বিশ্বে পানীয় জল কমে আসছে
প্রতিবছরের মতো এ বছরও স্টকহোমে ২৮শে আগস্ট থেকে দোসরা সেপ্টেম্বর অবধি বিশ্ব পানি সপ্তাহ উপলক্ষ্যে পানি বিশেষজ্ঞদের বৈঠক বসেছে৷ মানুষের বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন, বিশ্বের সব জায়গায় যেটা মেলে না৷
পানি অনেক, তবে পান করার মতো নয়
পানি বা জলের অন্য নাম জীবন৷ জল ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না৷ ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ ভাগ পানিতে ঢাকা হলেও, সেই পানির মাত্র আড়াই শতাংশ পানের উপযোগী৷ আবার বিশ্বের মিষ্টজলের ভাণ্ডারের মাত্র ৩০০ ভাগের এক ভাগ পাওয়া যায় নদী-পুকুর-খালে-বিলে৷ বাকিটা অত সহজে পাবার উপায় নেই৷
আরো বেশি মানুষের আরো বেশি পানির চাহিদা
১৯৫০ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী পানির প্রয়োজন বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ৷ বিশ্বের জনসংখ্যা যত বাড়বে, পানির চাহিদা ততই বেড়ে যাবে৷ মিষ্টজলের মাত্রাধিক ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দূষণ, যার ফলে বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে৷
অ্যামাজনের মতো নদী থাকা সত্ত্বেও পানি নেই
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মিষ্টজল বয়ে নিয়ে যায় অ্যামাজন নদী৷ সেই নদী চলে গিয়েছে ব্রাজিলের মধ্য দিয়ে৷ তা সত্ত্বেও ব্রাজিলে জলাভাব৷ অ্যামাজন এলাকার বৃষ্টিপ্রধান অরণ্য কেটে ফেলার ফলে দক্ষিণ অ্যামেরিকার আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে; দেশের বাদবাকি অঞ্চলে বৃষ্টি কম হচ্ছে৷
চরম খরা
২০১৫ সালে অনাবৃষ্টির ফলে ব্রাজিলে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক খরা দেখা দেয়৷ সারা গ্রীষ্ম ধরে এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়েনি৷ বড় বড় বাঁধে কোনো জল ছিল না৷ সাও পাওলোর মানুষদের জন্য পানির সরবরাহ মাঝেমধ্যে বেশ কয়েক দিনের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে৷ ওদিকে বড় বড় খামার ও ফলের বাগানে যথারীতি জল সরবরাহ করা হচ্ছে৷
যে ফসল ফলাতে প্রচুর পানি লাগে
ইউরোপেও সে সমস্যা আছে, বিশেষ করে স্পেনে, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টার জমি জুড়ে ফল ও শাকসবজির চাষ করা হয়৷ এ কাজে প্রায়ই বেআইনিভাবে পানীয় জলের কুয়ো থেকে পানি তোলা হয়, যার ফলে কুয়োগুলি শুকিয়ে যায় অথবা লবণাক্ত হয়ে পড়ে৷ ভূগর্ভস্থ পানি পরিশোধনে প্রচুর টাকা লাগে, যা সরকারি ভরতুকি ছাড়া সম্ভব নয়৷
এক কিলোগ্রাম মাংসের জন্য ১৫,৪০০ লিটার পানি
মাংসের জন্য পশুপালনে বিপুল পরিমাণ পানি খরচ হয়৷ শেষমেশ এক কিলো মাংস পেতে মোট পানি খরচ হয় ১৫ হাজার ৪০০ লিটার, অঙ্ক করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা৷ বিশেষ করে ক্যাটল ফডার অর্থাৎ গরুর খাবারের চাষ করতে প্রচুর পানি লাগে৷ ওদিকে চীনের মতো দেশে সমৃদ্ধি যত হচ্ছে, ততই আমিষ খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে৷
অর্ধেক চীন জুড়ে খাল
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে ইতিমধ্যেই পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ উত্তর চীনের কিছু কিছু প্রদেশে নাকি বাসিন্দারা মাথা পিছু যে পরিমাণ পানীয় জল পেয়ে থাকেন, তা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি এলাকার চেয়েও কম৷ এ কারণে চীন দক্ষিণ থেকে উত্তরে মিষ্টজল নিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক বড় বড় খাল কাটাচ্ছে সরকার৷ ওদিকে চীনে ভূগর্ভস্থ পানির ৮০ শতাংশই নাকি দূষিত৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানি-সংকট আরো বাড়বে
আরো চল্লিশ শতাংশ বেশি মানুষের জলকষ্ট দেখা দেবে, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷ বিশেষ করে দক্ষিণ চীন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে জলাভাব দেখা দেবে৷