ভারতের নগরাঞ্চলে কবরের স্থান সঙ্কট
১৫ জুন ২০১০ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু৷ কবরের স্থান নিয়ে সমস্যা তাদের নেই৷ কেননা মৃত্যুর পর তাদের দাহ করা হয়৷ তবে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের আচার ভিন্ন৷ তাদের দেওয়া হয় কবর৷
প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে৷ ফলে আগের যে কবরস্থানগুলো ছিলো, তাতে আর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না৷ আর তাতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি৷ তেমনই সমস্যায় পড়েছিলেন রাজধানী নয়াদিল্লীর উপকণ্ঠের নয়ডা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরিফ৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে আমার ভাগ্নে দুর্ঘটনায় মারা যায়৷ তখন তাকে কবর দেওয়ার মতো জায়গা পেতে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়েছিলো৷'' এ সমস্যায় যেন ফের পড়তে না হয়, সে জন্য আরিফরা সব ভাই মিলে কবরের জন্য একটি জায়গা কিনে রেখেছেন৷
সর্বভারতীয় ইমাম সমিতির চেয়ারম্যান উমর আহমেদ ইলিয়াসি বলেন, কবরস্থানগুলোতে যান, দেখবেন কোথাও জায়গা খালি নেই৷ এ সমস্যা আগে দিল্লি, মুম্বই ও কলকাতায় ছিলো৷ এখন অন্য শহরগুলোতেও৷ ইলিয়াসির অভিযোগ, এই সমস্যা সমাধানে সরকারের মনোযোগ নেই৷
মুসলমানদের জন্য সরকারের দেওয়া ওয়াকফ সম্পত্তিতে এক সময় গড়ে উঠেছিলো বেশ কিছু কবরস্থান৷ তবে সে সম্পত্তির অধিকাংশই এখন অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ মুসলিমদের৷ লোকসভার ওয়াকফ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য রেহমান খান বললেন, ‘‘সরকারি ভবন, স্কুল, হোটেল- কী নেই ওয়াকফ সম্পত্তিতে? অনেক জায়গায় বস্তিও গড়ে উঠেছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে নতুন জমি চাই না, বরং আগের জমিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ যাতে আমরা কিছু কবরস্থান তৈরি করতে পারি৷''
সাধারণত একটি কবরে একজনকে সমাহিত করা হলেও স্থান সঙ্কটের কারণে এতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়৷ তারা এক কবরে একাধিক জনকে এখন সমাহিত করছে৷ তেমনই একজন প্রিয়াংকা টমাস৷ দিল্লীতে বসবাসরত এই নারী কিছুদিন আগে স্বামী হারিয়েছেন৷ প্রিয়াংকার শ্বশুরকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছিলো, সে কবরেই সমাহিত করা হয় তার স্বামীকে৷ প্রিয়াংকা বলেন, আমাকে এবং পরে হয়তো আমার সন্তানদেরও এই কবরেই মাটি দেওয়া হবে৷
সরকারের কাছে কবরের জন্য জমি না পাওয়ার অভিযোগের কথা জানালেন বিহারের ক্যাথিলক চার্চের যাজক ভিনসেন্ট ফ্রান্সিসও৷ পাটনার চার্চ কবরের জন্য জমি কিনতে ইতোমধ্যে সবাইকে ৬০ হাজার টাকা দান করতে বলেছে৷
কবরস্থান সমস্যার দিকে মনোযোগ দিতে নগর পরিকল্পনাবিদরাও সরকারকে বলছেন৷ দিল্লীর অধ্যাপক শোভা দয়াল বলেন, এখন নতুন নতুন স্যাটেলাইট শহর গড়ে উঠছে৷ সেখানে স্কুল থেকে শুরু করে সুইমিং পুল-গলফ কোর্ট পর্যন্ত থাকে৷ কিন্তু কোনো কবরস্থান থাকে না৷
সংখ্যালঘুদের কবরস্থানের এই সঙ্কট যে নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে, তেমন আশঙ্কার কথা জানালেন নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা৷ তবে তিনি মনে করছেন, এই সমস্যার সমাধান স্থানীয় পর্যায়েই সম্ভব৷ আর তাই করতে পরামর্শ দিলেন তিনি৷ যার মানে দাঁড়ায়, কেন্দ্রীয় সরকার এতে গা লাগাতে চাইছে না৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন