মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশংসার দাবিদার
২৯ অক্টোবর ২০১৪না, অ্যামেরিকার পক্ষে সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়৷ বিশেষ করে ইউরোপীয়দের তো নয়ই৷ তারা প্রায়ই অ্যাটলান্টিকের অপর প্রান্তের ‘বড় ভাই'-কে উত্ত্যক্ত করে থাকে৷ যেমন ইরাক বা আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার যুদ্ধ নিয়ে৷ মার্কিন সেনাবাহিনী প্রতিটি সংঘর্ষে জিতেও যুদ্ধে হেরে যায়৷ এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ ওয়াশিংটন যখন কোনো দেশ ছেড়ে চলে যায়, তখন সেই দেশের অবস্থা তাদের সেনাবাহিনী প্রবেশের আগের তুলনায় অনেক খারাপ হয়ে যায়৷ কিন্তু ইউরোপে মার্কিন-বিরোধিতা শুধু এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ জার্মানিতে সেই সঙ্গে যোগ হয় আরেকটি বিষয়৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ বছরের পর বছর ধরে জার্মান চ্যান্সেলরের মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে এসেছে এবং এমন আস্থাভঙ্গের পরেও ক্ষমা চায়নি৷ ফলে অনেকেই এই ঘটনার ফলে এখনো অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন৷
মার্কিন-বিরোধিতা আজ প্রায় ফ্যাশন
এমন ঘটনা মার্কিন-বিরোধিতার পরিবেশে আরও ইন্ধন জোগায়৷ অ্যামেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা সৃষ্টির লক্ষ্যে আলোচনার জন্যও এটা সহায়ক নয়৷ আলোচনা কোনোরকমে এগোচ্ছে৷ ইউরোপের অনেক মানুষ অ্যামেরিকার সঙ্গে আরও নিবিড় সহযোগিতার বিপক্ষে৷ কারণ হিসেবে মুরগির মধ্যে বিপজ্জনক ক্লোরিন অথবা জিন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি ভুট্টার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়৷ কিন্তু এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কাউকে এমন পণ্য কিনতে বাধ্য করা যাবে না৷ আসলে অ্যামেরিকানদের প্রতি এক মৌলিক অনাস্থা এখন প্রায় ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ টিটিআইপি নামের এই চুক্তির সুবিধাগুলি নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না৷ যেমন এর ফলে আরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দেবে অথবা শিল্পজগতের জন্য একক মানদণ্ড সৃষ্টি হবে৷ মোটকথা রোনাল্ড রেগান-এর সময়ের পর থেকে অ্যাটলান্টিকের দুই প্রান্তের মধ্যে সম্পর্কের এমন অবনতি দেখা যায়নি৷ কয়েক বছর আগে বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার সময় কেউ কি এমনটা ভাবতে পেরেছিল!
প্রেসিডেন্ট ওবামা এখন দৃঢ় চিত্তে ইবোলার বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছেন৷ পশ্চিম আফ্রিকায় এই রোগের চিকিৎসার অবকাঠামো গড়ে তুলতে আগামী নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪,০০০ সৈন্য পাঠাচ্ছেন৷ লাইবেরিয়ায় ১৭টি চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হবে৷ যে সব চিকিৎসাকর্মী ইবোলায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের চিকিৎসা হতে পারে স্থানীয় পর্যায়ে এক সাময়িক হাসপাতালে৷ মনরোভিয়া বিমানবন্দরে অ্যামেরিকা সেটি গড়ে তুলছে৷ এছাড়া ল্যাবে কাজ করার জন্যও কর্মী পাঠাচ্ছে ওয়াশিংটন৷ ফলে লাইবেরিয়ায় ইবোলা পরীক্ষার ফল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যাবে৷ সেইসঙ্গে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবীর প্রশিক্ষণেরও প্রস্তুতি চলছে, যাতে তাঁরা ইবোলা আক্রান্ত মানুষের সেবা করতে পারেন৷
এরই মধ্যে ইউরোপে সেই সব সমালোচকরা মুখ খুলেছেন, যাঁরা চিকিৎসা ও মানবিক সাহায্যের সামরিকীকরণের বিরোধিতা করছেন৷ তাঁরা হয়ত জানেন না, যে খোদ ‘ডক্টর্স উইদাউট ফ্রন্টিয়ার্স' সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছে৷ কারণ লাইবেরিয়া, গিনি বা সিয়েরা লিওন-এ ইবোলা মহামারি সবকিছুই বিপজ্জনক করে তুলছে৷ মনে রাখতে হবে, সেখানকার চিকিৎসা অবকাঠামো, জননিরাপত্তা, প্রশাসন ও স্থানীয় অর্থনীতি এমনিতেই দুর্বল৷
এমনকি কিউবাও মার্কিন অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে
ওয়াশিংটনের সমালোচনার বদলে মার্কিন প্রশাসনকে বড় আকারে সাহায্য করা উচিত৷ সবাই মিলে কোনো ভালো কাজ করলে যে ঐক্য দেখা যায়, তার কোনো তুলনা হয় না৷ ইবোলার বিরুদ্ধে সংগ্রামে এমনকি দুই জাতশত্রুও পরস্পরের কাছাকাছি এসে পড়েছে৷ ফিদেল কাস্ত্রো অক্টোবর মাসের শুরুতেই কয়েক'শো ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীকে আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে পাঠিয়েছেন৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এর জন্য তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন৷ কিউবাও মার্কিন সামরিক অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে৷ দুই পক্ষই লাইবেরিয়ায় পরস্পরের সহযোগিতা করতে চায়৷ কিউবাও যদি তার মার্কিন-বিরোধিতার ঐতিহ্য কিছুকাল দূরে সরিয়ে রাখতে পারে, ইউরোপেও সেটা সম্ভব হওয়া উচিত৷