ব্রাজিলের সমসাময়িক সাহিত্য
২ নভেম্বর ২০১৩পল্লবিত বৃক্ষ, সীমাহীন প্ল্যানটেশন এবং অনাবৃষ্টি – এ সবই এক সময় ব্রাজিলের সাহিত্যে প্রাধান্য পেত৷ আজকে সেখানে যানবাহনের ক্যায়োস, মেগাসিটির জটিলতা, যৌনতা, নারী পুরুষের সমস্যা ইত্যাদি মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে৷
বিশ্বায়ন ও নগরায়ণের প্রাবল্য গত ৫০ বছরে ব্রাজিলবাসীদের জীবন যেন ওলটপালট করে দিয়েছে৷ এখন জনসাধারণের একটা ছোট অংশই শুধু পল্লী জীবনের সঙ্গে পরিচিত৷ কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্মেও এর প্রতিফলন ঘটছে৷ বিশাল বিশাল শহর, মানুষের মনস্তত্ত্বের জটিলতা এসবই উঠে আসছে তাঁদের উপন্যাসের দৃশ্যপটে৷
পল্লীগ্রামের ছবি এখন প্রাধান্য পায় না
অনেক বছর ধরে ব্রাজিল বলতে পল্লীগ্রামের ছবিই ভেসে উঠত৷ শিল্প ও সাহিত্যেও প্রকাশ পেত এই ধরনের চিত্র৷ কিন্তু আজকের লেখকরা অনেকটা শহুরে হয়ে উঠেছেন৷ ব্রাজিলের মতো সারা বিশ্বই যেন তাঁদের স্বদেশ৷ ২০১২ সালে ব্রিটেনের সাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন গ্রান্টার-এর পক্ষ থেকে কয়েকজন ‘শ্রেষ্ঠ ব্রাজিলিয়ান সাহিত্যিকের' নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷
এঁদের মধ্যে আছেন চিলিতে জন্ম নেওয়া কারোলা সাভেড্রা ও নতুন আগত ডানিয়েল গালেরা৷ এই দু'জনই তরুণ প্রজন্মের লেখক৷ ফ্রাংকফুর্টের বইমেলায় ৭০ জন অন্যান্য লেখকের সঙ্গে ব্রাজিলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাঁরা৷
এ বছরের ফ্রাংকফুর্ট বইমেলার অন্যতম কিউরেটর ও সাহিত্য সমালোচক মানুয়েল কস্টা পিন্টো ব্রাজিলের সাহিত্যের পটভূমি লক্ষ্য করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এখনকার লেখকরা সাধারণত বড় শহরের মানুষদের ব্যক্তিগত ঘটনা তুলে ধরেন৷ বর্ণনা করেন নিজস্ব সমস্যা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা৷''
রিও ডি জেনিরো-র ফেডারেল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বেয়াট্রিক্স রেসেন্ডেও মনে করেন, আজকের সাহিত্যে ব্রাজিলের সনাতন বিষয়গুলি যেমন রাজনীতি, দুর্নীতি, ও সহিংসতা মাঝে মাঝে অবশ্য উঠে আসে৷ তবে সাধারণত শহুরে জীবনের পটভূমিতেই আবর্তিত হয় এসব৷ সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ের চেয়ে লেখকের নিজের অন্তরের কথাই প্রাধান্য পায় এতে৷''
নিজের জীবনের কথা
যেমনটি দেখা যায় ক্রিস্টোভাও টেজা-র ‘দ্য ইটারনাল সন' উপন্যাসে৷ অনেকটা নিজের জীবনের কথাই তুলে ধরেছেন লেখক৷ ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেওয়া এক সন্তানের বাবা এই তিনি৷ লেখার মাধ্যমে নিজের অদৃষ্টের সঙ্গে বোঝাপড়া করেছেন লেখক৷
আবেগপ্রবণ ও আত্মমুগ্ধতা – ব্রাজিলের আজকের লেখকরা কী তবে অরাজনৈতিক? ব্রাজিলের সামরিক শাসকের আমল, মুক্তির জন্য সংগ্রাম, মানুষের অধিকার – এ সব বিষয় অধিকাংশ নতুন প্রজন্মের লেখক তাঁদের মা-বাবা, নানা দাদার কাছ থেকে শুনেছেন৷ তাঁদের লেখাকে অরাজনৈতিক বলা যায় না৷ দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা যেমন বিতাড়ণ, বৈষম্য ইত্যাদিও কম রাজনৈতিক নয়৷ এমনটিই মনে করেন সাহিত্য সমালোচক বেয়াট্রিস রেসেন্ডে৷ এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত উপন্যাস ‘সিটি অফ গড'-এর উল্লেখ করেন তিনি৷ ২০০২ সালে লেখক পাউলো লিনসের এই উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হয়৷ ২০০৪ চারটি বিভাগে অস্কারের জন্য মনোনীত হয় এটি৷ এই সফল ছবিটিতে রিও-র দারিদ্র্য পীড়িত এক অঞ্চলের হিংস্রতা ও সহিংসতা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷ উপন্যাসের লেখকও এসেছেন এই এলাকা থেকে৷
বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র
‘‘শহুরে বিষয়গুলির মাধ্যমে ব্রাজিলের লেখকরা বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তুলতে পারেন৷ কেননা নগরগুলিই বিশ্বব্যাপী সমস্যার একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে'', বলেন কিউরেটর কস্টা কস্টা পিন্টো৷ ব্রাজিলের রিও গ্রান্ডে ডো সুল রাজ্যের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর লুইস আনটোনিও ডে আসিস আর একটু স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘ব্রাজিলের সমসাময়িক সাহিত্যে এমন এক চিত্র উঠে আসে যে তা, বিশ্বের যে কোনো দেশের লেখকেরই হতে পারে৷''