1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়ি

মার্টিন রিবে/এসি২৫ এপ্রিল ২০১৬

২০১৫ সালের ভূমিকম্পে নেপালে বহু মানুষ হতাহত হন৷ তখনই জার্মানির ডেসাউ-এর এক স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রের মাথায় ধারণা আসে: স্রেফ ইট-কাঠ-সুড়কি দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের উপযোগী এক ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়ি বানানোর৷

https://p.dw.com/p/1Ibzf
earthquake emergency shelter
ছবি: Stephan Schütt

২০১৫ সালে নেপালে একাধিক ভূমিকম্প হয়, যাতে সব মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন ২০ হাজারের বেশি৷

ভূমিকম্পের মাত্র ক'দিন আগে ইয়ান ভারজাভা তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে নেপালে গিয়েছিলেন৷ সবাই আর্কিটেকচারের ছাত্র৷ সকলে মিলে সেখানে একটি স্কুলবাড়ি তৈরি করেছিলেন৷ জার্মানিতে ফিরে ইয়ান শুনলেন নেপালে ভূমিকম্পের কথা৷ শুনলেন, নতুন স্কুলবাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে বটে, কিন্তু অন্যান্য বহু ভেঙে পড়েছে৷

স্থাপত্যবিদ্যার এই ছাত্রের কথায়, ‘‘স্বভাবতই আমরা খুব দুঃখ পেয়েছিলাম৷ তার পরেই ভাবলাম, নেপালে আমাদের চেনা লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জিগ্যেস করতে হবে, তারা কেমন আছেন আর আমরা কোনোরকম সাহায্য করতে পারি কিনা৷ তখন আমার মাথায় এলো একটি সহজ ধরনের বাড়ি বানানোর কথা – যাতে পাহাড়ি অঞ্চলের অতি গরীব গ্রামগুলোতেও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে৷''

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইয়ান তাঁর ‘ভূমিকম্প প্রতিরোধী' বাড়ির নকশা করে ফেলেন – এমন এক বাড়ি, বাসিন্দারা যা সহজেই স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন৷ তার জন্য কংক্রিট, স্ক্রু-ড্রাইভার কিংবা বোরিং মেশিনের দরকার পড়বে না৷

ইয়ান ভারজাভা জানান, ‘‘আমি বিশেষভাবে দেখার চেষ্টা করেছি যে, বাড়ি তৈরিতে যে সব জিনিস ব্যবহার করা হবে, তা যেন সেখানেই পাওয়া যায়: কাঠ, পাথর, করোগেটেড টিন৷ এছাড়া যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে, সেগুলোও যেন সেখানে পাওয়া যায়: যেমন পেরেক, হাতুড়ি, করাত কি কোদাল৷''

সেই সঙ্গে আছে বাড়িটা কিভাবে তৈরি করতে হবে, তা নিয়ে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল৷ ইয়ান নিজেই এই টিউটোরিয়াল তৈরি করেছেন, যেখানে ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছে, কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হবে; কী কী জিনিসের খেয়াল রাখতে হবে, যাতে বাড়িটা সত্যিই ভূমিকম্প প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে৷ ইয়ান বলেন, ‘‘লোকজন ভিডিও দেখলে সহজে বুঝতে পারে, কেননা হাতে-নাতে করে দেখানো হয়েছে; লোকজন দেখছেন, প্রতিটি কাজ কিভাবে করা হচ্ছে ও কেন – লিখিত নির্দেশাবলীতে যা সম্ভব ছিল না, যদিও আমি ছবি সুদ্ধ একটা ৬০ পাতার ‘ইনস্ট্রাকশন' লিখেছিলাম৷''

ইয়ান আর তাঁর বন্ধুরা মাত্র নয় দিনের মধ্যে একটি ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন – তৈরি করার সময় ভিডিও তোলা হয়েছে৷ এই ভিডিও টিউটোরিয়াল বিভিন্ন ভাষায় ‘ডাব' করা হবে৷ বড় ধরনের ভূকম্পনেও বাড়িটা ধসে পড়বে না, কেননা তার একক অংশগুলো হালকা আর পরস্পরকে ধরে রাখছে৷

ইয়ান ভারজাভা জানান, ‘‘বাড়ির একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই ‘বেভেল' বা ঢালু করা কোণগুলো৷ এর ফলে ভূমিকম্পের শক্তি বাড়ির দেয়ালগুলো দিয়ে ঘুরে যায়৷ দেয়ালটা এদিকে ঠ্যালে, আর পরের দেয়ালটা সেই শক্তি শুষে নেয়৷ এভাবে ভূমিকম্পের শক্তি ভাগাভাগি হয়ে যায়৷ সাধারণ সমকোণ দেয়ালগুলোতে একটি দেয়াল তার অক্ষ থেকে সরে যায়৷ এছাড়া ছাদটা দেয়ালের ওপর থাকলেও, দেয়ালের সঙ্গে জোড়া নেই – বরং দু'টোর ভিতরে একটা ফাঁক রয়েছে৷ কাজেই দেয়ালের একাংশ ভেঙে পড়লেও, ছাদটা ভেঙে পড়ে কাউকে চাপা দেবে না৷''

দেয়ালের ইটগুলো একবার সোজা, একবার বাঁকা করে বসানো – যা শুধু একদিকে মুখ করে বসানো ইটের দেয়ালের চেয়ে অনেক বেশি স্থায়ী, নেপালে সাধারণত যা করা হয়৷

এরপর ইয়ান তাঁর ভিডিও টিউটোরিয়ালটি ইন্টারনেটে দেবেন৷ কাজেই অন্যরাও এই ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়ি বানাতে পারবেন৷ তবে আইডিয়াটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তরুণ স্থপতি ও আবিষ্কারকের সাংগঠনিক ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান