‘বেবিব্লুজ’ বা নতুন মায়েদের বিষণ্ণতায় যা করবেন
শিশুর জন্মের পর যে কোনো মায়ের অনুভূতিই হয় আনন্দের৷ তবে কয়েকদিন যেতে না যেতেই অনেকসময় সে আনন্দ বিষণ্ণতায় পরিণত হয়৷ কেন এমন হয় এবং তখন কী করা উচিত, জেনে নিন এই ছবিঘর থেকে৷
মা হওয়ার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর
পুতুল নিয়ে খেলার বয়স থেকেই মেয়েরা মা হওয়ার স্বপ্ন দেখে৷ আর তারা যখন গর্ভবতী হয়, তখন সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়নের প্রস্তুতি চলে৷ সে জন্যই হয়ত সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরার আবেগ-অনুভূতির কথা কাউকে বোঝানো যায় না৷ এটা যে একান্তই শুধু মায়ের অনুভূতি...৷
বাড়িতে নতুন অতিথি
বাড়িতে নতুন শিশুর জন্ম হওয়া মানেই বাড়িতে বা পুরো পরিবারের মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তন আসা৷ এ সময় পরিবারের নতুন সদস্যকে নিয়ে চলে হৈচৈ আর আনন্দ৷ আর এই আনন্দ যখন স্বাভাবিক নিয়ম হতে থাকে তখন নতুন মায়ের মধ্যে আসে অন্যরকম কিছু পরিবর্তন৷
বেবিব্লুজ
শিশুর জন্মের ক’দিন না যেতেই মা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, শিশুর লালন-পালনের সাথে জড়িয়ে আছে হাজরো কাজ৷ তখন ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে মায়ের আনন্দ৷ পরিবর্তে নতুন মায়ের মনের মধ্যে দেখা দেয় নানা দ্বন্দ্ব৷ মন খারাপ হয়, এমনকি এটাও মনে হতে থাকে যে সন্তানের জন্ম হয়ত শুধুই আনন্দের নয়৷ বরং এটা কাজের চাপ অসম্ভব বাড়িয়ে দেয়৷ এর থেকেই শুরু হয় বিষণ্ণতা, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘বেবিব্লুজ’৷
পরিবর্তন
সন্তান জন্মের আগে এবং পরে মায়ের শরীর এবং মনে অনেক পরিবর্তেন হয়, বিশেষ করে হরমোনের নানা পরিবর্তন ঘটে৷ এর ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, শরীর ঝিমিয়ে পড়ে৷ তার ওপর নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে মা হয়ে পড়েন ক্লান্ত৷ সংসার ও সন্তানের দেখাশোনা করতে গিয়ে হাপিয়ে ওঠেন তিনি৷ তখন সদ্য মা হওয়া অনেক নারীই মনে করেন যে, তিনি ‘মা’ হওয়ার যোগ্য নন৷
যাদের হয়?
জার্মানির হেল্থ কেয়ার উন্নয়ন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, শিশুর জন্মের পর শতকরা ১৫ ভাগ নতুন মায়ের মধ্যেই ‘বেবিব্লুজ’-এর লক্ষ্যণ দেখা যায়৷ তবে এই ১৫ শতাংশের মধ্যে অর্ধেক মায়ের লক্ষ্যণ তেমন জটিল নয়৷ বেবিব্লুজ-এর কারণগুলোর মধ্যে থাকে মায়ের শরীরে হরমোনের তারতম্য, সামাজিক পরিবর্তন, পরিবার থেকে সহযোগিতার অভাব অথবা আগে ছোট কোনো শিশুর সংস্পর্শে না আসা বা অভিজ্ঞতা না থাকা৷
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
মা হওয়া যে কোনো নারীর জীবনেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷ আর এই অধ্যায়ের শুরুতেই যদি বিষণ্ণতা দেখা দেয়, তাহলে বিষয়টিকে অবশ্যই যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ ‘বেবিব্লুজ’ বা নতুন মায়ের বিষণ্ণতা রোগটি আগেও হতো, তবে তখন তা নিয়ে কথা বলা বা আলোচনা হতো না৷ তবে বর্তমান সময়ের শিক্ষিত মায়েরাই কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী৷
প্রয়োজন সহযোগিতা
বড় শহর বা পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এ সমস্যা দিনদিন বাড়ছে৷ তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এ সময়ে সদ্য মায়ের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাঁর নিজের মা বা শ্বাশুরিকে৷ এর সঙ্গে প্রয়োজন স্বামীর সহযোগিতাও৷ তবে প্রথম কিছুদিন নিয়মিতভাবে একজন অভিজ্ঞ ধাত্রীর সাহায্য পেলেও অনেক উপকার হয়৷ জার্মানিতে অবশ্য সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু ও মায়েরা বেশ কয়েক বছর থেকেই এ সাহায্য পাচ্ছেন৷
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শিশুর জন্মের কয়েক সপ্তাহ পরও ‘বেবিব্লুজ’ বা বিষণ্ণতা যদি না কমে, তাহলে অবশ্যই স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ কিংবা কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা প্রয়োজন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কারণ তা না হলে মায়ের বিষণ্ণতার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শিশু ওপর, যা শিশুর মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে৷