ভারতে ‘সুপারবাগ' নিয়ে আবার বিতর্ক
১৮ এপ্রিল ২০১১দিল্লির পানীয় জলের নমুনায় ব্রিটিশ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কলেরা ও আমাশয়ের ব্যাকটিরিয়ায় এনডিএম-১ নামে এমন এক জিন পেয়েছেন, যার ওপর কোন অ্যান্টি-বায়োটিক ওষুধ কাজ করেনা৷ এই খবর প্রকাশিত হবার পর সরকার ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়৷ তাতে বলা হয়, কলেরা ও আন্ত্রিক রোগের ব্যাকটিরিয়ায় বর্ধিত মাত্রায় ড্রাগ-প্রতিরোধক ক্ষমতার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ কাজেই এ নিয়ে অযথা ভয় পাবার কারণ নেই৷ জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা কলেরা ব্যাকটিরিয়ার মধ্যে অ্যান্টি-বায়োটিক প্রতিরোধক প্যাটার্ন পরীক্ষা করে দেখছেন৷ তাঁদের মতে, কোন ক্লিনিক্যাল বা বার্ড-ফ্লু-এর মত মহামারির বৈশিষ্ট্য ধরা পড়েনি – জনস্বাস্থ্যের ওপর যার ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, পরিমাণ অল্প হলেও বিশ্বের সর্বত্রই ওই ব্যাকটিরিয়ার অস্তিত্ব আছে৷ শুধু ভারতকে নিশানা করাটা ঠিক নয়৷
গত বছর গবেষণাকারীরা দিল্লির ১২ কিলোমিটার এলাকায় চোঁয়ানো জলের ১৭১টি নমুনা এবং সরবরাহ করা পানীয় জলের ৫০টি নমুনা পরীক্ষা করে যথাক্রমে ১৭টি ও ২টিতে ঐ ব্যাকটিরিয়ার জিন পান৷ ঐ জিন থেকে তৈরি এনডিএম-১ এনজাইম অ্যান্টি-বায়োটিক প্রতিরোধক৷
এই এনডিএম-১ বা সুপারবাগ কী এবং কীভাবে তা শরীরে ফুটে ওঠে ?
দিল্লির খ্যাতনামা চিকিৎসক অঞ্জন দে ডয়চে ভেলেকে বললেন, প্রত্যেক মানুষের শরীরে ইকোলাই বলে একটা ব্যাকটিরিয়া থাকে, যা মূত্রনালীতে সংক্রমণ ঘটায়, পেটের রোগের নানা রকম সংক্রমণ ঘটায়৷ তার মধ্যে এনডিএম-১এর মত জিন যদি ঢুকে পড়ে, তাহলে অ্যান্টি-বায়োটিক কাজ করেনা৷ এর প্রতিকার হলো জলটাকে জীবাণুমুক্ত করা, পরিশুদ্ধ রাখা৷ দিল্লির জলবোর্ড বলছে যে, সরবরাহ করা পানীয় জল যেহেতু ক্লোরিনেটেড করা, তাই তাতে সুপারবাগ থাকতে পারেনা৷ আছে কি নেই, তা পরীক্ষা করি আমরা পাযুরস থেকে৷ তবে ব্যাকটিরিয়া থাকলেই যে তাতে ওষুধ প্রতিরোধক জিনটা থাকবে, এমন কোন কথা নেই৷
ওষুধ প্রতিরোধক ব্যাকটিরিয়া পাওয়ার কথাটা কি তাহলে একেবারেই ভুল? ডাক্তার অঞ্জন দে জানালেন, পুরসভার জল ক্লোরিনেটেড৷ কিন্তু দিল্লি মহানগরীতে জলনিকাশি পাইপ বদলানোর সময় হয়ত তাতে দূষণ হয়ে থাকতে পারে৷ দ্বিতীয় কারণ হতে পারে জলের ওভারহেড ট্যাঙ্ক ঠিকমত পরিষ্কার না করা৷ তৃতীয় কারণ হতে পারে বর্ষাকালে ওয়াটার হার্ভেস্টিং করে ধরে রাখা বৃষ্টির জল দুষিত হতে পারে৷ এছাড়া পুরসভার সরবরাহ করা ক্লোরিনেটেড জলে কোনমতেই সুপারবাগ থাকতে পারেনা৷
সুপারবাগ ব্যাকটিরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ কী? গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিজ বা আন্ত্রিক রোগ হবে, পেট খারাপ হবে, বমি হবে, গা হাতপায়ে ব্যথা হবে, কলেরার উপসর্গ থাকলে জলের মত পায়খানা হবে৷ শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে, দেহে জলাভাব দেখা দেবে, রক্তচাপ কমে যাবে৷ অ্যান্টি-বায়োটিকে কাজ না হলে রোগী মারা যেতে পারে৷
সাধারণ ব্যাকটিরিয়ার মধ্যে ওষুধ-প্রতিরোধক জিনটা কীভাবে ঢোকে, সে সম্পর্কে ডাক্তার দে বললেন, ব্যাকটিরিয়ার সেল কাঠামোর মধ্যে সেটা লুকিয়ে থাকে এবং সেটাকে কাজে লাগিয়ে সেই সেল ঠিক করে কোন ওষুধে তারা সাড়া দেবেনা৷ ওদের বাইরের যে সেল আবরণ থাকে সেটা ভেদ করে একটা মিউটেন্ট জিন তৈরি হয়৷ এটাকেই বলা হয় ওষুধ-প্রতিরোধক জিন৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন