1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহামারি প্রতিরোধে জাতিসংঘের পরিকল্পনা

৩ জুন ২০১০

হাজার হাজার বছর ধরে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং প্যারাসাইট মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট করছে, সৃষ্টি করছে যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও এইডস’এর মত মহামারি৷ তাই এবার, ২০১৫ সালের মধ্যে এ সব মহামারিকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে জাতিসংঘ৷

https://p.dw.com/p/NgJR
আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও এইডস'এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb

১৩০ বছর আগে যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানী রবার্ট কখ৷ এর ৪০ বছর পর আবিষ্কৃত হয় যক্ষ্মার টিকা৷ কিন্তু আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও এইডস'এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে৷ চলতি শতাব্দীর শুরুতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি ১৫ বছরের মধ্যে কয়েকটি লক্ষ্য পূরণের অঙ্গীকার করেছিল৷ এর মধ্যে একটি লক্ষ্য ছিল – এই তিন মহামারিকে দমন করে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা৷ কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও এই লক্ষ্য থেকে আজও অনেক যোজন দূরে রয়েছে মানুষ৷

প্রতি বছরই এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ১৯৯০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এইডস রোগীর সংখ্যা চার গুণ বেড়ে গেছে৷ ২০১০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী এইডস'এর সুচিকিৎসার পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি৷ এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক এইডস ফাউন্ডেশন ‘আভার্ট'-এর পরিচালক আনাবেল কানাবুস বলেন, ‘‘এই লক্ষ্যটা অনেকটাই বিস্মৃতির তলে হারিয়ে গেছে৷ সবার জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা আজও সম্ভব হয়নি৷ বরং বলা যায় এ থেকে বহু মাইল দূরে আমরা৷ খুব কম দেশই এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে৷''

সাহারার দক্ষিণাঞ্চলে আফ্রিকার মানুষেরাই এইডস রোগের এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্বব্যাপী এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ৩৩ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ২২ মিলিয়নই বসবাস করেন সেখানে৷ এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া – এই তিন মহামারিকে রোধ করার জন্য ২০০২ সালে একটি আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা হয়েছে৷ খানিকটা কাজও করেছে এই ফাউন্ডেশন৷ অ্যান্টি-ভাইরাস ওষুধের বিতরণ ব্যবস্থা ভাল হয়েছে, ৬ মিলিয়ন যক্ষ্মারোগী আরোগ্যলাভ করেছেন, ১০ কোটি ম্যালেরিয়া রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে এবং ১০ কোটি মশারি বিতরণ করা হয়েছে৷ বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলিতে যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও এইডস – এই তিন মহামারি আস্তানা গেড়ে বসেছে, যেখানে চিকিৎসা, ওষুধ বা খাবারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই৷ এছাড়া বিজ্ঞানও যেন তার শেষ সীমায় পৌঁছেছে৷ বার্লিনের সংক্রামক রোগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের পরিচালক শ্টেফান কাউফমান বলেন, ‘‘কিছু কিছু অসুখ প্রতিরোধে সহজেই টিকা তৈরি করা যায়৷ কিন্তু অন্য কিছু রোগের বেলায় টিকা প্রস্তুত করা সহজ নয়, যেমন এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া৷ এই সব রোগের জীবাণু অত্যন্ত কৌশলী ও জটিল৷ তাই এগুলির বিরুদ্ধে সাধারণ পদ্ধতিতে টিকা তৈরি করে কাজ হয়না৷''

প্রতিবছর যক্ষ্মা বা টিবিতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে৷ প্রবণতাটা বৃদ্ধির দিকে৷ যদিও সুলভ মূল্যের অ্যান্টি-বায়োটিকের মাধ্যমে এই সব রোগের নিরাময় সম্ভব৷ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এর চিকিৎসা বাবদ জনপ্রতি ১০ ডলারের মত খরচ পড়ে৷ কিন্তু ঠিক মত ওষুধ দেয়া না হলে কিংবা ভাল হওয়ার আগেই ওষুধ বন্ধ করে দিলে টিবির ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ে৷ আর এই ধরণের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করা খুবই কঠিন৷ আদৌ যদি চিকিৎসা সম্ভব হয় তার খরচও পড়ে অনেক বেশি৷

ম্যালেরিয়াকেও সুলভ মূল্যের ওষুধ দিয়ে জয় করা সম্ভব৷ কিন্তু তবু ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা খুব একটা হ্রাস করা সম্ভব হয়নি৷ প্রায় ১০ কোটির মত মশারি গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, যেগুলিতে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রতিরোধী ওষুধ লাগানো ছিল৷ কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি৷ অনেক মশাই এই ধরণের ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী মশারিকে তোয়াক্কা না করে নিজেরাই এক প্রতিরোধী শক্তি অর্জন করে ফেলে৷ উপরন্তু এইডস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ও তাতে মারা যাবার ঝুঁকিও অনেক বেশি৷

প্রশ্ন উঠতে পারে, ২০১৫ সাল নাগাদ টিবি, ম্যালেরিয়া এইডস – এই তিন মারণব্যাধিকে দমন করার জাতিসংঘের পরিকল্পনাটা কি খুব বেশি উচ্চাকাঙ্খী ছিল?

আন্তর্জাতিক এইডস ফাউন্ডেশন ‘আভার্ট'এর পরিচালক আনাবেল কানাবুস মনে করেন, এই খাতে বাকি অর্থটা পাওয়া গেলে এই অসুখ বিসুখ অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, এর চেয়ে অনেক কম খরচে এই সব ব্যাধিকে দমন করা সম্ভব৷ অনেক দেশই এখন বলছে, এ ক্ষেত্রে তারা আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে দেবে – যে অর্থ অসংখ্য মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে৷ আমাদের এখন যতটা সম্ভব কম খরচে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হবে৷ আমরা এখন এক অর্থনৈতিক সংকটের সময় পার করছি৷ আমাদের এখন বুদ্ধি করে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে৷''

বুদ্ধি করে খরচ করা বলতে বোঝায়, বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলিতে এই সব মহামারি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা৷ জনগণের স্বাস্থ্য ভাল থাকলেই কেবল তারা দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে পারে৷

প্রতিবেদন : রায়হানা বেগম

সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন