মার্কিন নাগরিকের শিরশ্ছেদের প্রতিক্রিয়া
১৮ নভেম্বর ২০১৪রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পিটার কাসিগ এর শিরশ্ছেদের ভিডিওচিত্র প্রকাশ করে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ কাসিগ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের এ নাগরিক সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শরণার্থীদের চিকিৎসা-সামগ্রী এবং খাদ্য সরবরাহ করে আসছিলেন৷ মানবসেবামূলক এ কাজ তিনি একা করতেন না৷ ১৫০ জন সিরীয় নাগরিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদেরও নিয়োজিত করেছিলেন এ কাজে৷ গত বছর আব্দুল রহমান কাসিগকে ধরে নিয়ে যায় আইএস৷ রোববার প্রচার করা হয় শরীর থেকে মাথা কেটে ফেলে তাঁকে হত্যা করার ভিডিও৷ ভিডিওচিত্রটি সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর দাবিক থেকে প্রচার করা হয়েছে৷ এই নিয়ে পশ্চিমা দেশের পাঁচ জন নাগরিককে হত্যা করল আইএস৷ আগের চারজনের মধ্যে দুজন যুক্তরাষ্ট্রের আর বাকি দুজন ছিলেন ব্রিটেনের নাগরিক৷
এবারের ভিডিওতে আব্দুল রহমান কাসিগসহ কমপক্ষে ১৮ জনকে হত্যার দৃশ্য দেখিয়েছে আইএস৷ জঙ্গি সংগঠনটির দাবি, বাকি ১৭ জনের বেশিরভাগই সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্য৷ তবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ২২ বছর বয়সি এক ফরাসি নাগরিকও রয়েছেন বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন৷
আগের চারবার ভিডিওচিত্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোকে বিমান হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানালেও আইএস এবার তা করেনি৷ এবারও জঙ্গি সংগঠনটির মুখপাত্রের ভূমিকায় ছিলেন ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরেজি বলেন এমন একজন৷ আব্দুল রহমান কাসিগের লাশ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পিটার কাসিগ৷'' কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা আইএস যোদ্ধা জানান, তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সৈন্যদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছেন৷ আইএস-বিরোধী যুদ্ধে সফল হতে নিজেদের সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৩ হাজার ১০০ করার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র৷
পিটার কাসিগ এর আইএস যোদ্ধাদের হাতে নিহত হওয়ার খবরে তাঁর পরিবার শোকাভিভূত৷ তবে এক বিবৃতিতে তাঁর বাবা-মা বলেছেন, মানবসেবা করতে গিয়ে জঙ্গিদের হাতে নিহত হওয়া সন্তানকে নিয়ে তাঁরা গর্বিত৷ রোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা চলছে বিশ্বজুড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘এমন কাজ শুধু শয়তানই করতে পারে৷' ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ এ ঘটনাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ' আখ্যা দিয়ে বলেছে, এমন তৎপরতার বিরুদ্ধে আরো জোরদার অবস্থান নিতে হবে৷
কাসিগ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যে থাকতেন৷ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার ইন্ডিয়ানার সব পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়৷
সিরিয়ার নাগরিক বুরহান মুসা আগা লেবাননে সিরীয় শরণার্থীদের শিবিরে আব্দুল রহমান কাসিগ এর সঙ্গে কাজ করেছেন৷ মানবদরদি বন্ধুর মৃত্যুতে তাঁর হৃদয়ও শোকার্ত৷ আব্দুল রহমান কাসিগ এর বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে বুরহান বলেছেন, ‘‘তাঁদের সন্তানকে আমার দেশে হত্যা করা হয়েছে বলে আমি বেশি দুঃখিত৷ ওরা (আইএস) পশু৷ ওরা কখনোই ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেনা৷ পিটার তো কারো সঙ্গে যুদ্ধ করছিলনা, কীভাবে মানুষকে বাঁচানো যায় ও শুধু তা শেখাচ্ছিল৷''
এসিবি/জেডএইচ (এএফপি, রয়টার্স)