মানবদেহে দীর্ঘস্থায়ী ভ্রুণ
২৭ আগস্ট ২০১৪মানবদেহে কোনো ভ্রূণের স্থায়ীত্বের দিক দিয়ে এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ বলে দাবি করা হচ্ছে৷ চিকিৎসকরা জানান, ভারতীয় এই নারী ২৪ বছর বয়সে গর্ভধারণ করেন৷ কিন্তু ভ্রূণটি জরায়ুর বাইরে বেড়ে ওঠায়, মানে সেটা ‘একটপিক প্রেগনেন্সি' হওয়ায়, স্বাভাবিকভাবে তার বড় হওয়া ও জন্ম নেওয়ার বিষয়টি ব্যহত হয়৷ ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা দেখা দেয়৷ এবং পরবর্তীতে তা জটিল সমস্যায় রূপ নেয় এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন দেখা দেয়৷
ভারতের মধ্যাঞ্চলের প্রত্যন্ত এক গ্রামের দরিদ্র ওই নারী সে সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভ্রূণটি অপসারণে ভীত ছিলেন৷ ব্যথা কমাতে তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকের দ্বারস্থ হন৷ তখন বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমলেও ৩৬ বছর পর আবারো তলপেটে ব্যথা শুরু হয় তাঁর৷ এখন ঐ নারীর বয়স ৬০ বছর৷ সেই ব্যাথা নিয়েই তিনি নাগপুরে এন কে পি সেল্ফ ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে যান৷ সেখানকার প্রধান সার্জন মুর্তাজা আখতার সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘‘তলপেটে ব্যথা নিয়ে তিনি আমাদের এখানে আসেন৷ আমরা পরীক্ষা করে দেখি তিনি এমন একজন গর্ভবতী, যার ভ্রুণটি জরায়ুর বাইরে থেকে আছে৷ তখন ঐ নারী আমাকে জানান যে, ১৯৭৮ সালে তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন এবং গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায় চলছিল৷''
চিকিৎসকরা তাঁর তলপেটে একটি থলির মতো অনুভব করেন এবং ভাবেন এটি ক্যানসার হতে পারে৷ পরে নানা পরীক্ষা ও স্ক্যান করার পর দেখা গেল একটি কঙ্কাল৷ স্ক্যান দেখে প্রথমেই চিকিৎসকদের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল – এখন তাঁরা কী করবেন? আসলে ওটা একটি পরিপূর্ণ শিশুর কঙ্কাল, যা একটি থলের মধ্যে ছিল৷
নাগপুরের ঐ হাসপাতালের চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় সফলভাবে সেই মহিলার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয় এবং জরায়ু, অন্ত্র ও মূত্রাশয়ের মাঝখান থেকে বের করা হয় পিণ্ডটিকে৷ যেটি পূর্ণাঙ্গ একটি শিশুর কঙ্কাল৷
আখতার আরো বলেন, ‘‘এর অর্থ ৩৬ বছর ধরে এই কঙ্কালটি ঐ নারীর শরীরের ভেতর ছিল৷ এমন একটা ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোথাও শোনেননি তাঁরা৷''
পরে অবশ্য বিভিন্ন জার্নাল ঘেটে চিকিৎসকরা আরো একটি ঘটনা জানতে পারেন৷ বেলজিয়ামের এক নারীর দেহে ১৮ বছর ধরে একটি ভ্রুণ ছিল, যেটি পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়৷ এ পর্যন্ত ঐ ঘটনাই ছিল মায়ের দেহে ভ্রুণের অবস্থানের দীর্ঘস্থায়ী রেকর্ড৷
সে যাই হোক, আখতার জানান ভারতের সেই নারী যখন পুরো সত্যটা জানতে পারেন তখন তিনি অসম্ভব শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন৷ তবে এ মুহূর্তে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন৷
এপিবি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)