ভেনিজুয়েলার ঢালধারী বিক্ষোভকারী!
প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছেই৷ গত এপ্রিল থেকে অন্তত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে৷ তারপরও থেমে নেই আন্দোলন৷ বরং একে নতুন রূপ দিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা৷ হাতে নিয়েছেন শৈল্পিক কারুকাজের ঢাল৷
আত্মরক্ষার অস্ত্র
মূলত পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেট, টিয়ার শেল আটকাতেই ঢাল ব্যবহারের চিন্তা আসে বিক্ষোভকারীদের মাথায়৷ ঢালধারীরাই সাধারণত থাকেন বিক্ষোভের সম্মুখভাগে৷ তবে সত্যিকার বুলেট আটকানোর ক্ষমতা নেই এই ঢালের৷ একবার পুলিশের জলকামান আটকাতে না পেরে একটি কিডনি খুইয়েছেন মানুয়েল মেলো নামের ২০ বছর বয়সি এক আন্দোলনকারী৷
ঘরে তৈরি শিল্পকর্ম
হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন জিনিসপত্র দিয়ে ঘরে বসেই ঢাল তৈরি করছেন বিক্ষোভকারীরা৷ এর মধ্যে আছে হার্ডবোর্ড, স্যাটেলাইট ডিশ, ড্রেনের ঢাকনা, ব্যারেলসহ কাঠ ও ধাতব টুকরাও৷ আছে ঢালগুলোকে শৈল্পিক উপায়ে উপস্থাপনের চেষ্টাও৷ ঢালগুলোতে নানা রকমের রং ও স্লোগান জুড়ে দিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজেদের প্রতিবাদের কথা৷
ঢাল! কেন!
মূলত ২০১৩-১৪ সালে ইউক্রেনে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলন থেকেই এই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ভেনিজুয়েলার আন্দোলনকারীরা৷ তখনও ভাইকিংদের মতো করে রংবেরংয়ের ঢাল তৈরি করেছিল ইউক্রেনিয়ানরা৷ এই ঢাল শুধু যে পুলিশের আক্রমণ থেকে তাদের রক্ষা করে, তা না৷ রোমান সৈন্যদের আদলে বিক্ষোভের সম্মুখভাগে প্রতিরোধের দেয়াল তৈরি এবং নর্সম্যানদের মতো করে যুদ্ধের শব্দ তৈরিতেও কাজে লাগে এই ঢাল৷
কী আছে এ সব ঢালে?
মূলত দুইভাগে ভাগ করা যায় ঢালগুলোর বক্তব্য৷ এক ভাগে আছে ভেনিজুয়েলার বর্তমান অবস্থার চিত্র৷ ‘সংবিধান শ্রদ্ধা করো, সংবিধান রক্ষা করো’, ‘আমাদের বাঁচাও’, এমন কিছু বক্তব্য আছে এই ঢালগুলোতে৷ অন্যভাগে রয়েছে মাদুরোর বিরুদ্ধে জনগণকে এক হওয়ার আহ্বান৷ ‘স্বৈরাচার মানি না’, ‘মাদুরো সরে দাঁড়াও’, এমন মন্তব্য আছে এইসব ঢালে৷
ঢালেই শেষ নয়
শুধু আত্মরক্ষাতেই শেষ হচ্ছে না ভেনিজুয়েলানদের আন্দোলন৷ ইটপাটকেল তো আছেই, ধীরে ধীরে আরো সহিংস রূপ নিচ্ছেন তাঁরা৷ কেউ কেউ ঢালের সাথে বড় আকারের লাঠি, কেউ আবার ছুরির মতো ধারালো অস্ত্রও রাখছেন সাথে৷
কেন এই আন্দোলন?
দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিরুদ্ধে স্বৈরাচারি মনোভাবের অভিযোগ করে আসছিল বিরোধী দল৷ তবে জানুয়ারিতে মাদুরোর বিরুদ্ধে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গণতন্ত্র, সংবিধান ও মানবাধিকার ধ্বংসের অভিযোগ আনে বিরোধী দল৷ বিরোধীদের বিরুদ্ধে মাদুরো কঠোর অবস্থান নিলে রাস্তায় নেমে আসে আন্দোলনকারীরা৷ তখনই চরম রূপ ধারণ করে বিক্ষোভ৷
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ভেনিজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট৷ আর এ জন্য প্রেসিডেন্ট মাদুরোকেই দায়ী করছেন আন্দোলনকারীরা৷ এক জরিপে দেখা গেছে, ব্যাথানাশক ও অ্যান্টবায়োটিকের মতো প্রাথমিক ওষুধও নেই দেশটির অধিকাংশ হাসপাতালে৷ খাবারের সংকট তো রয়েছেই৷ খাবার ও ওষুধের অভাবে বেশকিছু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে৷
কী বলছেন মাদুরো?
মাদুরো অবশ্য নিজের অবস্থানে অটল৷ এই আন্দোলনকে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি৷ এই আন্দোলনকে তাঁর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন তিনি৷ ফলশ্রুতিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন বড় নেতাকে৷ আন্দোলন যত তীব্র হচ্ছে, আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে তত কঠোর হওয়ার৷