ম্যুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়
৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ম্যুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো নাম ভেস্টফেলিশে ভিলহেল্মস ইউনিভার্সিটি ম্যুনস্টার৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে এসেছেন ভারতের ছাত্রী শোওয়া নাকভি৷ তিনি ডিএএডি থেকে বৃত্তি পেয়েছেন জার্মানিতে পিএইচডি করার জন্য৷ তিনি সাড়ে তিন বছর থাকবেন জার্মানিতে৷ তাঁর গবেষণার বিষয় জৈব রসায়ন৷ ভারতে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেছেন৷ শোওয়া নাকভি তাঁর পিএইচডি প্রোগ্রাম সম্পর্কে বললেন, ‘‘পিএইচডি প্রোগ্রামটি আমাকে এবং আমার গবেষণাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ যদি অন্যান্য দেশ অর্থাৎ অ্যামেরিকা বা ব্রিটেনের সঙ্গে তুলনা করা হয় – তাহলে দেখা যাবে সেখানে পিএইচডি করতে পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত সময় লাগে৷ সেই তুলনায় জার্মানিতে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই ডক্টরেট ডিগ্রী হাতে পাওয়া যাচ্ছে৷ এটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক৷ এখানে গবেষণার সুযোগ সুবিধাও অনেক বেশি৷ জার্মানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শীর্ষে, সেটা আমরা সবাই জানি৷''
ম্যুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০টি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন এবং মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে৷ এই ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫৬৫ জন অধ্যাপক৷ ম্যুনস্টার ইউনিভার্সিটিতে গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের জন্যও সরাসরি আবেদন করা যেতে পারে৷ আপনারা সরাসরি ইউনিভার্সিটির ওয়েব সাইট থেকে নিজের পছন্দমত বিষয়টি বেছে নিতে পারেন৷
প্রশ্ন, কেন জার্মানি? ভাষাগত দিক থেকে অ্যামেরিকা বা ব্রিটেনে পড়াশোনা অনেক সহজ হত৷ তারপরেও কেন জার্মানিকে বেছে নেওয়া যেতে পারে? শোওয়া নাকভির মতে, ‘‘জার্মানিকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ হল, গবেষণার জন্য আমি কোন অবস্থাতেই পাঁচ বা ৭ বছর সময় দিতে রাজি না৷ আমি দ্রুত এবং গভীর মনোযোগের সঙ্গেই আমার ডক্টরেট শেষ করতে চাই৷ এই সুযোগ জার্মানি আমাকে দিয়েছে, সেই সঙ্গে বৃত্তি৷ আমাকে নিজের টাকা পয়সা খরচ করতে হচ্ছে না৷ অন্য কোন দেশ হলে সাড়ে তিন বছরে আমি পিএইচডি শেষ করতে পারতাম না৷ আমার পোস্ট ডক্টরেট করার ইচ্ছে রয়েছে, সেটাও অনেক পিছিয়ে যেত৷''
জার্মানিতে পড়ার জন্য জার্মান ভাষা শেখা অত্যন্ত জরুরি৷ কোর্স ইংরেজিতে পরিচালিত হোক বা না হোক, তাতে কিছু এসে যায় না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পত্র পাঠানোর সময় জার্মান ভাষা কিছুটা জানা থাকতেই হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে, কোন কোর্সের জন্য জার্মান ভাষায় কতটা দক্ষতা থাকা প্রয়োজন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত পূরণ করা না হলে আবেদন পত্র গ্রহণ করা হবে না৷
জার্মানি দেশটি কেমন? জার্মানির ভাললাগা-মন্দলাগা প্রসঙ্গে শোওয়ার মন্তব্য, ‘‘জার্মানি পড়াশোনা এবং গবেষণার জন্য বেশ ভালো জায়গা৷ একদিন আমি রাস্তায় হারিয়ে গিয়েছিলাম৷ বাড়ি ফিরতে পারিনি৷ তখন বেশ কিছু জার্মান আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে৷ তারা আমাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেয়৷ জার্মানরা খুব বন্ধুত্বসুলভ৷ এখানে আমার দারুণ সময় কাটছে৷''
শোওয়া অবিবাহিতা৷ পরিবারের কাছ থেকে কোন ধরণের সাহায্য এবং সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন? সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘‘আমার বাবা-মা খুব খুশি হয়েছিলেন জার্মানিতে পিএইচডির কথা শুনে৷ আমার মা নিজেও জৈব রসায়ন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ তিনি অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত৷ আমার বাবাও অধ্যাপক৷ তাঁরা সবসময়ই চাইতেন আমি গবেষণা করি, এগিয়ে যাই, ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করি৷ যখন আমি তাদের জানালাম যে, আমি জার্মানিতে বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছি – আমার বাবা-মা সত্যিই ভীষণ খুশি হয়েছেন৷ হ্যাঁ, আমি এখনো অবিবাহিতা৷ বিয়ের চাপ রয়েছে৷ এ নিয়ে তাঁরা কিছুটা চিন্তিত৷ কিন্তু আমাকে জার্মানিতে আসতে তাঁরা বাধা দেননি৷''
পিএইচডি শেষ করার পর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? শোওয়া জানান, তিনি অবশ্যই পোস্ট ডক্টরেট করতে চান৷ তবে সেটা কোথায় করবেন এখনো জানেন না ৷ কোথায় ভাল সুযোগ পাওয়া যাবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না – হতে পারে ভারতে অথবা ইউরোপেরই কোনো দেশে ৷ তবে পোস্ট ডক্টরেট তিনি করবেনই এবং বিখ্যাত কোন ল্যাবে যোগ দেবেন গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন