স্বজাতিকে হত্যা
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩
সাধারণত পুরুষ মাকড়সা নয়, নারী মাকড়সাটিই দেহমিলনের পর পুরুষটিকে হত্যা করে খেয়ে ফেলে৷ এতে স্বাভাবিকভাবেই, নিজ প্রজাতির কোনো প্রাণী বা পতঙ্গকে খেয়ে ফেলায় সে প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়৷
তবে সম্প্রতি একটি গবেষণা করে সকলকে চমকে দিয়েছেন চেক গবেষকরা৷ তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, পুরুষ মাকড়সাগুলোও স্ত্রীদের হত্যা করে, তবে কোনো যৌনউদ্দীপনা ছাড়াই৷
বেশ কয়েক বছর আগে গবেষণাটা শুরু হয়েছিল৷ চেক প্রজাতন্ত্রের মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক স্ট্যানো পেকারের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি করেন তাঁর সাবেক শিক্ষার্থী লেনকা সেনটেনস্কা৷
অস্ট্রিয়া এবং ইটালির মোরাভিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে মিকারিয়া সোশ্যিয়াবিলিস বৈজ্ঞানিক নামের কালো আর বাদামি রঙের একটি বিরল প্রজাতির ক্ষুদ্র মাকড়সার দেখা পেয়েছিলেন লেনকা৷
প্রায় একশ বছর আগে মিকারিয়া সোশ্যিয়াবিলিসদের প্রথম খুঁজে পেয়েছিলেন হাঙ্গেরির এক প্রাণীবিদ৷ কিন্তু তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া কখনো দেখার সুযোগ তাঁর হয়নি৷
তাই অধ্যাপক লেনকাকে জোর করেছিলেন ঐ অঞ্চলে গিয়ে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালাতে৷ লেনকা তাই করেছেন৷ বেশ কিছু পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন কিভাবে মিকারিয়া সোশ্যিয়াবিলিস প্রজাতির মাকড়সাগুলো মিলিত হয়, কিভাবে খাবার গ্রহণ করে ইত্যাদি৷ হঠাৎ একদিন লেনকা তাঁর শিক্ষককে বললেন, পুরুষ মাকড়সাগুলো স্ত্রীদের খাচ্ছে৷
স্ত্রীরাই পুরুষদের ভক্ষণ করবে
অধ্যাপক বললেন, এটা একেবারেই অসম্ভব৷ মাকড়সার ক্ষেত্রে এটা হওয়ার কথা নয়, কেননা স্ত্রী মাকড়সাগুলোই পুরুষদের ভক্ষণ করবে এটাই নিয়ম৷ তাই বারবার তিনি তাঁর ছাত্রকে পর্যবেক্ষণ করতে বলেন এবং তারপরেও কিন্তু সব পরীক্ষায় একই ফল দেখা যায়৷ পরে এই গবেষণাটি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল বিহেভিয়েরাল ইকোলজি অ্যান্ড সোশ্যিওবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছিল৷
মিলন, মৃত্যু আর স্বজাতি ভক্ষণ
লেনকা সেনটেনস্কা জানালেন, সেক্সচুয়াল ক্যানিবালিজম পরিস্থিতিতে সাধারণত স্ত্রী মাকড়সা পুরুষগুলোকে হত্যা করে তাদের খেয়ে ফেলে৷ বলা হয়ে থাকে, যৌনদ্বন্দ্বের কারণে এটা হয়, কেননা পুরুষ মাকড়সা অনেক শুক্রাণু উৎপাদন করে, সে তুলনায় স্ত্রী মাকড়সার ডিম্বাণুর পরিমাণ নগন্য৷ তাই যৌনমিলনের ক্ষেত্রে স্ত্রী মাকড়সাদের ক্ষমতা কিছুটা কম হওয়ার কারণে দ্বন্দ্ব শুরু হয়৷ স্ত্রী মাকড়সারা তখন আরো বেশি করে যৌনমিলনের চেষ্টা করে৷
এক্ষেত্রে ব্ল্যাক উইডোরা আরো ধূর্ত৷ তারা কেবল পুরুষদের হত্যা করে খায়ই না, বরং মিলনের সময়ই তাদের হত্যা করে, এবং তারপর খায়৷ পুরুষগুলো তখন এমন আচরণ করে যাতে স্ত্রীরা তাদের আক্রমণ করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে মিলিত হয়ে বেশি বেশি শুক্রাণু উৎপাদন করা যায় এবং এর ফলে বেশি ডিম্বাণুও নিষিক্ত হতে পারে৷
কোন ক্ষেত্রে ভিন্নতা?
কিন্তু বিজ্ঞানীদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, কী কারণে মিকারিয়া সোশ্যিয়াবিলিস প্রজাতির নারী মাকড়সাদের সঙ্গে মিলিত না হয়ে পুরুষরা তাদের হত্যা করে এবং খেয়ে ফেলে৷ গবেষণায় দেখা যায়, তাদের এ মিলন সাধারণত গ্রীষ্মকালে হয়, যখন মাঠে তরুণ পুরুষ এবং বৃদ্ধা স্ত্রী মাকড়সাদের আনাগোনা বেড়ে যায়৷ এ সময় অন্তত ৭০ ভাগ মাকড়সার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হত্যা এবং স্বজাতি ভক্ষণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়৷ দেখা যায়, হত্যার জন্য স্ত্রী মাকড়সাটিকেই বেছে নিচ্ছে তরুণটি৷ পুরুষ মাকড়সাদের ক্ষেত্রে যৌন মিলনের সময় ভক্ষণ আসলেই বিরল৷ তবে পুরুষদের স্বজাতি ভক্ষণের বিষয়টি কেবল মিকারিয়া সোশ্যিয়াবিলিস এবং অন্য আর একটি প্রজাতির মধ্যে দেখা যায়৷
তবে অধ্যাপক পেকার জানান, এ বিষয়ে আরো অনেক প্রশ্ন সবার মনে দেখা দিয়েছে এবং সেগুলোর জবাব জানতে আরো গবেষণা প্রয়োজন৷ কারণ, মাকড়সার ৪৩ হাজার প্রজাতির মধ্যে মাত্র ৭০০ প্রজাতির মিলিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷