গান গেয়ে রিক্সাভাড়া
২৫ অক্টোবর ২০১৩‘আমি কি আর ভালো হবো না, ডাক্তার রায়?' – গানে গানে মান্না দে এই প্রশ্নটি রেখেছিলেন ২৯ বছর আগে৷ বৃহস্পতিবার ৯৪ বছর বয়সে লোকান্তরিত হয়েছেন তিনি৷ তাঁর সম্পর্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গানের আরেক মহিরথী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী তখন ভীষণ ক্লান্ত৷ তারপরও কথার ডালা মেলে ধরেছেন ‘যদি আবার জন্ম হয়, বৃষ্টি হয়ে...', ‘হিমেল হাওয়া ডাক দিয়ে যায়', ‘অভিমানিনী, সেদিনের কথা ভুলো না', ‘অতীতের কথা কে বলো রাখে স্মরণে', ‘সে এক বর্ষা রাতে স্বপনে', ‘সামনে সমুদ্দুর ছোট তরীটি সম্বল'সহ অনেক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গানের শিল্পী৷ বলেছেন, বাঙালির সন্তান মান্না দে-র মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সংগীত পরিচালক এবং শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সংগ্রামের কথা৷ ৬১ বছর আগে শুরু করে জীবনের অনেকগুলো বছর সেই সংগ্রামে ব্যয় করার পর সদ্য প্রয়াত শিল্পীর মনে যে ক্ষোভ, যে অপ্রাপ্তির বেদনা জন্ম নিয়েছিল সেসব কথাও উঠে এসেছে সাক্ষাৎকারে৷
হিন্দি ছবির গানের অন্য দুই দিকপাল মোহাম্মদ রফি এবং কিশোর কুমারের প্রসঙ্গও তুলে এনেছেন অজয় চক্রবর্তী৷ নিজেকে ‘সংগীতের মনোযোগী ছাত্র' পরিচয়ে তুলে ধরে শিল্পী আরো জানিয়েছেন, মান্না দে-র কাছে তাঁরও অনেক ঋণ৷ গানের জগতে যখন হাঁটি হাঁটি পা পা শুরু, সেই সময়টায় তিনি নাকি স্টেজে মান্নার গান গেয়ে রিক্সাভাড়ার টাকাও আয় করেছেন৷ একটা হিন্দি গান শুনে কোনো এক শ্রোতা যে মু্গ্ধ হয়ে ৫০০ টাকা হাতে তুলে দিয়েছিলেন, অজয় চক্রবর্তীর কাছে সেটা এখন খুব স্মরণীয় স্মৃতি৷
জীবনভর বড় কাজ করে মানুষ নিজেকে সাধারণের চেয়ে উঁচুতে তুলে নেন৷ জীবনান্তে শুরু হয় তাঁর প্রকৃত মূল্যায়ন৷ জীবদ্দশায় অনেক পুরস্কারই পেয়েছেন শিল্পী মান্না দে৷ কিছু অপ্রাপ্তি যত বেদনাই দিক, অনেক স্বীকৃতি যে তাঁকে তৃপ্তও করেছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই বললেই চলে৷ অজয় চক্রবর্তীর তারপরও আশঙ্কা, মৃত্যুর দিনে যতটা মূল্যায়নের চেষ্টা হচ্ছে, কিছুদিন পর তা একেবারে থেমে যেতে পারে৷ সে আশঙ্কা থেকে মান্না দে-কে নিয়ে একটা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছেন তিনি৷