1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ভিড় করছে আফগান ছাত্র-ছাত্রীরা

৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১

আফগানিস্তানে প্রায় এক দশক ধরে চলছে যুদ্ধ৷ ভেঙে পড়েছে দেশটির অবকাঠামো৷ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা করুণ৷ কিন্তু আফগান ছাত্রছাত্রীরা হার মানতে নারাজ৷

https://p.dw.com/p/10Cg1
আফগান শিক্ষার্থীছবি: dpa

আফগানিস্তানের তরুণ প্রজন্ম উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে দেশ ছেড়ে৷ তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দেশ ভারত৷ প্রতি বছর কয়েক হাজার আফগান ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে তারা ভর্তি হয়েছে৷ প্রথম পছন্দে রয়েছে দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর এবং পুনে৷ ভারতের ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স' প্রায় সাতশো বৃত্তি দিয়েছে আফগান ছাত্রছাত্রীদের৷ কেন ভারতে ভিড় করছে আফগান ছাত্রছাত্রীরা ? মুহাভাল্লাহ নাজারি বললেন,‘‘প্রথমত, ভারতের পড়াশোনার মান যে বেশ ভাল, তা আফগানিস্তানের সবাই মোটামুটি জানে৷ ভারতের যে কোন ডিগ্রিও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে সেখানে দেখা হয়, গ্রহণ করা হয়৷ এছাড়া এখানে পড়াশোনা করতে তেমন খরচ হয় না৷ আফগানিস্তান থেকে ভারত খুব বেশি দূরেও নয় – সেটাও একটা কারণ৷ হিন্দি চলচ্চিত্রের কারণে হিন্দি ভাষা মোটামুটি আমরা সবাই জানি৷ উর্দু ভাষা প্রায় প্রতিটি আফগানই বেশ ভাল জানে৷ হিন্দি আর উর্দুর মধ্যে তেমন কোন বিশাল পার্থক্য নেই৷''

পছন্দের তালিকায় রয়েছে দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর এবং পুনে

মুহাভাল্লাহ নাজারিত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ আফগান ছাত্রছাত্রীরা ভারতের সঙ্গে পরিচিত৷ এর অন্যতম কারণ হল বলিউডের ছবি এবং বিভিন্ন ভারতীয় টেলিভিশন সিরিয়াল৷ আরেক আফগান ছাত্র মোহাম্মদ আরিফ জামশিদি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে৷ তিনি জানান, অনেক আফগান ছাত্রছাত্রী ভারতে পড়তে আগ্রহী, কারণ এখানে সবকিছু পড়ানো হয় ইংরেজিতে৷ জামসিদি জানান,‘‘আফগানিস্তানের এই প্রজন্ম ইংরেজি শিখছে এর মূল কারণ হল, অনেক বিদেশি সংস্থা এবং এনজিও আফগানিস্তানে কাজ করছে৷ তারা প্রতিনিয়ত সাহায্য নিচ্ছে আফগান ছাত্রছাত্রীদের যারা খুব ভাল ইংরেজি জানে৷ যে কোন কাজে, সমস্যায় এদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে আফগান ছাত্রছাত্রীরা৷ এই সংস্থাগুলো বেশ ভালই বেতন দিচ্ছে এ ধরণের কাজের জন্য৷ বিশেষ করে যারা কম্পিউটারের কাজ জানে, ইংরেজি জানে এবং যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি রয়েছে৷''

Afghanistan Kunst Ausstellung Künstlerinnen stellen in Kabul aus
ছবি: AP

তবে সবকিছুই যে ভাল তা কিন্তু নয়৷ ভারতীয় খাবার অত্যন্ত তেল-ঝাল-মসলার সংমিশ্রণে তৈরি৷ অভ্যস্ত না থাকায় অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে এধরণের খাবারে৷ কথাগুলো জানান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আরেক ছাত্র সাফা সরওয়ারি৷ তিনি বলেন,‘‘শুরুতে খুবই সমস্যা হয়েছে আমার এ ধরণের খাবার খেতে৷ তাই আমি শুরুতে শুধু কলা খেয়ে থাকতাম৷ যখনই ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাইরে কোথায় খেতে যাই, তখন সমস্যা হয় আমিষ আর নিরামিষ খাবার নিয়ে৷ অনেকেই শুধু নিরামিষ খাবার খায়৷ অনেকে মঙ্গলবার এবং বৃহস্পতিবার উপবাস করে৷ খাওয়া-দাওয়ায় অনেক সমস্যা৷ তারপরেও সবকিছু মেনে নিয়েছি পড়াশোনার খাতিরে৷''

আফগান মার্কেট, আফগান নগর

আফগানদের অন্যতম প্রধান খাবার হল নান-রুটি৷ আর এই নান-রুটি পাওয়া যায় লাজপত নগরের মার্কেটে৷ সেখান সাফা সপ্তাহে অন্তত একদিন যায়৷ স্থানীয় বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই মার্কেটের নাম দিয়েছে ‘আফগান মার্কেট'৷

সাফা সরওয়ারি আরো জানায়, লাজপত নগরকে অনেকেই ‘আফগান নগর' নামে ডাকছে৷ এর কারণ হল, যে সব আফগান চিকিৎসা, পড়াশোনা বা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ভারতে আসে, তারা একবার না একবার লাজপত নগরে আসবেই৷ সাফা জানান,‘‘আমি লাজপত নগরে যাই মূলত নান-রুটি কিনতে৷ কারণ এই নান-রুটি অন্য কোথাও পাওয়া যায় না৷ এর আগে মাত্র একটি রুটির দোকানে এই নান পাওয়া যেত৷ এখন তিনটি নান-রুটির দোকান হয়েছে৷ আর খুলেছে দুটি আফগান রেস্তোরাঁ৷''

পাকিস্তান নয় এখন ভিড় ভারতে

কয়েক বছর আগেও আফগান ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমাতো ইরান বা পাকিস্তানে৷ কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ইরানে যাওয়ার ভিসা সমস্যা ততই তীব্র হচ্ছে৷ আর পাকিস্তানও আগের মত এত জনপ্রিয় নেই৷ কথাগুলো জানান পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র আহমাদ রাশেদ আরিফি৷ আরিফির মতে,‘‘পাকিস্তানের পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয়৷ এছাড়া আফগান সরকার চায় না আফগান ছাত্রছাত্রীরা পাকিস্তানে যাক৷ কারণ ধরেই নেওয়া হয়েছে, সেখানে পড়াশোনা করে শিক্ষিত নয় বরং সন্ত্রাসী হয়ে ফিরে আসবে সবাই৷ এছাড়া পাকিস্তানি ডিগ্রির কোন মূল্য নেই৷ কেউই চাকরি পাবে না৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক