ভারতের চা বিক্রেতাদের কথা
রেশম গেলাটলি এবং জ্যাক মার্কস-এর প্রকল্পের নাম ‘ভারতের চায়েওয়ালা’৷ এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ভারত চষে বেড়াচ্ছেন তাঁরা৷ তাঁদের মতে, ‘চায়ে’ বা চা ভারতের সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ এই নিয়ে ছবিঘর৷
রাস্তায় ‘চায়ে’
ভারতের প্রায় প্রতিটি রাস্তার কিনারে ‘চায়ে’ বা চা বিক্রেতাদের দেখা মেলে৷ প্রত্যেক বিক্রেতার আবার রয়েছে নিজস্ব ‘রেসিপির’ চা৷ ছবিতে মুম্বই হাইকোর্টের কাছের চা বিক্রেতা বংশী তাঁর খদ্দেরের হাতে চা তুলে দিচ্ছেন৷ অনেক আইনজীবী, এমনকি বিচারকও বংশীর চায়ের বিশেষ ভক্ত৷
‘টি(ম) গেম’
এই ছবিটি রাজস্থানের ক্লক টাওয়ার মার্কেটের সামনে অবস্থিত শ্রী রাম টি স্টলের৷ মহিন্দ্র তাঁর খদ্দেরদের মাঝে চা বিতরণ করছেন৷ তিনিসহ তিনজনের একটি দল দোকানটি চালাচ্ছেন৷ রাজা চা তৈরি করেন, হরেশ কাগজের কাপে করে মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে চা পৌঁছে দেন এবং মহিন্দ্র গ্লাস কাপে খদ্দেরদের চা দেন৷ চার কাপ চা এক হাতে ধরে নিয়ে যেতে বিশেষ পারদর্শী মহিন্দ্র৷
নারীর একক চেষ্টা
কলকাতার একটি আধুনিক শপিং কমপ্লেক্সের সামনে চা বানান মীনাক্ষী৷ পুরো চায়ের দোকান প্রায়শই একা সামলান তিনি৷ তাঁর স্বামী বাড়িতে তাদের চার বছরের ছেলেকে দেখাশোনা করেন৷
তারকাদের জন্য চা
বলিউড ছবি তৈরির সেটে ‘স্পট বয়দের’ দেখা মেলে, যাদের কাজ হচ্ছে ক্যামেরার ভারি যন্ত্রপাতি সরানো এবং চা তৈরি৷ বলিউডের বড় তারকাদের চা পান করিয়ে মুম্বইয়ে বেশ নাম করেছেন ছট্টু৷ প্রিয় তারকা সম্পর্কে জানতে চাইলে কূটনৈতিক সুরে ছট্টুর জবাব, ‘‘আমি নির্দিষ্ট একজনকে প্রিয় বলতে পারিনা, কারণ আমি সবার সঙ্গেই কাজ করি৷’’
কখনোই বুড়ো নয়
৭৩ বছরের জীবনের অধিকাংশ সময় কলকাতার বড় বাজারে পশু পালন করেছেন শিবনাথ রাই যাদব৷ কিন্তু দশ বছর আগে তাঁকে বলা হয় পশুর খামার শহরের বাইরে সরিয়ে নিতে৷ তখন চা বিক্রির নতুন পেশা শুরু করেন তিনি৷ তিনি চা তৈরিতে কোন পানি ব্যবহার করেন না৷ শুধু দুধ দিয়ে চা বানান৷ আর এটাই শিবনাথের বৈশিষ্ট্য৷
দৈনিক আয় বারো ইউরো
গঙ্গা নদীর তীরে একটি পিঁড়িতে বসে চা, বিস্কিট এবং সিগারেট বিক্রি করেন সুনীতা দেবী৷ তাঁর চায়ের খদ্দের মূলত নদীর এ পাড় থেকে ও পাড় মানুষ পারাপারের কাঠের নৌকার মাঝিরা৷ সুনীতা দিনে গড়ে দু’শো কাপ চা বিক্রি করেন৷ ইউরোর হিসেবে তাঁর দৈনিক আয় বারো ইউরোর মতো৷
পুজার সময় সারা রাত খোলা
শোভন বরওয়ার চায়ের দোকানের অবস্থান কলকাতার আলীপুরে৷ সাধারণ রাত দশটা পর্যন্ত দোকান খেলা রাখেন তিনি৷ কিন্তু দুর্গা পুজার সময় ভোর পাঁচটা অবধি চা বেঁচেন তিনি৷ পুজা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা রাত জেগে বিভিন্ন প্যান্ডেল ঘুরতে চান৷ তাই তাদের সজাগ রাখতে সারারাত চা বেচেন শোভন৷
যাত্রীদের সহায়তা
গনেশের চায়ের দোকানের অবস্থান বিহারের পাটনা ট্রেন স্টেশনে৷ এই ছবি যখন তোলা হয়, তখন রাতের শেষ পট চা চুলায় চড়িয়েছেন তিনি৷ গনেশের দোকানের পাশেই রয়েছে আরেকটি চায়ের দোকান৷ তবে দুই দোকানি একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না৷ বরং দু’টি দোকান হওয়ায় ব্যস্ত সময়ে যাত্রীদের কাছে দ্রুত চা পৌঁছানো যায়, এতেই সন্তুষ্ট গনেশ৷
‘চায়ে ওয়ালা’ প্রকল্প
মার্কিন সাংবাদিক রেশম গেলাটলি (বামে) এবং জ্যাক মার্কস (ডানে) ২০১০-২০১১ সালে ভারতে বসবাসের সময় প্রথম চাওয়ালাদের সঙ্গে পরিচিত হন৷ পরবর্তীতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের চাওয়ালাদের কথা জানতে এবং তাদের কথা গোটা বিশ্বকে জানাতে আগ্রহী হন তারা৷ আর সেই আগ্রহ থেকেই চলছে তাদের প্রকল্প ‘ভারতের চায়ে ওয়ালা’৷