মানবাধিকার রক্ষায় শিভা নাজার আহারি এক সোচ্চার কন্ঠ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০শিভা নাজার'এর মা শাহারজাদ কারিমন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন৷ কিছুদিন আগে তেহরানের কারাগারে মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি৷ বেদনার্ত কন্ঠে শাহারজাদ জানান, ‘‘সেটা ছিল সাক্ষাৎকারীদের ছোট্ট এক কেবিন৷ আমার সামনে মনের জোর দেখানোর চেষ্টা করছিল শিভা, নিজের অবস্থা নিয়ে কোনো অভিযোগও করেনি৷ কয়েক মাস অপেক্ষা করার পর বিচারের দিন ধার্য করা হয়েছে৷ কিন্তু শিভার আইনজীবীকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি৷''
শিভা নাজারি ইরানের মানবাধিকার সংগঠন ‘কমিটি অব হিউম্যান রাইটস রিপোর্টাস'-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য৷ এই সংগঠনের ওয়েব সাইটে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে লেখালিখি করতেন তিনি৷ বিশেষ করে কারাবন্দি, শরণার্থী, নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন শিভা৷ ২০০৯ সালে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর মানবাধিকার সংগঠনটির ওপর সরকারের চাপ বেড়েই চলেছে৷ এমনকি এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলেও গণ্য করা হয়৷ শিভার মা শাহারজাদ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেননা৷ তিনি বলেন, ‘‘শিভা পাঁচ বছর ধরে নারী ও পথশিশুদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট৷ দরিদ্রদের এলাকায় পথশিশুদের নিয়ে অবসর সময়েও ব্যস্ততায় কাটতো তার৷ এসব আমাকে কিছুটা উদ্বিগ্ন করত৷ কিন্তু মানবাধিকার রক্ষায় তার কাজকর্ম আমাকে তেমন চিন্তায় ফেলেনি৷ কেননা আমি জানতাম সে আইনকানুন মেনে চলবে এবং এসব কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত কিছু করবেনা৷''
তবুও ইরানি কর্তৃপক্ষ এই মানবাধিকার কর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করার একটি অজুহাত বের করেন৷ ইরান সরকারের কঠোর সমালোচক আয়াতোল্লাহ মোনতাজেরির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলে ২০০৯ সালের ২০শে ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় শিভা নাজারকে৷ তাঁর আইনজীবী মোহাম্মদ শরিফ এ ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন৷ আল্লার সঙ্গে বৈরিতার যে অভিযোগ আনা হয়েছে শিভার বিরুদ্ধে, সেটাই তাঁকে বেশি দুর্ভাবনায় ফেলেছে, জানান মোহাম্মদ শরিফ৷ কেননা ঐ অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি এই আইনজীবী৷ তাঁর মতে বিচারের আগে এবিষয়ে কিছু বলাটা হবে খুব বিপজ্জনক৷ বিশেষ করে শিভা নাজার যখন ইরান সরকারের কাছে বিরাট এক চক্ষুশূলের মত৷
২৪শে আগস্ট থেকে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স' ইরান সরকারের কাছে শিভা নাজারের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির আবেদন জানিয়ে অনলাইনে এক সাক্ষর অভিযান শুরু করেছে৷ সংগঠনের ইরান শাখার মুখপাত্র রেজা মনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের জার্মান শাখা এবং বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা আবেদনপত্রটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে৷ গত বছর শিভা নাজার'কে অকারণে দুইবার কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে যে অপরাধের কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ন অযৌক্তিক৷ তিনি কারাগারে গত কয়েকমাসে অনেকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ সুচিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে৷ উকিলকে তাঁর নথিপত্রও দেখতে দেওয়া হয়নি৷''
শিভা নাজারের সহকর্মী ও বন্ধু বান্ধবরাও তাঁর মুক্তির জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন৷ এ প্রসঙ্গে ইরানের ‘কমিটি অব হিউম্যান রাইটস রিপোর্টার্স'এর মুখপাত্র পারিসা কাকাই বলেন, ‘‘তাঁকে যে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই৷ আমরা তাঁর দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি চাই৷ এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়ব না আমরা৷''
আশার কথা, ১২ সেপ্টেম্বর ৪০ হাজার ইউরোর বিনিময়ে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে শিভা নাজার আহারিকে৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ