1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মেল্টডাউন’ কী?

২২ মার্চ ২০১১

গত কদিন ধরে একটা শব্দ কানে বেশ বাজছে৷ ‘মেল্টডাউন’৷ জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রে মেল্টডাউন হবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববাসী৷ কিন্তু কী এই মেল্টডাউন, কীভাবে হয় এটি?

https://p.dw.com/p/10evt
ছবি: AP

চেরনোবিল দুর্ঘটনা

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল৷ স্থান - ইউক্রেনের চেরনোবিলে অবস্থিত একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র৷ সময় - রাত ১ টা ২৩ মিনিট৷ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চার নম্বর চুল্লিতে হঠাৎ বিস্ফোরণ৷ সঙ্গে সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে আশেপাশে৷ ধীরে ধীরে সেটা ছড়িয়ে পড়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে৷ এই ঘটনায় মারা যায় প্রায় ৫০ জন৷ তবে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিহতের সংখ্যা প্রায় চার হাজার বলে জানানো হয়েছে৷ এছাড়া তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়ে অনেকে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগে ভুগেছেন৷ আর শিশুরা হয়েছে লিউকেমিয়ার শিকার৷ এছাড়া অনেক শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিয়েছে বা এখনো নিচ্ছে৷ সব মিলিয়ে চেরনোবিল দুর্ঘটনাকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিপর্যয় বা মেল্টডাউন বলে ধরা হয়৷ অর্থাৎ কোনো কারণে পরমাণু কেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটে চারিদিকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকেই মেল্টডাউন বলা হয়ে থাকে৷

চেরনোবিল ঘটনার পর প্রায় ২৫ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে৷ এরই মধ্যে সেই একই ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জাপানের ফুকুশিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে৷

মেল্টডাউন কীভাবে হয়?

পরমাণু কেন্দ্রে যে প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তাকে বলে ‘নিউক্লিয়ার ফিশন'৷ এই প্রক্রিয়ায় চুল্লিতে থাকা ‘রড' প্রথমে উত্তপ্ত হয়৷ এই রডগুলো সাধারণত ইউরেনিয়ামের হয়ে থাকে৷ উত্তপ্ত রড থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি নির্গত হয়৷ যেটা চুল্লিতে থাকা পানিকে ফুটিয়ে বাষ্পে পরিণত করে৷ এই বাষ্পই টারবাইনকে ঘোরানোর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়৷

Fukushima 2011 NO FLASH
ছবি: AP

ইউরেনিয়াম রডগুলোর মাঝে থাকে এক ধরণের ‘নিয়ন্ত্রক রড'৷ যেগুলো পানিতে ভাসতে থাকা নিউট্রন শুষে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে৷ এই নিয়ন্ত্রক রড চালু করলে নিউক্লিয়ার ফিশন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে চুল্লিটি আস্তে আস্তে শীতল হতে থাকে৷

জটিল এই প্রক্রিয়ার সময় কোনো কারণে যদি নিয়ন্ত্রক রড কাজ না করে তাহলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে৷ এক পর্যায়ে সেটা এমন হয় যে, বিস্ফোরণ ঘটে তেজস্ক্রিয় পদার্থ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে৷

বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন

জাপানের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে৷ সেই ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও৷ কারণ কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশও একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক হতে যাচ্ছে৷ যার নাম ‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র'৷ পাবনা জেলার রূপপুরে স্থাপিত হবে এটি৷ রাশিয়া এতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে৷ এ ব্যাপারে গত বছর একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে৷

রূপপুর কেন্দ্রে থাকবে দুটি চুল্লি৷ প্রতিটি চুল্লি থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে৷ জানা গেছে, আগামী বছরই প্রথম চুল্লিটি তৈরির কাজ শুরু হবে৷ আর আশা করা হচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে৷

কিন্তু এই কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে৷ এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর বলেছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এমনভাবে তৈরি করা হবে যেন সেটা ১০ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকে৷ বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান'ও এমন আশার বাণীই শুনিয়েছেন৷

এছাড়া প্রকল্প পরিচালক ড. আকবর বলেন ভূমিকম্প নয়, বরং সুনামির কারণেই জাপানের ফুকুশিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্ঘটনায় পড়েছে৷ রূপপুর কেন্দ্রটির সুনামি সহ্য করার মত ক্ষমতাও থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷

আরেকটি বিষয় রূপপুর প্রকল্প নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি করছে৷ সেটা হচ্ছে পদ্মা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া৷ ফলে চুল্লি উত্তপ্ত হয়ে গেলে সেটা শীতল করতে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাবে না বলে অনেকের আশঙ্কা৷ এ প্রসঙ্গে ড. আকবর বলেন, এই সমস্যা দূর করতে কেন্দ্রে একটি ‘কুলিং টাওয়ার' বসানো হবে৷ প্রয়োজন হলে সেটা নিজে নিজেই চুল্লি ঠান্ডা করার কাজ করতে পারবে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই