মাত্র ১৩ ধাপে ‘হিপস্টার’
সিয়াটল থেকে শুরু, ব্রুকলিন এনেছে মূলধারায়৷ আর বর্লিন হলো হিপস্টারদের তীর্থভূমি৷ মাত্র ১৩টি ধাপ অনুসরণ করে আপনিও ভিড়ে যেতে পারেন হিপস্টারদের দলে৷
বাবা-দাদার পোশাকে
ফ্যাশন চলে সময়চক্রে৷ সুতরাং আজকের হিপস্টারের পোশাক হবে তাঁর বাবার সময়ের মতো৷ ৭০-এর দশকে আপনার বাবা ফ্লানেলের শার্ট পরতেন? কিংবা আপনার দাদা ফেডোরা হ্যাট মাথায় দিতেন? একজন হিপস্টার হয়ে থাকলে আপনাকে দেখেই মনে হবে, গায়ের পোশাকগুলো বোধহয় আপনার বাবা বা দাদুর আলমারি থেকে উদ্ধার করা৷ কিন্তু আপনার চেহারা দেখে মনে হবে – এ সব নিয়ে আপনার কোনো মাথাব্যথাই নেই...৷
হতে হবে ‘ভিনটেজ’!
আপনার পোশাক কোথা থেকে কেনা হচ্ছে – সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ আপনার হিপস্টার বন্ধুটি যদি জানতে চায় – ‘‘দারুণ এই শার্টটা কোথায় পেলে’’, ভুলেও ‘এইচঅ্যান্ডএম’-এর নাম বলা যাবে না৷ কোনো চেইন স্টোরের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে আপনাকে বলতে হবে ‘আরবান আউটফিটস’ বা ‘অ্যামেরিকান অ্যাপারেল’-এর নাম৷ আর অতি অবশ্যই পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে নিয়মিত ঢুঁ দিতে হবে৷
সারাদিন ‘আইগ্লাস’
হিপস্টার হতে হলে আপনাকে প্রতিদিন এবং সারাদিন চোখে রাখতে হবে রঙিন চশমা৷ আর সেটি কোনোভাবেই ডাক্তারের দেয়া চশমা হলে চলবে না৷ এমনকি কাচ কেমন – সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়৷ জরুরি বিষয় হলো চশমার ফ্রেম৷ সেটি হতে আকারে হবে বড় এবং উজ্জ্বল রংয়ের৷
থলে চাই অবশ্যই
আত্মমর্যাদা বোধ আছে – এমন কোনো হিপস্টার কাপড়ের তৈরি ‘টোট ব্যাগ’ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হন না৷ ওই ব্যাগে থাকতে পারে কাপড়ের কভারে মোড়া জার্নাল অথবা পোলারয়েড ক্যামেরা৷ হিপস্টার প্যারডি শো ‘পোর্টল্যান্ডিয়া’-র মতো আপনি নিজের ব্যাগে পা ঢুকিয়ে লাফিয়েও নিতে পারেন, যাতে ব্যাগের কাপড়ে বিচিত্র নকশা আঁকা হয়ে যায়৷
মেলাবে, যাতে না মেলে
সাজসজ্জায় আপনি যে কোনো রংয়ের যা ইচ্ছা বেছে নিতে পারেন৷ ফুলফুল হেডব্যান্ড বা চকচকে নিওন নেইলপলিশ – সবই চলতে পারে৷ কোমরে উজ্জ্বল রংয়ের বেল্টের সঙ্গে গলায় পরতে পারেন লম্বা নেকলেস৷ হিপস্টারের সাজের আসল কথাটি হলো – একটি যেন আরেকটার সঙ্গে না মেলে৷ অর্থাৎ ‘ম্যাচ’ করে পরা চলবে না৷ আপনার সঙ্গে থাকতে পারে এমন কিছু, যা নিয়ে বাচ্চারা স্কুলে যায়৷ যেমন ধরুন টিফিন বাক্স, যার ওপর জীবজন্তুর ছবি আঁকা আছে৷
নাপিতের সঙ্গে আড়ি
একজন পুরুষ হিপস্টারের চুল-দাড়ির গুরুত্ব বুঝতে হবে৷ বুক পর্যন্ত দুলতে থাকা দাড়ি, পাকানো গোঁফ কিংবা মনমতো ছাঁটে একসঙ্গে দুটোই চলতে পারে৷ রেজর বা ব্লেড থেকে থাকতে হবে একশ হাত দূরে৷ আর সত্যিকারের হিপস্টারের চেহারা অর্জন করতে হলে মাথার চুল হতে হবে কাকের বাসা৷
দেখা যাক ট্যাটু
হিপস্টাররা ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷ এ কারণে তাঁদের সবার গায়েই ট্যাটু বা উল্কি থাকে৷ আপনাকেও এমন একটি উল্কি আঁকতে হবে, যা অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা৷ ঘাড়, কবজি কিংবা গোড়ালির মতো জায়গায় আঁকিয়ে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়৷ এমনকি পায়ের পেছন দিকেও হতে পারে৷ একজন হিপস্টার এমন কোনো ট্যাটু নেবেন না, যেটা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না৷
মনোযোগ চাই কবজিতেও
বার্লিনের হিপস্টার সমাজে গুরুত্ব পেতে চাইলে আপনাকে একের পর এক ‘সামার ফেস্টিভাল’-এ যোগ দিতে হবে এবং প্রতিটি উৎসবের রিস্টব্যান্ড সংগ্রহ করে কবজিতে বেঁধে নিতে হবে৷ আপনি যদি মনেপ্রাণে একজন হিপস্টার হয়ে থাকেন, ছিড়ে পড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটি ব্যান্ডও খোলা চলবে না, যত বিদঘুটেই সেগুলো দেখাক৷
আপনার পানীয়
আপনি কী পান করছেন – তা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সুতরাং যেনতেন কোনো পানীয় হাতে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরলে চলবে না৷ জার্মানিতে হিপস্টারদের মধ্যে সবচেয় জনপ্রিয় ড্রিংক হলো ক্যাফেইন মেশানো স্পর্কলিং বেভারেজ ‘ক্লাব মেট’৷ ভদকার সঙ্গে মিশিয়েও ক্লাব মেট পান করেন অনেকে৷
কী খাবেন
খাবারের ব্যাপারে একজন হিপস্টার খুবই সচেতন৷ তিনি সেই সবজি খান, যেটি স্থানীয়ভাবে ফলানো, অবশ্যই অরগ্যানিক এবং সরাসরি কৃষকদের বাজার থেকে কেনা৷ মাংস খাওয়াটা তাঁরা ভালো চোখে দেখেন না৷ পান করেন আন্ডারগ্রাউন্ড কফি শপের ‘ফেয়ার ট্রেড’ কফি৷
মূল ধারার বাইরে
একজন হিপস্টার সেই সংগীত শোনেন, যার কথা সাধারণ মানুষ জানে না৷ তিনি এমন ক্লবে যান, যার নামও অনেকে শোনেনি৷ মূলধারার যে কোনো কিছুতেই তাঁর ঘোরতর আপত্তি৷ তিনি এমন কোথাও যাবেন না, যেখানে সব ট্যুরিস্ট বা পর্যটকরা যান৷
আসবাবেও হিপস্টার
একজন হিপস্টারের ঘরে দিদিমাদের সময়ের একটি প্রদীপ থাকতেই হবে৷ সোফাটি দেখে যেন মনে হয় সেটি ১৯৭০-এর দশকের তৈরি৷ দেয়ালে ঝালানো থাকতে হবে হরিণের শিং-সহ খুলি৷ আপনার চশমা যদি কখনো কোথাও খুলে রাখতে হয়, হরিণের খুলিটিই হতে পারে তার জন্য আদর্শ জায়গা৷
সেই সঙ্গে অ্যাপল!
হিপস্টারদের খুঁজে বের করার সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো শহরের কোনো ক্যাফের হিপ-হোলে, যেখানে তাঁরা অ্যাপল কোম্পানির ল্যাপটপ খুলে চায়ে চুমুক দেন৷ একজন হিপস্টারকে সব সময় তাঁর জীবন আর ফ্যাশন বদলাতে হয়৷ খোঁজ-খবরও রাখতে হয় নিয়মিত৷ নতুন কোনো নিরামিষ পদের খোঁজ পেলে ইনস্টাগ্রামে ছবি দিতে হয়৷ নতুন লেখা কবিতার দুটো ছত্র তুলে দিতে হয় টাম্বলারে৷ সুতরাং হিপস্টার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই এ ছবিঘর শেয়ার করতে হবে৷