1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাইরাস হল বিশ্বের প্রাচীনতম অর্গানিজমের অন্যতম

৫ অক্টোবর ২০১০

এগুলো এত ক্ষুদ্র যে, শুধু মাত্র ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমেই দেখা যায় তাদের৷ তাই ভাইরাসের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেক আগেই আঁচ করা গেলেও সবে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে তারা৷

https://p.dw.com/p/PVWe
এসব ভাইরাস খালি চোখে দেখা যায় নাছবি: AP

ভাইরাসরা খোলা জায়গায় বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনা৷ এ জন্য তাদের কোনো আস্তানার প্রয়োজন৷ মানুষ, পশু পাখি বা গাছগাছালিকে সংক্রমণ করে বাড়তে থাকে তারা৷ এইডস, বসন্ত, পোলিওর মত নানা রকম ব্যাধির সৃষ্টি হয় ভাইরাস থেকে৷ প্রাচীন কালে যে রোগটিকে খুব ভয়ের চোখে দেখা হত, তা হল জলাতঙ্ক৷ প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর থেকে মানুষের দেহে সংক্রামিত হয় এই রোগ ভাইরাসের মাধ্যমে৷ প্রাচীন গ্রিসে জলাতঙ্কের চিকিৎসা পদ্ধতিটা ছিল অত্যন্ত নির্মম৷ কুকুরে কামড়ানো জায়গাটা গরম লোহার শিক দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হত৷ বহু রোগীকে আবার জলের নীচেও ডুবিয়ে রাখা হত অনেকক্ষণ৷ জলাতঙ্কের মত ভাইরাসজনিত নানা রোগের সুচিকিৎসার জন্য বিজ্ঞানীরা অনবরত গবেষণা করে চলেছেন৷

অন্যদিকে ভাইরাসরা মার্টিনা ফ্রিসলান্ডের নিত্যসঙ্গী বলা যায়৷ হানোফার শহরের ‘টুইনকোর' নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ‘পরীক্ষামূলক ভাইরাস বিজ্ঞান' বিভাগে কাজ করছেন মার্টিনা৷ বিশেষ করে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস নিয়েই কাজকর্ম তাঁর৷ এই ভাইরাস থেকে লিভার সিরোসিসের মত মারাত্মক অসুখ হয়৷ তবে মার্টিনা ফ্রিসলান্ড খুব একটা ভয় পাননা এই সব ভাইরাসকে৷ তিনি বলেন, ‘‘একদম প্রথম দিকে আমার এক অদ্ভুত অনুভূতি হত৷ যা নিয়ে আমি কাজ করছি, তারা তো ভাইরাস৷ কিন্তু সচেতনভাবে কাজ করলে এবং সাবধানতা মেনে চললে বিপদের সম্ভাবনা নেই৷ এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷''

Maus Virus Überträger Hausmaus
পশুপাখি থেকেও আসছে বিভিন্ন ভাইরাসছবি: picture-alliance / dpa

ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব

ভাইরাসজনিত মহামারি বিশ্বের বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনাকেও প্রভাবিত করেছে৷ ফ্রান্সে নেপোলিয়নের রাজত্বের সময় আবার ক্রীতদাস প্রথা চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ এই লক্ষ্যে ২৫ হাজারের বেশি সেনা পাঠানো হয়েছিল হাইতিতে৷ কিন্তু সেনারা ইয়েলো ফিভার নামে এক ধরনের ভাইরাসবাহী রোগে আক্রান্ত হয়ে দলে দলে মারা যেতে থাকে৷ এই অসুখ হলে রোগীর বমি হতে থাকে, লিভার কাজ করেনা, গায়ের রঙ হলদে হয়ে যায়৷ অবশেষে ফরাসি সরকার হাইতি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়৷

মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে নিচ্ছিদ্র সতর্কতা ব্যবস্থাও নেওয়া প্রয়োজন৷ ভাইরাস নিয়ে গবেষণাগারে কাজ করতে হলে তো কথাই নেই৷ মার্টিনা ফ্রিসলান্ড জানান, ‘‘আমাদের অপারেশন থিয়েটারের মত এক ধরনের অ্যাপ্রন পরে কাজ করতে হয়৷ বিশেষ ধরনের জুতা রয়েছে আমাদের৷ হাতে দুটো করে গ্লাভস পরতে হয়৷ এর কারণ, কোনো কিছু ধরে পরে যদি মনে হয় ওখানে ভাইরাস থাকতে পারে, তা হলে ওপরের গ্লাভসটি খুলে ফেললেই হল৷''

Symbolbild Ukraine Schwinegrippe Virus
এভাবেই কী আমাদের চলাফেরা করতে হবে?ছবি: AP/ DW-Fotomontage

ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টিকাও বের করা হয়েছে৷ কিন্তু এইডস বা হেপাটাইটিস ভাইরাস এতই বৈচিত্র্যময় যে তাদের আয়ত্তে আনা খুব কঠিন৷ এ প্রসঙ্গে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ টমাস পিচমান বলেন, ‘‘এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, প্রাণীদের মত ভাইরাসদের জগতেও রয়েছে বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ভাণ্ডার৷ আমরা মানুষরা যেমন স্তন্যপায়ী অন্যান্য জীবজন্তু যেমন কুকুর, বেড়াল বা ইঁদুর থেকে আলাদা, তেমনি ভাইরাসদের মধ্যেও রয়েছে নানা ধরনের বংশ ও পরিবার৷ এই সব ভাইরাস বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একেক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে, সংক্রমণের জন্য বেছে নেয় একেক ধরনের প্রাণী, হাল চালও তাদের ভিন্নতর৷''

গবেষণা চলছে, চলবে

প্রফেসর পিচমান ‘টুইনকোর' গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ‘পরীক্ষামূলক ভাইরাস বিজ্ঞান' বিভাগের প্রধান৷ হানোফারের মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও ব্রাউনশোয়াইগের ইনফেকশন রিসার্চ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ‘টুইনকোর' গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের নাড়িনক্ষত্র জানার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এখন৷ এই ভাইরাসগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীল, ল্যাবরেটরির কালচার ডিশে সহজেই বংশ বৃদ্ধি হয় তাদের৷ এই প্রসঙ্গে প্রফেসর টমাস পিচমান জানান, ‘‘এই সব ভাইরাসের একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল, প্রয়োজন হলে তারা বদলে যেতে পারে৷ অনেকটা এইচ আই ভি ভাইরাসের মত তারা৷ বার বার নতুন রূপ ধারণ করে সুকৌশলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে হেপাটাইটিটিস সি ভাইরাস৷''

Zellulär basiertes Screening
গবেষণা চলছে, চলবেছবি: BRAIN AG, Zwingenberg

এ ক্ষেত্রে একটা বড় প্রশ্ন থেকেই যায়৷ আর তা হল, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শতকরা ২০ জন মানুষের বড় রকমের কোনো সমস্যা হয়না৷ কিন্তু শতকরা ৮০ জন ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী অসুখের কবলে পড়ে, যা থেকে অনেক সময় লিভার সিরোসিস বা ক্যানসারের মত রোগও দেখা দেয়৷ টমাস পিচমান মনে করেন, মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধী শক্তির ওপরই নির্ভর করে অসুখের ধরনধারণ৷ আশা করা হচ্ছে, একদিন হয়তো হেপাটাইটিস সি ভাইরাসকে কাবু করার জন্য কার্যকর কোনো ওষুধ বের করা যাবে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন