মন্দিরে হামলা, আগুন এবং মন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মন্দির এবং বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ৷ এরই মাঝে সরকারের এক মন্ত্রীর কথিত আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে উঠেছে সমালোচনার ঝড়৷ উঠেছে মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি৷
এ বছর সাম্প্রদায়িক নির্যাতন অনেক বেড়েছে
গত এপ্রিলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছিল, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসে প্রায় তিনগুণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ তখন তারা জানিয়েছিলেন, তিন মাসে ৮২৫০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ২৬১টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল৷
এবার যেখানে শুরু
গত ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে একটি পোস্ট দেয়ার প্রতিবাদের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু জনপদে দিনভর সহিংসতা চালায় দুর্বৃত্তরা৷ রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলা সদরে অন্তত ১০টি মন্দিরে হামলা ভাংচুর চালায়৷ এ সময় তারা শতাধিক বাড়ি ঘরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করে৷একইদিন হবিগঞ্জের মাধবপুরেও কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে৷
প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘‘পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে৷ পুলিশকে আগাম জানিয়েও কোনো নিরপত্তা পাওয়া যায়নি৷’’ মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘ পুলিশ প্রশাসন আগাম নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিলে এই হামলা হতো না৷’’
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য এবং প্রতিবাদ
বরং সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক ঘটনার তিনদিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়ে হিন্দুদের ‘মালাউনের বাচ্চা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে অতিরঞ্জিত করছে সাংবাদিকরা, অথচ ঘটনা কিছুই না৷’’ মন্ত্রী হয়ে একটি সম্প্রদায়কে নিয়ে তাঁর এমন অভব্য মন্তব্যের প্রতিবাদ শুরু হয় সারা দেশে, ওঠে তার অপসারণের দাবি৷
মন্দিরে আরো হামলা, ভাঙচুর
৩০ অক্টোবরের হামলার পর গতকাল (৩ নভেম্বর) আবার হামলা হয় নাসিরনগরে৷ এবারের হামলায় হিন্দুদের বেশ কিছু বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়৷ এছাড়া গত কয়েকদিনে গোপালগঞ্জ, রংপুর, বরিশাল, ঠাকুরগাঁওসহ আরো কয়েকটি জায়গায় হিন্দুদের মন্দিরে হামলা হয়েছে৷
প্রতিবাদের মুখে একাত্বতা প্রকাশ
দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা৷ অবরোধ চলার সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ৷ এ সময় তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন৷