ভারতীয়রা কিনে নিচ্ছেন জার্মান কোম্পানি
২০ অক্টোবর ২০১০ভারত-জার্মানির সুসম্পর্কের সূচনা ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভ এবং ১৯৪৯ সালে ‘বুন্ডেসরিপাবলিক ডয়েচলান্ড' হিসেবে জার্মানির আত্মপ্রকাশের পর৷
এই ষাট বছরে ভারতের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য সম্পর্কও বেশ ভালো৷ আর এই ভালোকে আরও ভালো করার চেষ্টাই চলছে এখন৷ প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর জার্মানির সঙ্গে উঠতি অর্থনৈতিক শক্তি ভারতের সম্পর্ককে আরও জোরালো করতে এ মাসের প্রথম দিকে জার্মানিতে সফর করলেন যে ভারতীয় বাণিজ্য প্রতিনিধি দল, তাঁরা কিন্তু বলেই দিয়েছেন, এবার আরও শক্তিশালী হবে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক৷
এবারের ব্যবসায়িক সহযোগিতার অন্যতম খাত তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ, টেকসই জ্বালানি, ন্যানো টেকনোলজি৷ বলা হচ্ছে, ভারতই হচ্ছে জার্মানির নতুন শক্তিশালী ব্যবসায় সহযোগী৷ যখনই উপমহাদেশের কোন দেশ চায় তার প্রযুক্তি উন্নত করতে, তখন তাদের দৃষ্টি থাকে জার্মানির দিকেই, এটাই ধ্রুবসত্য৷ আর ভারত তো উপমহাদেশেরই একটি দেশ!
জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের দু'টি বড় শহরের দিকে একটু তাকালেই দেখা যাবে, কোলন কিংবা ডুসেলডর্ফ শহরে - বছরের কোন না কোন সময়ে ভারতীয় পণ্যের প্রদর্শনী হচ্ছে৷ এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে অন্তত একশ ভারতীয় কোম্পানি এখন জার্মানিতে ব্যবসা পরিচালনা করছে৷ অবশ্য, এই সব কোম্পানির মালিকানার একটি অংশ রয়েছে জার্মানদের কাছেও৷
জার্মানিতে সফরকালে এমনটাই বললেন ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতা তপন চক্রবর্তী৷ তিনি বলছেন, ‘‘জার্মানির প্রযুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে খুবই সহায়তা করতে পারে৷ আসলে প্রচুর ভারতীয় কোম্পানি এখন জার্মানিতে বিনিয়োগ করছে৷ টাটা কিংবা এই ধরণের বড় কোম্পানি তাদের বিনিয়োগের জন্য নতুন ক্ষেত্র হিসাবে কিন্তু জার্মানিকেই চিন্তা করছে৷''
ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জার্মানিতে বিনিয়োগ এক বা দুই বছর ধরে নয়৷ গত প্রায় ১৫ বছর ধরে এই কোম্পানিগুলো ব্যবসা পরিচালনা করছে ইউরোপের এই শক্তিশালী অর্থনীতির দেশটিতে৷ কিন্তু কেন ভারতীয় ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরা জার্মানিকেই বেছে নিচ্ছেন?
জবাবে তপন চক্রবর্তী, ‘‘আমরা যখন জার্মানিতে আসি, তখন আমরা প্রযুক্তি বিদ্যার বিষয়টির প্রতিই জোর দিই৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কেবল এই বিষয়টি ব্যবসায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, জার্মানরা আমাদের জ্ঞান বাড়াতেও সহায়তা করে৷ ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর৷ তাদের মেধা, এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধিতে এটি একটি বড় সুযোগ জার্মানির সঙ্গে গাঁটছড়া হয়ে কাজ করা৷ এটা হতে পারে মাঠ পর্যায়ে, হতে পারে কৃষি প্রযুক্তিতে, হতে পারে সবুজ জ্বালানি খাতে৷ উন্নয়নের জন্য ভারতের প্রয়োজন এ সকল খাতের উন্নয়ন৷''
জার্মানির প্রযুক্তিখাতের উন্নয়নের জন্য মূল শক্তি হিসাবে বলা হয়ে থাকে পেশা উপযোগী প্রশিক্ষণকে৷ আর ভারতও চাইছে এই অভিজ্ঞতাই তাদের দেশে কাজে লাগাতে৷ এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ভারতের কর্মীদের মাত্র ২৫ ভাগ স্ব স্ব পেশায় প্রশিক্ষিত৷
ইন্দো-জার্মান চেম্বার অফ কর্মাসের প্রতিনিধি ড্রিক মাটার বলছেন, বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করে উভয় দেশ উভয়ের কাছ থেকে সুবিধা নিতে পারে, পারে উপকৃত হতে৷ তিনি এ ক্ষেত্রে টাটার ক্ষুদ্র গাড়ি সংস্করণ ন্যানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, সম্পর্ক ভালো বলে সেই গাড়ি উৎপাদনে অন্তত ৩৫টি জার্মান কোম্পানি ছিল টাটার কারিগরি সহযোগী৷ তিনি ২০০৯ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার উদাহরণ টেনে বললেন, ‘‘সেই সময় আর্থিক সংকটের রোষানলে পড়ে অনেক জার্মান কোম্পানি বসে যেতে বসেছিল৷ ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা কিন্তু বেশ বিচক্ষণ৷ কারণ, তারা সে সময় এ ধরণের সমস্যা কবলিত জার্মান কোম্পানি কিনে নিয়েছে৷ আর এই ক্রয়ের পর তারা কারও চাকরি ছাঁটাই করেনি, পথে বসায়নি কাউকে৷ বলা যায়, মেধাবী কর্মীদের নিয়েই তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে৷''
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক