1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ব্রেন ডেড রোগীদের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে বিতর্ক

১৮ মার্চ ২০১১

সম্প্রতি ভারতে ‘মার্সি কিলিং’ নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়েছিল৷ প্রশ্ন উঠেছিল, ব্রেন ডেড রোগীদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে কিনা বা তাদের জন্য মৃত্যুই শ্রেয় কি না৷

https://p.dw.com/p/10bqu
প্রত্যক্ষ ইউথেনাসিয়ায় রোগীর মৃত্যু ঘটানো হয় মারণ ইঞ্জেকশান দিয়েছবি: Fotolia

অরুণা রামচন্দ্র শানবাগ গত ৩৭ বছর ধরে ব্রেনডেড অবস্থায় বেঁচে আছেন নতুন দিল্লির একটি হাসপাতালে৷ তাঁর বেঁচে থাকার অধিকার কতটুকু? তিনি পেশায় একজন নার্স ছিলেন৷ ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর গলায় কুকুর বাঁধার শেকল পেঁচিয়ে ধর্ষণ করে হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড বয়, শোহনলাল ভার্তা বাল্মীকি৷ শারীরিক এবং মানসিক প্রচণ্ড এই চাপ এবং পীড়ন সহ্য করতে না পেরে পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে যান অরুণা৷ ফলে তিনি কোমায় চলে যান৷ ব্রেনডেড রোগীতে পরিণত হন অরুণা৷ তখন থেকেই তিনি মুম্বই-এর কেইএম হাসপাতালে কাজ করতেন৷ সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলতে থাকে৷

অরুণার এভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে হয়? মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়া হোক – এই আর্জি করেন অরুণার বান্ধবী এবং আইনজীবী পিঙ্কি ভিরাণী৷ অরুণার ভেন্টিলেটর বন্ধ করার কথা বলেন তিনি৷ এর বিরোধিতা করেন অরুণার চিকিৎসকরা৷ তাঁরা জানান, অরুণা কথা বলতে না পারলেও তিনি চোখের ইশারায় কথা বলতেন, মুখের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন৷ আদালত পর্যন্ত পুরো বিষয়টি গড়ায়৷ বম্বে হাই কোর্ট রায় দেয়, অরুণা বেঁচে থাকবে, তাঁর ভেন্টিলেটর বন্ধ করা যাবে না৷

অরুণার চিকিৎসক ড. সঞ্জয় ওক আনন্দে অভিভূত হন আদালতের রায় শুনে৷ তিনি জানান, আমি আদালতের কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবো৷ আমরা অরুণার সেবা চালিয়ে যাবো৷ ইউথেনাসিয়া রোগীদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে কিনা, তা হয়তো এখন স্পষ্ট হবে৷

ব্রেনডেড অর্থাৎ ইউথেনাসিয়ার দুটি ভাগ রয়েছে৷ এ্যাকটিভ বা প্রত্যক্ষ ইউথেনাসিয়া এবং প্যাসিভ বা পরোক্ষ ইউথেনাসিয়া৷ প্রত্যক্ষ ইউথেনাসিয়ায় রোগীর মৃত্যু ঘটানো হয় মারণ ইঞ্জেকশান দিয়ে৷ পরোক্ষ ইউথেনাসিয়ায় রোগীর খাবার, জল, বিভিন্ন পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে মৃত্যু ঘটানো হয়৷

একজন ব্রেনডেড রোগী কি নিজের মৃত্যুর আর্জি জানাতে পারে? রোগী যে বেঁচে আছে তা কি রোগী বুঝতে পারে ? নতুন দিল্লীর নিওরোলজিস্ট ডা. পুনিত আগারওয়াল জানান, ‘‘আমি এটুকু বলতে পারি যে, যে সব রোগী ব্রেনডেড অবস্থায় রয়েছে, যারা ভেন্টিলেটরের সাহায্যে বেঁচে আছে – সেই অবস্থায় ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করার নিয়ম ভারতে নেই৷ আইনগত দিক থেকে এখনো এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা হয়না৷ সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে হবে, আদালতের রায় – মানবাধিকারকে, বেঁচে থাকার অধিকারকেই সমর্থন করেছে৷''

তবে একথা ঠিক, এভাবে একজন রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার খরচ অনেক বেশি৷ যে সব রোগী বছরের পর বছর ধরে ব্রেনডেড অবস্থায় রয়েছে – তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা এক শতাংশেরও কম৷ এভাবে বাঁচিয়ে রাখার ফলে হাসপাতালের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে পরিবারের ওপরও আর্থিক চাপ থেকে যাচ্ছে৷ তাই যেখানে রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই – সেক্ষেত্রে রোগীর জন্য মৃত্যুই শ্রেয় বলে অনেকে মনে করে৷ পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে এই প্রথা প্রচলিত, কিন্তু ভারতে এই প্রচলন এখনো শুরু হয়নি৷ তবে কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনরা চান অক্সিজেন সরবরাহ বা ভেন্টিলেটর পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে৷ আইনগত দিক থেকে বাধা থাকার কারণে ভারতে তা এখনো সম্ভব হচ্ছে না৷ চিকিৎসকরাও কোন অবস্থাতেই ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হন না৷

তার মানে কি এই যে, অরুণার মত যারা বছরের পর বছর ব্রেনডেড অবস্থায় হাসপাতালে সময় কাটাচ্ছে – তারা আর কোনদিন হেসে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, উঠে বসবেন না, নিজে চলাফেরা করতে পারবেন না? ডা. পুনিত আগারওয়াল জানালেন, ‘‘যে সব রোগী মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ব্রেনডেড অবস্থায় রয়েছে, যারা কোন অবস্থাতেই হাত-পা নাড়াতে পারছে না, কথা বলতে পারছে না, যাদের বেঁচে থাকার একমাত্র চিহ্ন হচ্ছে ভেন্টিলেটর – তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই৷ আমি বলতে চাইছি, যে তাদের নিজে উঠে বসা বা চলাফেরার ক্ষমতা ফিরে আসবে , তার কোন সম্ভাবনা নেই৷ যদি থাকে, তাহলে তা এক শতাংশেরও কম৷ এখন পর্যন্ত এধরণের ঘটনা ঘটেনি, যে একজন রোগী পাঁচ বছর ব্রেনডেড থাকার পর সুস্থ হয়ে, নিজ পায়ে হেঁটে বাড়ি গেছে৷ আমরা তাই বলছি, এসব রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন