বেলজিয়ামে বোরখা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা
৩০ এপ্রিল ২০১০বেলজিয়াম সংসদের নিম্নকক্ষ বোরখার উপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে৷ এই প্রস্তাবের আওতায় নারীরা বোরখা পরতে পারবেন না, কিংবা মুখমণ্ডলের অংশ বিশেষ ঢেকে রাখতে নেকাবও ব্যবহার করতে পারবেন না৷
কার্যত এই প্রস্তাবের মাধ্যমে নারীদের বোরখা বা নেকাব পড়াকে অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যার শাস্তি ১৫ থেকে ২৫ ইউরো জরিমানা, এমনকি সাত দিনের কারাভোগ৷
তবে, বোরখা নিষিদ্ধের এই প্রস্তাব এখনই কার্যকর হচ্ছে না৷ কারণ এটিকে আইনে পরিণত করতে সংসদের উচ্চকক্ষের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রয়োজন এবং সেটা হতে হবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নকক্ষে যে প্রস্তাবের সপক্ষে ১৩৬ জন সাংসদের ভোট পড়েছে, উচ্চকক্ষে তা আটকানোর কোন কারণ নেই৷ কিন্তু বিপত্তি অন্য ক্ষেত্রে, কারণ বেলজিয়ামে ওলন্দাজ এবং ফরাসী ভাষাভাষীদের নিয়ে চলছে চরম রাজনৈতিক সংকট৷ আর এই সংকটের ফলে যদি সংসদ ভেঙ্গে যায়, তাহলে বোরখা নিষেধের এই প্রস্তাব চূড়ান্ত রূপ পেতে অনেক বেশি সময় লাগবে৷
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ সংস্থাটির কর্মকর্তা জন ডালহয়জেন এই প্রসঙ্গে বলেন, মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার উপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বোরখা বা নেকাব ব্যবহারকারী নারীদের ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত করা হচ্ছে৷
বেলজিয়ামে বসবাসরত মুসলমানদের সংখ্যা কিন্তু নেহাৎ কম নয়৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশই মুসলমান৷ এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বোরখা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷ দেশটির মুসলমানদের একটি সংগঠনের নারী নেত্রী ইসাবেল প্রেইল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে৷
তিনি বলেন, বোরখা পরা সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়৷ বেলজিয়ান, ইউরোপীয় কিংবা আন্তর্জাতিক অধিকার আইন এটিকে অনুমোদন করে৷
বেলজিয়ামের একজন ক্যাথলিক বিশপও বোরখা নিষিদ্ধ করার নিন্দা করেছেন৷ তাঁর প্রশ্ন, মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রতীককে নিয়ন্ত্রণের অধিকার কি সরকারের আদৌ আছে?
উল্লেখ্য, বেলজিয়াম হচ্ছে ইউরোপের প্রথম দেশ, যারা বোরখার উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব অনুমোদন করলো৷ ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশেও বোরখা নিষেধের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা চলছে৷
প্রতিবেদক: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী