ভারত থেকে বিদ্যুৎ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩সকাল ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গ্রিড উপকেন্দ্রে ভারতের বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়৷ এটা চলে বিকেল পর্যন্ত৷ এই সময় বিদ্যুৎ প্রবাহের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করা হয়৷ ভেড়ামারা গ্রিড উপকেন্দ্রের প্রকৌশলী আলমগির হোসেন জানান, শনিবারও একইভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হতে পারে৷
আগামী ৫ই অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেড়ামারা উপকেন্দ্র থেকে নতুন দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন৷ আলমগির হোসেন জানান, এর মাধ্যমে মূলত দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলিতে বিদ্যুৎ গ্রিড চালুর প্রক্রিয়া শুরু হলো৷
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে মোট ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে৷ এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট দেবে ভারতের সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার প্রতি ইউনিটের দাম ৫ টাকা৷ আর বেসরকারি খাতে ভারতের পাওয়ার ট্রেডিং কোম্পানি থেকে পাওয়া যাবে ২৫০ মেগাওয়াট, যার প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ৬.৩৪ টাকা৷ সরকারি বেসরকারি খাত মিলিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে গড়ে ৬ টাকার কম৷
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনার এই চুক্তি সই হয়৷ বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি করা হয় ২৫ বছরের জন্য৷
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির এই সময়ে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ইতিবাচক৷ দেশে ৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে মোট উত্পাদন ৬,০০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি৷ তাই ভারতের ৫০০ মেগাওয়াট কিছুটা হলেও বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে৷ এছাড়া, বাংলাদেশ নিজের দেশের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পাচ্ছে ভারত থেকে – এটা অবশ্যই সুখবর৷
অধ্যাপক আলম বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি সার্ক গ্রিডেরই অংশ৷ ঠিক ছিল, সার্কভুক্ত দেশগুলো যে বিদ্যুৎ উত্পাদন করবে সেখান থেকে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারবে৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো, একমাত্র ভারত ছাড়া আর কোনো দেশের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উত্পাদনের ক্ষমতা এবং পরিকল্পনা নেই৷ ভারতই আসলে এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে৷ ভবিষ্যতে যখন ভারত থেকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ আনতে হবে, তখন আর এত কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না৷ ফলে অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা শেষ পর্যন্ত ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতিও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি৷ তাই বাংলাদেশকে এখনই একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট করা থাকবে চাহিদার কতভাগ বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে আর কতভাগ দেশে উত্পাদন করা হবে৷ এছাড়া, দেশীয় উত্পাদনের কতভাগ সরকারি এবং কতভাগ বেসরকারি খাতে উত্পাদন হবে, সেটাও নির্দিষ্ট করতে হবে৷ শামসুল আলম বলেন, এই নীতিমালা আইনের মাধ্যমে অবশ্যপালনীয় করতে হবে৷
তিনি জানান, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ এরই মধ্যে ব্যয়বহুল বেসকারি খাতের দখলে চলে গেছে৷ ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ২৫ ভাগ বিদ্যুৎ উত্পাদনের নীতিমালা তৈরি হয়৷ সরকারি খাতে ৭৫ ভাগ৷ কিন্তু এখন বেসরকারি খাতে ৫৫ ভাগ এবং সরকারি খাতে ৪৫ ভাগ বিদ্যুৎ উত্পাদন হচ্ছে৷ ফলে সরকারি খাত দুর্বল হওয়ায় বেরসকারি খাতের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ৷ যা এক অশনিসংকেত বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম৷ তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যেন বিদ্যুতের জন্য অন্য দেশের কাছে জিম্মি না হয়ে পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷