মার্স রোভার কিউরিওসিটির পাঁচ বছর
২০১২ সালের ৬ই আগস্ট ‘মার্স সায়েন্স ল্যাবরেটরি’ মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করে ও চিরকালের বৃহত্তম রোভার বা ভ্রাম্যমান অভিযাত্রী যানটিকে মঙ্গলগ্রহের মাটিতে ছেড়ে দেয়৷ ‘কিউরিওসিটি’ আজও তার কাজ করে চলেছে৷
সবচেয়ে বড় রোভার
‘কিউরিওসিটি’ বা ‘কৌতূহল’ তার নাম; ইতিহাসের বৃহত্তম মার্স রোভারটি আবার সর্বাধুনিকও বটে৷ ২০১২ সালের ৬ই আগস্ট যাবৎ ‘কিউরিওসিটি’ ১৭ কিলোমিটার বা সাড়ে দশ মাইল পথ অতিক্রম করেছে – কারণ সে তো আর বাস্তবিক যান নয়: সে একটি চাকা লাগানো পরীক্ষাগার৷
রোভারের ভিতরে কি আছে?
যেমন একটি বিশেষ স্পেক্ট্রোমিটার, যা লেজারের সাহায্যে দূর থেকে পদার্থের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করতে পারে; অথবা একটা গোটা আবহাওয়াবিজ্ঞান কেন্দ্র, যেখানে পরিবেশের তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, বিকিরণ, আর্দ্রতা ও বাতাসের গতি, সব কিছু মাপা হতে থাকে; সবচেয়ে বড় কথা, এমন একটি রাসায়নিক পরীক্ষাগার, যেখানে জৈবিক পদার্থ বিশ্লেষণ করে মঙ্গলগ্রহে জীবনের চিহ্ন আছে কিনা, তাও বলা সম্ভব৷
খুঁড়ে দ্যাখো!
‘কিউরিওসিটি’ দেখিয়েছে যে, মঙ্গলগ্রহে জীবন অন্তত তত্ত্বগতভাবে সম্ভব – যদিও জীবনের কোনো বাস্তব হদিশ এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ রোভারের একটি ‘বাহু’-তে একটি পাওয়ার ড্রিল লাগানো আছে৷ ছবিতে সেই ড্রিল দিয়ে ‘গেল্ ক্রেটার’-এর ভিতরের ‘ইয়েলো-নাইফ বে’ থেকে মাটির নমুনা নেওয়া হচ্ছে৷
এবার পরীক্ষাগারে পাঠাও!
মঙ্গল গ্রহের ধুলো বলে কথা! প্রথমে সেই ধুলো-বালি ছেঁকে সাইজ অনুযায়ী ভাগ করা হয়; তারপর সেই সব নমুনা আলাদা আলাদা যন্ত্রে বিশ্লেষণ করা হয়৷
আগের রোভাররা অনেক ছোট ছিল
বলতে কি, ‘কিউরিওসিটি’-র পূর্বসূরিরা আকারে অনেক ছোট ছিল৷ ১৯৯৭ সালের চৌঠা জুলাই ‘সাজার্নার’ নামের প্রথম মার্স রোভারটি মঙ্গলগ্রহের ধুলোয় তার টায়ারের ছাপ রাখে৷ ছোট হলে কী হবে, ‘সাজার্নার’ ছিল প্রথম ভ্রাম্যমান রোবট, যাকে মঙ্গলগ্রহে একা রেখে আসা হয়েছে৷ পদার্থের রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য ‘সাজার্নার’-এ একটি এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার লাগানো ছিল৷ এছাড়া যানটিতে ক্যামেরা বসানো ছিল৷
রোভাররা বড় হচ্ছে
তিন প্রজন্মের রোভার দেখলে যা সহজেই বোঝা যায়৷ সামনের ছোট রোভারটি হলো ‘সাজার্নার’, যার ওজন সাড়ে ১০ কিলোগ্রামের কিছু বেশি, যেন একটা খেলনার গাড়ি; ‘সাজার্নার’-এর গতি ছিল সেকেন্ডে এক সেন্টিমিটার৷ এর পর আসে ‘অপর্চুনিটি’, যার ওজন ১৮৫ কিলোগ্রাম, বা একটা ইলেকট্রিক হুইলচেয়ারের সমান৷ সবশেষে ৯০০ কিলোগ্রাম ওজনের ‘কিউরিওসিটি’৷ বড় রোভারগুলি সেকেন্ডে ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার গতিতে চলতে পারে৷
চার মাস বেঁচে ছিল ‘সাজার্নার’
সেই চার মাসে প্রায় ১০০ মিটার চলে ‘সাজার্নার’; তথ্য ও ছবি পাঠিয়ে যায় ২৭শে সেপ্টেম্বর অবধি৷ তার ঠিক ন’দিন আগে তোলা এটাই ‘সাজার্নার’-এর শেষ ছবি৷ ন’দিন পরে বেতার সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায়, সম্ভবত ‘সাজার্নার’-এর ব্যাটারি মঙ্গলগ্রহের হিম রাত্রি সহ্য করতে পারেনি বলে৷
জান আছে
২০০৪ সালে নাসা মহাকাশ সংস্থা মঙ্গলগ্রহে একই মডেলের দু’টি রোবট নামায়: ‘স্পিরিট’ ও ‘অপর্চুনিটি’৷ ‘স্পিরিট’ বেঁচে ছিল ছ’বছর ও সেই সময়ে প্রায় আট কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে৷ ‘স্পিরিট’ পাহাড়ে চড়েছে, মাটির নমুনা নিয়েছে, চরম শীত আর বালির ঝড় সহ্য করেছে৷ তার যমজ ‘অপর্চুনিটি’ আরো দড় – কিংবা আরো ভাগ্যবান: সে আজ অবধি কাজ করে যাচ্ছে৷
ম্যারাথন রোভার
২০১৫ সালেই ‘অপর্চুনিটি’ মঙ্গলগ্রহে তার ম্যারাথন দূরত্ব সম্পন্ন করে – অর্থাৎ ৪২ কিলোমিটারের বেশি পথ পার হয়ে যায়৷ সব মিলিয়ে ‘কিউরিওসিটি’-র চেয়ে অনেক বেশি পথ অতিক্রম করেছে ‘অপর্চুনিটি’; সে তার ‘বাহু’ দিয়ে মাটির নমুনা নিতে পারে; রোভারটিতে তিনটি স্পেক্ট্রোমিটার ও একটি ত্রিমাত্রিক ক্যামেরা বসানো আছে৷ আপাতত সে ‘পার্সিভিয়ারেন্স ভ্যালি’ বা ‘অধ্যবসায়’ উপত্যকায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷
রেড প্ল্যানেট
মঙ্গলগ্রহের এই প্যানোরামা ছবিটি তুলেছে ‘কিউরিওসিটি’-র মাথায় বসানো ক্যামেরা৷এই আধুনিক রোবটগুলি যতদিন সম্ভব – অন্তত আগামী পাঁচ বছর কাজ করবে, বলে বিজ্ঞানীদের আশা৷ মঙ্গলগ্রহের দৃশ্য দেখে যারা ছুটি কাটানোর কথা ভাবছেন, তারা পৃথিবী থেকে দূরত্বটা মনে রাখবেন: প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি কিলোমিটার!