আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে
৩ জুলাই ২০১৩জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর, অর্থাৎ ২০১২ সালে ভারতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১,৩৫৪৪৫টি৷ অর্থাৎ প্রতি দিন গড়ে ৩৭৫টি, প্রতি ঘণ্টায় ১৬টি৷ আর দৈনিক ৩৭৫টি আত্মহত্যার মধ্যে পুরুষ ২৪৩ এবং নারী ১২৯৷ প্রশ্ন হলো: পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কেন?
দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেহতার মতে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা আবেগের দিক থেকে দুর্বলচিত্ত, যেটা প্রচলিত ধারণার বিপরীত৷ বিবাহিত পুরুষের আত্মহত্যার হার ৭১ শতাংশ এবং বিবাহিতা নারীর ৬৭.৯ শতাংশ৷
মনোবিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার অন্যসব কারণগুলি হলো প্রেমঘটিত ব্যর্থতা, সাংসারিক বিবাদ বা দাম্পত্য কলহ, পরীক্ষায় ফেল, অবসাদ, নিঃসঙ্গতা, মাদকাসক্তি ও আর্থিক সমস্যা৷
রাজ্যগুলির হিসেবে আত্মহত্যার ঘটনা সবথেকে বেশি তামিলনাড়ুতে ১৬৯২৭৷ তারপর মহারাষ্ট্র ১৬১১২ এবং পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে ১৪৩২৮টি করে৷ ভারতের ২৮টি রাজ্যে ১৩২৬৬৭টি এবং সাতটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্যে ২৭৭৮টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে গত বছর, বলছে এনসিআরবি-এর পরিসংখ্যান৷ রাজধানী দিল্লিতে ১৯০০ জন এবং লাক্ষাদ্বীপে আত্মহত্যা করেছে সবথেকে কম, মাত্র একজন গত বছরে৷
সাংসারিক ঝগড়াঝাটি এবং পারিবারিক সমস্যা আত্মহত্যার সবথেকে বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেক সমাজবিজ্ঞানী৷ এ কারণে দৈনিক গড়ে আত্মহত্যা করে থাকে ৮৫ জন৷ পুরুষরা আত্মহত্যা বেশি করে মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে৷ এনসিআরবি-এর মতে ব্যক্তিগত আবেগের তাড়না মেয়েদের বেশি ঠেলে দেয় আত্মহত্যার দিকে৷ প্রতি ছয়টি আত্মহত্যার মধ্যে একজন গৃহবধু৷
চরম পথ বেছে নেবার সবথেকে সহজ উপায় গলায় দড়ি৷ গত বছরে দেশে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ৫০০৬২ জন, অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ৷ এদের বেশির ভাগ পুরুষ ৩৪,৬৩১ জন৷ গলায় দড়ি দেবার ঘটনা বেশি ঘটে মহারাষ্ট্রে, তারপর কেরালা এবং তামিলনাড়ুতে৷ বিষ খেয়ে মারা যায় ১৯৪৪৫ জন অর্থাৎ ২৯.১ শতাংশ৷ এদের মধ্যে ১২২৮৬ জন পুরুষ৷ গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ১১৪৫৯ এদের বেশির ভাগ মহিলা৷
ডা. মেহেতার মতে, আত্মহত্যার প্রবণতার প্রাথমিক লক্ষণ হলো হাবভাবে, আচার-আচরণে পরিবর্তন, নিজেকে গুটিয়ে নেয়া, হতাশা, টাকা-পয়সা, জিনিস-পত্র অকারণে বিলিয়ে দেয়া কিংবা মানসিক অবসাদ বা রোগের অতীত ইতিহাস থাকা৷ সময়মত কাউন্সিলিং করা এর হাত থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায়৷