্থ বড়!

১ ফেব্রুয়ারি ২০১১

‘স্টেম সেল’ নিয়ে গবেষণা করছে বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানি৷ তারা সফল হলে একজন অন্ধ তার চোখে আলো ফিরে পেতে পারে৷ কিন্তু একটা বিষয় এসব গবেষণায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে৷ আর সেটা হচ্ছে অর্থ, মানে টাকা৷

https://p.dw.com/p/108Cb
স্টেম সেলছবি: AP

মার্কিন কোম্পানি ‘অ্যাডভান্সড সেল টেকনোলজি' বা এসিটি৷ সেখানে কাজ করেন বব লানজা৷ তিনি ঐ কোম্পানির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা৷ স্টেম সেল নিয়ে কাজ করছেন বহু বছর ধরে৷ মূলত ডায়াবেটিস রোগ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সেটা ছিল তার গবেষণার বিষয়৷

তবে প্রথমেই মানুষকে তার গবেষণার ‘গিনিপিগ' বানান নি তিনি৷ শুরুটা করেছিলেন পশু দিয়ে৷ এরপর তাঁর ইচ্ছা ছিল, মানুষের উপর তিনি গবেষণাটি চালাবেন৷ অর্থাৎ মানুষকে ডায়াবেটিসের যন্ত্রণা থেকে কীভাবে মুক্তি দেয়া যায় সেই পথ বের করবেন৷

China Menschenrechtler Chen Guangcheng
স্টেম সেল গবেষণা অন্ধের চোখে আলো ফিরিয়ে আনতে পারেছবি: AP

কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ ডায়াবেটিস নিরাময়ে স্টেম সেলের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করার অধিকার নেই তাঁর কোম্পানির৷ এই অধিকার আছে অন্য আরেকটি কোম্পানির৷ যার নাম জেরোন কর্পোরেশন৷ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস বা মেধাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে এই গবেষণা করার ‘পেটেন্ট' লাভ করেছে মার্কিন ঐ কোম্পানিটি৷ তাই অন্য কোনো কোম্পানি চাইলেও ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণা করতে পারবে না৷

তাই ভীষণ চটেছেন বব লানজা৷ কারণ চাইলেও তিনি তাঁর এতদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারছেন না৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে অনেক বিজ্ঞানীই শুধুমাত্র অন্য কোম্পানিতে কাজ করেন বলে, নিজের ইচ্ছেমত বিষয়ে গবেষণা করতে পারছেন না৷ অর্থাৎ একজন যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, তিনি সে বিষয়ে গবেষণা করতে পারছেন না৷ ফলে গবেষণার অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বব লানজা তো সরাসরি বলেই ফেলেছেন, কোম্পানিগুলোর এমন আচরণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগীরা৷

কিন্তু কেন কোম্পানিগুলো আগে ভাগেই পেটেন্ট নিয়ে রাখতে চায়? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, বিপুল অর্থের হাতছানি৷ কারণ সত্যিই যদি একদিন স্টেম সেল দিয়ে ডায়াবেটিস নিরাময় সম্ভব হয়, তাহলে অনন্তকাল ধরে সেটার সুফল ভোগ করবে জেরোন কর্পোরেশন৷ কারণ এই গবেষণার পেটেন্ট একমাত্র তাদের৷ সঙ্গে, সুনাম তো রয়েছেই৷

স্টেম সেল কী?

এটা এমন একটা সেল বা কোষ, যা দিয়ে অন্য সেল তৈরি করা যায়৷ তাই বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে স্টেম সেলকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা৷

ধরুন কারো ‘টাইপ ওয়ান' ডায়বেটিস হয়েছে৷ এর মানে তার বেটা সেল নষ্ট হয়ে গেছে৷ এখন যদি সেই নষ্ট বেটা সেলের জায়গায় স্টেম সেল বসিয়ে দেয়া যায় তাহলে ঐ স্টেম সেল নতুন করে বেটা সেল তৈরি করতে পারবে৷ ফলে ডায়াবেটিস ভাল হয়ে যেতে পারে৷ তেমনিভাবে কারো যদি মস্তিষ্কের অসুখ হয়, তার অর্থ মস্তিষ্কের কোন সেল নষ্ট হয়ে যাওয়া৷ এই অবস্থায় স্টেম সেল দিয়ে মাথার অসুখ সারিয়ে তোলা সম্ভব৷

স্টেম সেলের এই গুণের কারণে বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো স্টেম সেল নিয়ে গবেষণায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে৷ তাদের আশা, গবেষণা সফল হলে সেটা থেকে বিপুল অর্থ ফেরত আসবে৷ তবে গবেষণাটা যে কোনো একটা নির্দিষ্ট কোম্পানি করেছে, সেটার প্রমাণ হচ্ছে পেটেন্ট থাকা৷ তাই তো গবেষণা শেষ হওয়ার আগেই কোম্পানিগুলোর মধ্যে কে আগে পেটেন্ট নিতে পারবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে৷

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েল – এসব দেশে স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা চলছে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন