1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানবাধিকার রক্ষায় এক নির্ভীক কন্ঠ আসমা জাহাঙ্গির

২৫ ডিসেম্বর ২০১০

পাকিস্তানের বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গির মানবাধিকার রক্ষায় তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য এবছরের ইউনেস্কো-বিলবাও পুরস্কার পেলেন৷ ২৫ হাজার ডলার অর্থমূল্যের এই পুরস্কারটি তাঁকে প্রদান করা হল ১০ ডিসেম্বর৷

https://p.dw.com/p/zpYU
মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গিরছবি: AP

জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ও স্পেনের শহর বিলবাও-এর যৌথ উদ্যোগে এই পুরস্কারটি দেয়া হচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে৷ ৫৮ বছর বয়েসি আসমা জাহাঙ্গিরকে এই বছরের পুরস্কারটি দেয়া হল মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী তাঁর সাহসী পদক্ষেপের জন্য৷ বলা হয়েছে জুরিমণ্ডলীর পক্ষ থেকে৷

নানা ধর্ম ও মতের স্বাধীনতার পক্ষে ও বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে এক সোচ্চার কন্ঠ আসমা জাহাঙ্গীর৷ গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে মানবাধিকার রক্ষার দিক দিয়ে কিছুটা উন্নতি হলেও আরো অনেক কিছু করার আছে, জানান আসমা জাহাঙ্গির৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘যে কোনো পুরস্কার পেলেই আমি খুশি হই৷ এর সাথে সাথে অবশ্য দায়িত্ব ও মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে যায়৷ আমি চেষ্টা করি এই দায়িত্বের প্রতি সুবিচার করতে৷ অনেক সময় সীমা অতিক্রম করা সম্ভব হয়না''

আসমা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর শহরে এক বিত্তশালী পরিবারে৷ তবু ঘরকন্নার কাজ করতে দ্বিধাবোধ করা হতোনা তাঁর পরিবারে৷ ৬০-এর দশকের শেষ দিকে পাকিস্তান সরকার পূর্বাঞ্চল তথা আজকের বংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনকে ধুলিস্যাৎ করার চেষ্টা করলে পাকিস্তানের কিছু মুক্তচিন্তার মানুষের সঙ্গে আসমার বাবাও প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন৷ ফলে তাঁকে বার বার কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়৷ আসমার মনেও দাগ কাটে সে সময়ের ঘটনা৷ তিনি বলেন,‘‘আমার বাবা কারাগার থেকে মুক্ত হয়েও হেসেছেন৷ তাঁর কাজটাকে আরো গুরুত্ব দিয়েছেন৷ মাত্র ৬১ বছর বয়সে ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন তিনি৷ আমি আমার ছোটবোনের সঙ্গে তাঁর মৃত্যুশয্যায় বসে থেকেছি৷ তিনি বলেছিলেন, আমি মারা যাবনা, তোমাদের মধ্যেই বেঁচে থাকব৷''

Pakistan Asma Jahangir
ইউনেস্কো-বিলবাও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আসমাছবি: picture-alliance/dpa

সে কথা আজো ভোলেননি আসমা জাহাঙ্গীর৷ বাবা যে অর্থ রেখে গিয়েছিলেন, তা দিয়ে বোনের সঙ্গে একটি মহিলা ফোরাম গড়ে তোলেন তিনি৷ ১৯৮৩ সালে ১৩ বছরের সাফিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসাবে নারী অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন আসমা৷

অন্ধ সাফিয়াকে ধর্ষণ করার বিচার ধর্ষকের শাস্তি না হয়ে বরং যৌন অনাচারের জন্য দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছিল সাফিয়াকে, বেত্রাঘাত ও তিন বছরের কারাদণ্ড৷ পরে অবশ্য এই দণ্ডাদেশ তুলে নেয়া হয়৷

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, পারিবারিক সম্মানরক্ষার ওজরে নারীহত্যা, কারাগারে অল্পবয়েসি বন্দিদের প্রতি অমানবিক আচরণ এই সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের মানবাধিকার রক্ষা কমিশন এবং জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে আসমা জাহাঙ্গির এক নির্ভীক কন্ঠ৷ তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য নিজের পরিবারেই বৈরিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে আসমাকে৷ তিনি বলেন, ‘‘মেয়েদের সবক্ষেত্রেই বাধা৷ কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারে সব জায়গাতেই সংগ্রাম করতে হয় তাদের৷ কেউ যদি নতুন কিছু করতে চান, তাহলে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন৷ মানুষ বড় নৃশংস হতে পারে৷ আগে পাকিস্তানে মেয়েরা কাজ করতে পারতোনা৷ আজ তা পারে৷ আমি এক বড় পরিবারে বিয়ে করেছি৷ আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের দুঃখ এই যে, শুধুই গৃহবধূ নই আমি৷''

অবশ্য ইতোমধ্যে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা আসমা সবার কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ সমীহের চোখে দেখা হয় এখন তাঁর কাজটাকে৷ আসমা দুঃখ করে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমার কাম্য৷ দারিদ্র্য দূর করে মানুষকে মানুষের মত বাঁচতে দিতে হবে৷ সারা বিশ্বে পাকিস্তানের নেতিবাচক ইমেজটা আমাকে আহত করে৷ পাকিস্তানের মানুষকে কত কিছুই না সহ্য করতে হয়েছে, কত সংগ্রাম করতে হয়েছে, তা চোখে পড়েনা কারো৷ এমনকি দেশের মধ্যেও মানুষের মনুষ্যত্ব যেন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক