মিউনিখের বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০মিউনিখের বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী এবং সরাকারি কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরও পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে৷
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন প্রায় চার হাজার ছাত্র-ছাত্রী৷ এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩৫০ জন ছাত্রী, যাঁদের মাত্র ৫০ জন স্কুল-কলেজ শেষ করে এসেছেন৷ আর রয়েছে ১৫০ জন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী৷ বাকিরা সবাই একসময় সেনাবাহিনীতেই নিযুক্ত ছিলেন৷ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন যে কোন বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী লাভ করতে সময় লাগে চার বছর, তখন বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগে মাত্র তিন বছর তিন মাস৷
ভারতের ছাত্র মহমোনহন গোয়েল৷ তিনি ভোপালে কাজ করছেন৷ ভোপালের ‘অ্যাডভান্স ম্যাটেরিয়াল্স অ্যান্ড প্রসেস রিসার্চ ইন্সটিটিউট'-এ তিনি কর্মরত৷ এছাড়া, ‘ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি' দিল্লিতে তিনি পিএইচডি-র এক্সটার্নাল ক্যান্ডিডেট৷ জার্মানিতে আসা, আসার আগে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম তখন আমি ডিএএডি-র বৃত্তি সম্পর্কে জানতে পারি৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তা জানি৷ তখন থেকেই আমি খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি৷ সেখানে প্রার্থীর কী কী কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন, তা উল্লেখ করা ছিল৷ সে অনুযায়ী আমি আমার কাগজপত্র গুছিয়েছি৷ আমি সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত থাকায় কাগজপত্র গোছাতে সমস্যা হয়নি৷ এরপর আমি আমার প্রপোজাল তৈরি করে পাঠিয়ে দেই৷ তবে তার আগে, একজন জার্মান প্রফেসরের সঙ্গে প্রপোজাল তৈরি নিয়ে দীর্ঘদিন কথা বলতে হয়েছিল আমায়৷ ঠিক কোন ধরণের গবেষণা আমি করবো, তা আমাকে বিশদভাবে জানাতে হয়েছিল তাঁকে৷''
মহমোহন গোয়েল জার্মানিতে স্যান্ডউইচ মডেল প্রোগ্রামে পিএইচডি করতে এসেছেন৷ স্যান্ডউইচ মডেল প্রোগ্রাম হচ্ছে পিএইচডি-র একটি প্রোগ্রাম৷ এর প্রথম শর্ত হল প্রার্থীকে অবশ্যই নিজ দেশে পিএইচডি শুরু করতে হবে৷ পিএইচডি-র একটি অংশ জার্মানিতে সম্পন্ন করার জন্য ডিএএডি বৃত্তি দিয়ে থাকে৷ সেটা ৬ মাসও হতে পারে, আবার এক বছরও হতে পারে৷ জার্মানির কোন একটি গবেষণাগারে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞ কোন প্রফেসরের অধীনে কিছুদিন কাজ করা বা গবেষণার সুযোগ দেওয়া হয়৷ তা সম্পন্ন করতে পিএইচডি-র মাঝামাঝি একটি পর্যায়ে বৃত্তি দেওয়া হয়৷ সেটাকেই বলা হচ্ছে স্যান্ডউইচ মডেল প্রোগ্রাম৷ এই স্যান্ডউইচ প্রোগ্রাম শুধুমাত্র পিএইচডি-র জন্যই প্রযোজ্য৷
বুন্ডেসভেয়ার মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সাতটি বিভাগ এবং এই সাতটি বিভাগের অধীনে ১৩টি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে৷ রয়েছে প্রায় ৩০০ জন ফ্যাকাল্টি সদস্য৷ আর বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে একটি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অফিস৷ সেখান থেকে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ইত্যাদি আরো নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে৷
জার্মানি এবং ভারতের মধ্যে পড়াশোনার মূল পার্থক্য কোনটি ? অথবা চোখে পড়ার মত তেমন বিশেষ কোন পার্থক্য আছে কী এই দুই দেশের মধ্যে ? মহমোহন গোয়েলের মতে, ‘‘জার্মানি আর ভারতে পড়াশোনার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য আমার চোখে পড়ছে না৷ তবে বিশেষ একটি পার্থক্য আমার চোখে পড়েছে, আর তা হল এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে৷ যেভাবেই হোক রেজাল্ট ভাল করতে হবে৷ ওরা পড়াশোনার পেছনে প্রচুর সময় দেয়৷ পরীক্ষার জন্য ওরা সবসময়ই প্রস্তুত থাকে৷ অথচ ভারতে সব বিষয়েই একটি স্বচ্ছ ধারণা নেওয়ার চেষ্টা আমরা করি৷ শুধু একটি বিষয় নিয়ে আমরা পড়ে থাকি না৷ তবে এটা আমার ব্যক্তিগত মত৷''
পিএইচডি শেষ করে কী করতে চান ? জার্মানিতে আরো কিছুদিন থাকতে চান ? পোস্ট ডক্টরেট করতে চান নাকি দেশে ফিরে যেতে চান ? গোয়েলের স্পষ্ট উত্তর, ‘‘না, আমার পিএইচডি শেষ হওয়ার পর আমি ভারতে ফিরে যেতে চাই৷ আমি সেখানে সরকারি চাকরি করছি, স্থায়ী চাকরি৷ আমি ছুটিতে এসেছি৷ ভোপালে যে সংস্থায় আমি কাজ করতাম, সেখানেই ফিরে যেতে চাই আমি৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ