ভারত ও পাকিস্তানের ‘রাজনীতি’র দাম দিচ্ছেন কাশ্মীরিরা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত কোনোকালেই বন্ধ হয়নি; অপরদিকে কাশ্মীরে গত তিন দশক ধরে একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান চলেছে৷ ইসলামাবাদ এবং নতুন দিল্লির আচরণে বহু কাশ্মীরি বিরূপ৷
ব্যাপক সামরিক অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে৷ অভিযান চলেছে শোপিয়ান জেলার ২০টি গ্রামকে ঘিরে৷ নতুন দিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে৷
সৈন্যদের ‘হত্যা করে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতীয় সৈন্যদের হত্যার বদলা নেবার হুমকি দিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান ঐ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সৈন্য ও অধিনায়কদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক – এই দাবি করেছেন ভারতের বিদেশ সচিব সুব্রহ্মণিয়ম জয়শঙ্কর৷
সুদীর্ঘ সংঘাত
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে৷ এই এলাকায় যে এক কোটি বিশ লাখ মানুষের বাস, তাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়া যাবৎ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে নিয়ে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ উভয় দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীর তাদের বলে দাবি করে৷
হিংসার আগুন
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই মাস থেকেই সঙ্গীণ, যখন বুরহান ওয়ানি নামের এক তরুণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হন৷ তখন থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
উরি আক্রমণ
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণে অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আরো ৩০ জন আহত হন৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে ঢোকে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সদস্য৷
সামরিক সমাধান সম্ভব নয়
ভারতের সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে, নতুন দিল্লি কাশ্মীরে উত্তেজনার জন্য শুধু ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মোদী সরকারের কাছে কাশ্মীরে নিয়োজিত সেনা কমিয়ে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷
মানবাধিকার লঙ্ঘণ
কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে৷ একটি ভিডিওতে এক কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি জিপে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷
তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর নতুন দিল্লি সফরের আগে কাশ্মীর সংঘাতে একটি ‘বহুপাক্ষিক সমাধানের’ প্রস্তাব দেন৷ ভারত তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, কাশ্মীর সংক্রান্ত বিরোধ একমাত্র নতুন দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা সম্ভব৷
সেনামুক্ত কাশ্মীর
স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তারা চান যে, ভারত ও পাকিস্তান সরে দাঁড়াক ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিক৷ ‘ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অংশ থেকে সৈন্যাপসারণের সময়সূচি ঘোষণা করার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় এসেছে,’ পাকিস্তানি কাশ্মীরে এ কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্টের প্রধান তৌকির গিলানি৷
বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা কম
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার ভারতীয় নীতি অংশত সফল হলেও, একদিন-না-একদিন নতুন দিল্লিকে কাশ্মীর সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে বলে তারা মনে করেন৷